শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
যেমন আছেন আলোচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন

যেমন আছেন আলোচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন

weeআমার সুরমা ডটকম: বাড়িটির নাম ‘গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্ট কনকর্ড’। কিন্তু মানুষের কাছে এটি পরিচিত প্রেসিডেন্ট হাউস হিসেবে। রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের ধূসর রঙের এই বাড়িতে থাকেন একসময়ের আলোচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। নব্বই-ঊর্ধ্ব বয়সী এই সাবেক প্রধান বিচারপতির শরীর তেমন ভালো নেই এখন। বয়সজনিত নানা রোগে ভুগছেন তিনি। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে কষ্ট হয় তার। সাধারণত তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বাসায় আসেন চিকিৎসক। বাসায় তার সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করার জন্য রয়েছেন দুজন সেবিকা। সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই সাবেক রাষ্ট্রপতির পারিবারিক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীনের খোঁজ-খবর জানতে সম্প্রতি তার গুলশানের বাড়িতে গিয়েছিলেন এই প্রতিবেদক। দুপুর ১২টায় বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। আবাসন কোম্পানি কনকর্ডের সঙ্গে অংশীদারে বানানো ছয়তলা বাড়িটিতে দর্শনার্থীদের প্রবেশে রয়েছে বেশ কড়াকড়ি। নিজের পরিচয় দিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক পেরিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষে গিয়ে জানা গেল, অনেক দিন থেকেই সাহাবুদ্দীন মিডিয়ায় কথা বলেন না। তার শরীরও ভালো নেই। কথা বলতে কষ্ট হয় তার। বেশির ভাগ সময় ইশারা-ইঙ্গিতে কথা বলেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে অভ্যর্থনা কক্ষের একজন কর্মী বলেন, ‘স্যার প্রয়োজন ছাড়া নিচে নামেন না। আমরাই স্যারকে দেখি না অনেক দিন। গত তিন বছরে দুই দিন তাকে  নিচে দেখেছি আমরা।’

বাড়িটির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ছোট ছেলে সোহেল আহমেদকে নিয়ে থাকেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। একই তলার অন্য একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তার বড় মেয়ের জামাই ও নাতনি। তিন মেয়ে আর দুই ছেলের মধ্যে বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সিতারা পারভীন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। মেজো মেয়ে স্থপতি সামিনা পারভীন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। আর ছোট মেয়ে চারুশিল্পী সামিয়া পারভীন থাকেন দুবাই। বড় ছেল পরিবেশ প্রকৌশলী শিবলী আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী।

বছর দুই আগে সাবেক এই প্রধান বিচারপতির স্ত্রী আনোয়ারা বেগম মারা যান। এরপর ছোট ছেলে, পুত্রবধূ ও এক নাতি আছেন তার সঙ্গে। তার পরিচর্যার জন্য পরিবারের খরচে দুজন সেবিকা নিয়োজিত আছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজনে সিএমএইচের চিকিৎসকরা বাসায় আসেন। বিদেশে অবস্থানরত সন্তানরা টেলিফোনে নিয়মিত বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন বলে জানান রাষ্ট্রপতির পারিবারিক সূত্র। বাসার ম্যানেজার মতলেব আহমেদ এই প্রতিবেদককে জানান, ‘আজকেও (গত বৃহস্পতিবার) বড় মেয়ে আমেরিকা থেকে ফোন করেছেন। স্যারের শরীরের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। বয়স হয়েছে স্যারের। প্রায়ই শরীর খারাপ হয়। আমাদের মধ্যেও এ নিয়ে উদ্বেগ আছে।’

তবে বাসায় নিয়মিত পত্রিকা পড়েন দেশের ‍দুবারের এই রাষ্ট্রপতি। শরীর ভালো থাকলে বাসায় পায়চারিও করেন। আর বই পড়ে সময় পার করেন তিনি। মূলত পত্রিকা পড়া তিনি বেশি পছন্দ করেন জানিয়ে মতলেব আহমেদ বলেন, বেশির ভাগ সময়ই তিনি ঘরে থাকেন। শারীরিক দুর্বলতার কারণে কোনো সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না, এমনকি কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে যান না তিনি। রাষ্ট্রপতির একজন স্বজন জানান, রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে আসার পর থেকেই তিনি কোনো ধরনের অনুষ্ঠানে যান না। নিভৃতে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। নিজেকে নিয়ে আলোচনা হোক সেটি চান না তিনি।

যেভাবে রাষ্ট্রপতি হলেন সাহাবুদ্দীন: রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক এরশাদ পদত্যাগ করলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা তিন রাজনৈতিক জোট সর্বসম্মতভাবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মনোনীত করে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে। তার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করার পর তার শর্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে তাকে প্রধান বিচারপতি পদে ফিরিয়ে নেয়া হয়। এ জন্য সংসদে সর্বসম্মতভাবে সংবিধানের একাদশ সংশোধনী করা হয়।

বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে সাহাবুদ্দীন আহমদকে আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে। রাজনীতিক না হয়েও বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক ইতিহাসের এক অন্যতম আলোচিত নাম সাহাবুদ্দীন আহমদ।

সাহাবুদ্দীনের বেড়ে ‍ওঠা: ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে জন্ম নেন সাহাবুদ্দীন আহমদের। তার বাবা তালুকদার রিসাত আহমেদ একজন সমাজসেবী ও এলাকায় জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন সাহাবুদ্দীন। ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রথমে লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমি এবং পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।

সাহাবুদ্দীন আহমদের কর্মজীবনের সূচনা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। পরবর্তী সময়ে তিনি সহকারী জেলা প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭২ সনের ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টের বেঞ্চে তাকে বিচারক হিসেবে উন্নীত করা হয়। ১৯৭৩-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান সাহাবুদ্দীন আহমদ। বাংলাদেশের সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী সম্পর্কিত মামলায় তার দেয়া রায় যুগান্তকারী এবং বাংলাদেশের সংবিধানের পরিশোধনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। -ঢাকাটাইমস

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: