শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
দিরাইয়ে উদ্বোধনের আগেই দুটি সেতুতে ফাটল: নিম্নমানের কাজের অভিযোগ

দিরাইয়ে উদ্বোধনের আগেই দুটি সেতুতে ফাটল: নিম্নমানের কাজের অভিযোগ

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: একই মাপের নির্মাণাধীন দুটি ব্রিজ একই জায়গায় ‘ফাটল’ ধরার ঘটনাটিকে কাকতালীয় মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে তাই ঘটেছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলাতে। অবাক করা এ কাণ্ডটি ঘটেছে উপজেলার জগদল ও তাড়ল ইউনিয়নের পৃথক দুটি ব্রিজে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের ও সংশ্লিষ্ট অফিস প্রকৌশলীর অভিযোগ, সেতু দুটি নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রি ব্যবহার করে সিডিউল মতো কাজ না করায় ফাটল ধরেছে। দিরাই-শাল্লা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভাট নির্মাণ প্রকল্প ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে দরপত্রের ভিত্তিতে ১২টি সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু পিআইও অফিসকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালী ঠিকাদারগন জুন ফাইনালে কাজ সমাপ্তি দেখিয়ে সমূদয় বিল উত্তোলন করলেও অদৃশ্য কারণে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এসে এখনও কোন কোন সেতুতে নির্মাণ কাজ চলছে। ফাটল ধরা এ দুটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ পেয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদারের ছেলের নামের প্রতিষ্ঠান ও অপরটির কাজ পেয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ নাজমুল ইসলামের যৌথ মালিকানাধিন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান।
উপজেলা পিআইও অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে হাওর বেষ্টিত দিরাই-শাল্লায় মোট ১২টি সেতু/কালভার্ট নির্মানের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। নির্ধারিত তালিকাভূক্ত ঠিকাদারগণ দরপত্রে অংশগ্রহণ করেন। তালিকানুযায়ী ১১নং প্রকল্প তাড়ল ইউনিয়নের জালালনগর সিএমবি রোড হতে ইসলামপুর মসজিদের পার্শ্বে ৫০ ফুট সেতু/কালভার্ট নির্মাণ চুড়ান্ত ব্যয় ধার্য করা হয় ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৫ টাকা। সিডিউল মতো কাজ করার শর্তে দরপত্রের মাধ্যমে সেতু নির্মাণের কাজটি পায় দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদারের একমাত্র ছেলের নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স টগর নির্মাণ সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটির প্রোপাইটর হিসেবে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যানের সহোদর মোঃ সামসুজ্জামান তালুকদার।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই সেতুর চার কোনায় মূল পিলারে সাথে যুক্ত উইং ওয়ালে ফাটল ধরে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ খুবই নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রি ব্যবহার করায় কাজ শেষ হওয়ার আগেই চতুর্দিকের উইং ওয়ালে ফাটল ধরেছে। অভিযোগ রয়েছে বিষয়টি এলাকার জনগণ ঠিকাদার ও পিআইও অফিসের লোকদের দেখালে বা অবগত করার পরও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
এদিকে উপজেলার জগদল ইউনিয়নের রাজনগর (হালেয়া) গ্রামের পাশে হান্দুয়া বিলের মুনদুরির খারায় ৫০ ফুট দৈর্ঘের আরেকটি সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে চুড়ান্ত ব্যয় ধার্য করা হয় ৪০ লাখ টাকা। দরপত্রের মাধ্যমে একই মর্তে উক্ত সেতু/কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ গ্রামের মোঃ জসিম উদ্দিন তালুকদারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাইমুর রহমান এন্টারপ্রাইজ। তবে এর সাথে যৌথভাবে কাজ করছেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের ৮নং (দিরাই) ওয়ার্ডের সদস্য নাজমুল হক।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সেতুটিতে বর্তমানে নির্মাণ কাজ চলমান। নির্মাণ কাজ চলাবস্থায় কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে সেতুর উইং ওয়ালে বড় ফাটল ধরে। ফাটল দেয়া ওয়ালের অপর পাশে বাঁশ দিয়ে টেস লাগানো হয়।
ব্রিজের দৈর্ঘ-প্রস্থ ও কাজের মান বিবেচনায় সর্বসাকুল্য ৮-৯ লাখ টাকার কাজ হয়েছে বলে একাধিক এলাকাবাসীর অভিমত! বাকি টাকা আত্মসাৎ করার জন্য পিআইও অফিস-নেতা-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে দায়সারাভাবে লুটপাটের জন্য অতি নিম্নমানের কাজ করায় নির্মাণ কার্য শেষ হওয়ার আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের মালিক জসিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, লাইসেন্স আমার প্রতিষ্ঠানের নামে, আমি এখন ব্যস্ত আছি, এটা নিয়ে কি করবেন? বলেই মোবাইলের লাইন কেটে দেন।
দিরাই উপজেলা পিআইও অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কান্তি দাস সেতু নির্মাণে সিডিউল মতো নির্মাণ সামগ্রি ব্যবহার না করে কাজে নিম্নমানের সুরকি ও ভিটি বালু ব্যবহার করায় ঢালাই মজবুত হয়নি। উইং ওয়ালে সিডিউল মতো রড সিমেন্ট ব্যবহার করলে কোনভাবেই ফাটল ধরার কথা না। দিরাই-শাল্লার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হাই খান খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেতু নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে কাজে অনিয়মের বিষয়টি ঠিকাদারকে অবগত করেন। তবে এর দুদিন পর তিনি অদৃশ্য কারণে স্ট্যান্ড রিলিজ হয়ে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় চলে যাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়ার জন্য ব্যক্তিগত মুঠোফোনে বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি। তবে ঠিকাকাদারগণ কাজে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সেতুর দুইপাশে সংযোগ সড়কে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি ভরাট করার সময় ফাটল ধরেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: