শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
স্কুল মাঠে দোকান ঘর, ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসি

স্কুল মাঠে দোকান ঘর, ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসি

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: বিদ্যালয়ের মাঠ সংকোচ করে দোকার ঘর নির্মাণের কারণে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যসহ এলাকার লোকজন ক্ষোভে ফুঁসছেন। তাছাড়া ছাত্রছাত্রীদের বিনোদনের পাশাপাশি খোলা জায়গা না থাকায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে এলাকাবাসি একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি তাদের ক্ষোভ আরো বেড়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ধল গ্রামের ধল বাজার সংলগ্ন ধল পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও ধল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশাপাশি অবস্থিত। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে খেলার মাঠ। গত কয়েক মাস আগ থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ দিকের সড়ক লাগোয়া বিদ্যালয়ের ভেতরে নতুন করে মার্কেটের কাজ শুরু করেন। বিষয় স্থানীয় মানুষ ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দৃষ্টিগোছর হলে কয়েকজন সদস্য এখানে মার্কেট করতে নিষেধ করেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে নিষেধের প্রতি কর্ণপাত না করলে বিদ্যালয়ের ছাত্র অভিভাবক ধল আমিরপুর গ্রামের আহমদ মিয়ার ছেলে রুহুল আমিন ও ধল চান্দপুর গ্রামের মৃত তকদ্দুছ আলীর ছেলে হুমায়ুন কবির যৌথভাবে গত বছরের ১৯ জুন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি দরখাস্ত দেন। এছাড়া ধল চান্দপুর গ্রামের মৃত তকদ্দুছ আলীর ছেলে হুমায়ুন কবির পৃথকভাবে গত বছরের ২৩ আগস্ট আরেকটি দরখাস্ত দেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে। দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়, একই বাউন্ডারির ভেতরে সরকারি প্রাথমিক ও ধল পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় হওয়াতে প্রায় হাজার খানেক ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার পরিবেশ ও খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন বিধায় বিদ্যালয়ের বাউন্ডারির ভেতরে দোকান ঘর নির্মাণ হওয়াতে সেই মাঠে স্থান সংকুচ হয়ে যাচ্ছে। তাতে আরো উল্লেখ করা হয়, এক বছর যাবত ধল পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের বাউন্ডারির ভেতরে অবৈধ কয়েকটি দোকান তৈরি করে স্থানীয় কিছু লোকদের ভাড়া প্রদান করে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করেন। উল্লেখিত প্রতিপক্ষগণ উক্ত টাকা স্কুলের ফান্ডে জমা না দিয়ে তারা আত্মসাৎ করছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও স্কুল মাঠে নতুন করে দোকান ঘর তৈরি করায় মাঠ সংকুচ হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলার সমস্যার পাশাপাশি দোকানে আসা ক্রেতাদের দ্বারা শিক্ষার্থী বিশেষ করে ছাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ারসহ ইভটিজিংয়ের আশঙ্কা করছেন তারা।
এদিকে উভয় দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের (শিক্ষা ও কল্যাণ) শাখার সহকারি কমিশনার তুলা দেব স্বাক্ষরিত ‘তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণ’ করতে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। যার স্মারক নং-০৫.৪৬.৯০০০.০১৯.০২.০২০.১৬-৭০৯। এই পত্রের আলোকে দিরাই উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এ.ডি.এম রুহুল আমীন গত বছরের ৭ নভেম্বর দিরাই উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি)-এর কাছে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণ করেন, যার স্মারক নং-৯৭৮। তদন্তে আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি না পেলেও বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার ঘটনাটির প্রমাণ পাওয়া যায়।
ধল পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ কবির মিয়া এ প্রতিবেদককে জানান, কমিটির সভাপতি ও সহকারি শিক্ষক মিলে নিয়মের বাইরে তারা বিদ্যালয়ের এরিয়ার ভেতরে দোকান ঘর তৈরি করেছেন। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছি।
ধল পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি মোঃ বজলু মিয়া জানান, আমি নতুন নির্বাচিত হয়েছি বলে এর আগের কাজ সম্পর্কে কিছু বলতে পারবো না। এটি মূলত আগের সভাপতির সময়ের করা সিদ্ধান্ত। তবে আমি শুনেছি যে মার্কেট চালু হওয়ার আগেই বিদ্যালয়ের বাউন্ডারির ভেতরে না করার জন্য অভিযোগ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগকারী মোঃ রুহুল আমীন জানান, আমাদের দায়ের করা অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পরও স্থানীয় প্রশাসন কোন অদৃশ্য কারণে মার্কেট বন্ধ করতে পারছেন না। বিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা ও সৌন্দর্যহানি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের একটাই দাবি, বাউন্ডারির ভেতরের মার্কেট ভেঙে দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে এবং এর সৌন্দর্য নষ্ট হয় এমন কোন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
ধল পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ধল পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ি কাজ করা হয়েছে। মূলত এখানে এক সময় মৎস্যজীবিরা বিদ্যালয়ের মাঠে জাল শুকাতো, বাইরের মানুষের প্রচণ্ড আড্ডা ছিল। মার্কেট নির্মাণের ফলে তা বন্ধ হয়েছে এবং এ মার্কেটের ভাড়া প্রতি মাসে রশিদের মাধ্যমে আদায় করা হয়। তিনি আরো বলেন, মার্কেটের কাজ আড়াই বছর আগে শুরু হলেও চালু করা হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে, আর অভিযোগ করা হয়েছে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। সে ক্ষেত্রে এখানে মার্কেট চালু হওয়ার আগেই অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি হাস্যকর এবং মিথ্যা। তাছাড়া অভিযোগকারী কেউই ছাত্র অভিভাবক নন বলেও জানান প্রধান শিক্ষক।
দিরাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ক্ষমতা অনেক রয়েছে, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ি তারা প্রচুর ক্ষমতাবান। তাদের সিদ্ধান্ত বিদ্যালয় পরিচালনার জন্যই যথেষ্ট। ফলে আমার কাছে তদন্ত আসার পর তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তা তদন্ত করেছেন। বিদ্যালয়ের আয়ের একটা উৎস্য উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বর্তমান কমিটি যদি মনে করে এটি ভেঙে দেয়া উচিত, তবেই তারা তা করতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: