বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৩:০৩ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

২০২১ সালে দেশ-বিদেশে যেসব আলেমে দ্বীন ইন্তেকাল করেছেন

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:

২০২১ সাল। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী খ্যাতিমান বহু আলেম, দাঈ ও ইসলামিক স্কলার ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। যাদের মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌছে। তারা বিভিন্নভাবে ইসলামের খেদমতে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছিলেন। গত এক বছরে তাদের অনেকে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। যাদের শূন্যতা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। আসুন জেনে নেই তাদের মধ্য থেকে ইন্তেকাল করা কয়েকজনকে-

প্রিন্সিপাল মাওলানা শফিকুল্লাহ:

দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীন, উত্তরার মারকাযুল কুরআন মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শফিকুল্লাহ (৭৩) টঙ্গীর আহসানিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ জানুয়ারি বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় ইন্তেকাল করেন। তিনি হাফেজী হুজুর রাহমাতুল্লাহি আলাইহির জীবদ্দশায় তারই প্রতিষ্ঠিত কামরাঙ্গীরচর নূরীয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি দীর্ঘ ১৪ বছর শিক্ষকতা করেন। তারপর তিনি আরবি ভাষার আধুনিক প্রতিষ্ঠান মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ প্রবর্তিত সিলেবাসের প্রতিষ্ঠান মাদরাসাতুল মদিনায় একটানা ২৪ বছর ইলমে দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। কর্মজীবনের প্রায় ৪০ বছর অতিবাহিত করে রাজধানী ঢাকার উত্তরখানে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারকাযুল কুরআন মাদরাসা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ মাদরাসার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী:

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও হাটহাজারী মাদরাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ১৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরীর সিএসসিআর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। ১৮ আগস্ট বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বাবুনগরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তার শারীরিক অবস্থার হঠাৎ আরও অবনতি হয়। পরে তিনি হাসপাতালে মারা যান।

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস:

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস (রহ.) ৩১ মার্চ ২০২১ সালে ঢাকার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিবিদ ছিলেন।

তিনি যশোর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি ও আল হাইআতুল উলয়ার কো-চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি যশোর মাদানিনগর মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস ও ঢাকার জামিয়া আরাবিয়্যা দারুল উলুম নতুনবাগসহ আরও অনেক মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস ছিলেন।

মাওলানা আবদুস সালাম চাটগামী:

দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আবদুস সালাম চাটগামী ৮ সেপ্টেম্বর বুধবার ইন্তেকাল করেছেন। ৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টা থেকে হাটহাজারী মাদরাসার শুরা বৈঠক চলছিল। তিনি (চাটগামী) বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। ওই বৈঠকে তাকে হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক নির্বাচন করা হয়। বৈঠক চলাকালে নিজের রুমে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরই মধ্যে আমরা বৈঠকে তার নাম মহাপরিচালক হিসেবে প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। কিন্তু ঘোষণাটি শোনানোর আগেই তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন। এরপর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি ইন্তেকাল করেন

মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী:

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী ২৯ নভেম্বর সোমবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ২৭ নভেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন বাস্তবায়ন নিয়ে কর্মব্যস্ত ছিলেন মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী। তিনি হার্টের রোগে ভুগছিলেন। শনিবার সন্ধ্যার দিকে সম্মেলন শেষে মাদরাসায় ফেরার পথে গাড়ির মধ্যেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর নুরুল ইসলাম জিহাদী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন।

গবেষক মাওলানা হেলাল উদ্দিন:

লক্ষ্মীপুরের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক মাওলানা হেলাল উদ্দিন (৫৫) ৫ সেপ্টেম্বর রোববার সকালে ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। মাওলানা হেলাল উদ্দিন লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের পীরে কামেল হযরত বড়মিয়া সাহেব বাগদাদীর (র.) নাতি ও পীরে কামেল ছাদু মিয়া সাহেবের ছোট ছেলে। তিনি বড়মিয়া সাহেব বাগদাদীর (র.) মাজার পরিচালনার পাশাপাশি বহু ধর্মীয়গ্রন্থ রচনা করেন।

মাওলানা আবদুর রব:

হাকিমুল ইসলাম হজরত মাওলানা জাকারিয়া (রহ.)-এর বিশিষ্ট খলিফা, জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদ্রাসার সাবেক শূরা প্রধান মাওলানা আবদুর রব (রহ.) ৭ জানুয়ারি মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। তিনি মদিনা হুজুর নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি আল্লামা আহমদ শফী (রহ.)-এর সহপাঠী ছিলেন। তারা একসঙ্গে হাটহাজারী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। তিনি ভারতের সাহারানপুরে শায়খুল হাদিস জাকারিয়া (রহ.)-এর কাছে সহিহ বোখারি ও আবু দাউদ পড়েছেন।

আল্লামা শামসুল ইসলাম:

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদের খতিব শায়খুল হাদিস আল্লামা শামসুল ইসলাম বার্ধক্যজনিত কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ ফেব্রুয়ারি সোমাবর দুপুর ২টা ৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। কিশোরগঞ্জে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বর্ষিয়ান এ আলেমে দ্বীন প্রায় ১৯ দিন বঙ্গবন্ধৃ শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মৃত্যুতে ইসলামি অঙ্গনসহ ছাত্র-শিক্ষক, মুসল্লি ও শুভাকাঙ্খীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। ১৯৮৩ সাল থেকে আল্লামা শামসুল ইসলাম ঐতিহ্যবাহী দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার শায়খুল হাদিস হিসেবে ইলমে হাদিসের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৮৬ সাল থেকে ঐতিহাসিক শহীদী জামে মসজিদে প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় কুরআনুল কারিমের তাফসির করে আসছেন। দীর্ঘ এ সময়ে তিনি সুরা ফাতেহা থেকে শুরু সুরা আল-ইকরা পর্যন্ত তাফসির সম্পন্ন করেছেন। তার তাফসির শুনে অনেক নারী-পুরুষ দ্বীনের সঠিক শিক্ষা লাভ করেছেন।

আল্লামা বেলায়েতুল্লাহ নূর:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার শায়খুল হাদিস আল্লামা বেলায়েতুল্লাহ নূর (৪৯) ১৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ইসলামি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জামে মসজিদে খতিব আল্লামা বেলায়েতুল্লাহ নূর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত মুফতি নূরুল্লাহ ৪র্থ ছেলে ছিলেন। আল্লামা বেলায়েতুল্লাহ নূর জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা ও ভারতের ঐতিহ্যবাহী দেওবন্দ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। তিনি গাজীপুর বরমী ও জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন।

সাংবাদিক হাফেজ আহমাদ উল্লাহ:

দৈনিক যুগান্তরের ‘ইসলাম ও জীবন’ পাতার সাবেক সম্পাদক, ছড়াকার ও লেখক হাফেজ আহমাদ উল্লাহ (৬৩) ২৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। হাফেজ আহমাদ উল্লাহ ১ নভেম্বর ১৯৫৮ সালে নরসিংদীতে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের আগে রাজধানী ঢাকার লালবাগ মাদরাসা থেকে হেফজ সম্পন্ন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে ‍উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। কর্ম জীবনে হাফেজ আহমাদ উল্লাহ আধুনিক প্রগতিশীল দৈনিক পত্রিকায় ইসলাম পাতা পরিচালনা করেছেন। শুধু দৈনিক যুগান্তরেই দীর্ঘ ২২ বছর যাবত ‘ইসলাম ও জীবন’ পাতার বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্বে অনেক নবীন লেখক অসাধারণ সব ফিচার রচনা করেছে। আশি-নব্বইয়ের দশকে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। তিনি ১৯৯১-৯৫’র দিকে সংসদ ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ সম্পাদনা করেছিলেন।

আলী তাশানকীর:

মৃত্যুর আগে ২০ বছরে এক হাজারবারেরও বেশি কুরআন খতমকারী আলী তাশানকীর (৮৫) ২৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার তুরস্কের সাকারিয়া রাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। খবর তুর্কী এজেন্সি। তুর্কী বংশোদ্ভূত বৃদ্ধ আলী তাশানকীরকে গত এক মাস আগে অন্ত্রের ব্যধিজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অন্ত্রে অস্রোপাচার করা হয়েছিল। পরে তার শরীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। ২০ বছর ধরে তার নিয়মিত রুটিন ছিলেন কুরআনুল কারিম তেলাওয়াত করা। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর তিনি ১ পারা কুরআন তেলাওয়াত করতেন। সে হিসেবে তিনি দৈনিক ৫ পারা কুরআন তেলাওয়াত করতেন। তবে হাজারবারেরও বেশি কুরআন খতমের বিষয়টি তার মৃত্যুর আগে কারো জানা ছিল না।

ইয়াহইয়া হামজা:

পবিত্র জমজম কুপের উন্নয়ন ও সেবাদানকারী সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ড. ইয়াহইয়াহ হামজা কোশক (৮০) গত সোমবার (১ মার্চ) ইন্তেকাল করেছেন। প্রকৌশলী ড. ইয়াহইয়া হামজা কোশক সৌদি আরবের প্রকৌশলীদের জনক হিসেবে পরিচিত। জমজম কূপের উন্নয়নে পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেক উন্নয়ন কাজের জনক ড. কোশক। তিনিই প্রথম জমজমের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে কূপে ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি সৌদি আরবের ন্যাশনাল ওয়াটার কোম্পানির মহাপরিচালক ছিলেন। সৌদির প্রেস ও প্রকাশনা সংস্থার সদস্যও ছিলেন তিনি। পবিত্র নগরী মক্কার এক সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম নেন প্রকৌশলী ড. ইয়াহইয়া হামজা কোশক। তাঁর পিতা মক্কার বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর পিতা হজ মৌসুমে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ তুর্কি থেকে আগত হজ ও ওমরা পালনকারীদের সেবা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।

শায়খ বদর:

আরব জাতীকে আহ্বানকারী সাহসী সন্তান, ফিলিস্তিনের প্রখ্যাত আলেম, মসজিদে আকসার প্রবীণ ও সংগ্রামী সেবক শায়খ বদর আল রাজাবি আর-রাফায়ি (৯৭) ২০ ফেব্রুয়ারি শনিবার বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন। দখলদার ইসরায়েলি সেনাদের বুলেটের সামনে মসজিদে আকসার গেটে দাঁড়িয়ে তিনি আরব জাতিকে বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষায় এভাবে আহ্বান করতেন-‘হে আরব জাতি! আপনার কোথায়? বায়তুল মুকাদ্দাস উদ্ধার করুন। এই যে দেখুন, আমি লাঠি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আপনাদের সহযোগিতায়।’

১৯২৫ সালে তিনি ফিলিস্তিনে জন্ম গ্রহণ করেন। মুক্ত স্বাধীন জেরুজালেমে তিনি বেড়ে ওঠেছেন। বংশ পরম্পরায় তিনি মসজিদে আকসার খাদেম হিসেবে আভির্ভূত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও তিনি ফিলিস্তিনের বর্তমান ইসরায়েল দখলকৃত জেরুজালেমে অবস্থান করেন। মসজিদে আকসার সেবাদানকারীদের সন্তান হিসেবেই তাকে বিবেচনা করা হয়। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি মসজিদে আকসার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ইসরায়েলি সেনাদের বুলেটের উপস্থিতিও তাকে মসজিদে আকসা থেকে সরাতে পারেনি। ১৯৬৭ সালে যখন দখলদার ইসরায়েল ফিলিস্তিনের পবিত্রভূমি জেরুজালেম ও মসজিদে আকসা দখল করে নেয়। মসজিদটির ওল্ডসিটির সব প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে দেয়। তখনও বদর আল রাজাবি ছিলেন সাহসী সেবক।

কাবা শরিফের সাবেক ইমাম শায়খ আল-সাবুনি:

কাবা শরিফের সাবেক অতিথি ইমাম শায়খ মুহাম্মাদ আলি আল-সাবুনি (৯১) ১৯ মার্চ শুক্রবার তুরস্কের ইয়েলওয়াতে ইন্তেকাল করেছেন। শায়খ আল-সাবুনি সিরিয়ায় জন্মগ্রহণ করলেও তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে সৌদিআরবের উম্মুল কুরা বিশ্ববিদালয় এবং মক্কার বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদে শিক্ষকতা করেছেন। কুরআনুল কারিমের তাফসির নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই রচনা করেছেন। শায়খ আল-সাবুনি পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদে হারাম তথা কাবা শরিফে ৫৭ বছর আগে ইমামতি করেছিলেন। তিনি ১৩৮৫ হিজরির রমজান মাজে কাবা শরিফে তারাবিহ নামাজের ইমামতি করেছিলেন।

আল্লামা নোমান ফয়জী:

দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেখল মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা নোমান ফয়জী ২২ মার্চ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। তিনি একাধারে ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেখল মাদরাসার মহাপরিচালক, নূরানী তালীমূল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম-এর সভাপতি, মঈনুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার মজলিসে শূরার অন্যতম সদস্য ছিলেন।

মকবুল হোসাইন আসগরী:

ঐতিহ্যবাহী সিলেটের হজরত শাহ পরান জামেয়া ইসলামিয়ার শায়খুল হাদিস মাওলানা মকবুল হোসাইন আসগরী ২৩ মার্চ রাত সাড়ে ৪টায় নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেছেন। মাওলানা মকবুল হোসাইন আসগারী শাহ পরান জামেয়ায় ইলমে হাদিসের দারসের পাশাপাশি সিলেটের জামেয়া দারুস সালাম খাসদবির সহকারী শায়খুল হাদিস হিসেবেও ইলমে হাদিসের দারস দিতেন। তিনি দারসে হাদিসের পাশাপাশি কুরআনের তাফসিরও পেশ করতেন। শায়খুল হাদিস ওয়াত তাফসির মাওলানা মাকবুল হোসাইন আসগরী রাহিমাহুল্লাহ একজন নিভৃতচারী জ্ঞানসাধক ছিলেন। তিনি আল্লামা আবদুল্লাহ দরখাস্তি, হজরত ইদরিস কান্ধলভী ও আহমদ আলী লাহু‌রি রাহিমাহুল্লাহদের মতো ওলামা-আকাবিরদের প্রিয়ভাজন ছাত্র ছিলেন।

ওয়ালি রাহমানি:

অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সাবেক সেক্রাটারি মাওলানা ওয়ালি রাহমানি (৭৮) ৩ এপ্রিল শনিবার বিহার রাজ্যের পাটনা জেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন মাওলানা ওয়ালি রাহমানি করোনা আক্রান্ত ছিলেন বলে জানা যায়। মাওলনা ওয়ালি রাহমানি ১৯৪৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদা ছিলেন মাওলানা মুহাম্মাদ আলি মুঙ্গেরি রহ.। যিনি লখনৌয়ের বিশ্ববিখ্যাত ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা প্রতিষ্ঠাতারদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৭৪-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মাওলনা রহমানি বিহার রাজ্যের আইন সভার অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বিধানসভার সাবেক সদস্যও ছিলেন। মাওলানা ওয়ালি রহমানি মুঙ্গেরের খানজা ই রহমানির পীর ও মুসলিম শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রতিষ্ঠান রহমানি-৩০ প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা এবং ইমারাত-ই শরিয়ার প্রধান ছিলেন।

মাওলানা ওয়াহিদ উদ্দিন খান:

ভারতের খ্যাতনামা আলেম ও বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ তাজকিরুল কুরআনের লেখক মাওলানা ওয়াহিদ উদ্দিন খান (৯৬) ২১ এপ্রিল বুধবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। মাওলানা ওয়াহিদ উদ্দিন খান ‘তাজকিরুল কুরআন’ নামে পবিত্র কুরআনুল কারিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেন। তিনি দিল্লির মাইনরিটি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যানও ছিলেন। মাওলানা ওয়াহিদ উদ্দিন খান ১৯২৫ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের আজমগড়ে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই বছর জানুয়ারিতে তাকে ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘পদ্ম বিভূষণ’ পদক দেওয়া হয়।

মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস:

বাংলাদেশ কাওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) এর সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস (৭৮) ২৮ এপ্রিল বুধবার রাতে রাজধানী উত্তরার শিন শিন জাপান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস (রাহ.) মুফতিয়ে আযম আল্লামা আহমদুল হক রহ. -এর খলিফা ও বাংলাদেশ কাওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সহ-সভাপতি ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি মিরপুরের একটি মহিলা মাদরাসার মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তিনি বাংলাদেশে মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার প্রথম সারির মুরুব্বিদের একজন ছিলেন।

পীর আল্লামা আবু ইবরাহিম সিদ্দিকী:

ভারতের হুগলী জেলার ফুরফুরা দরবারের পীর আল্লামা আবু ইবরাহিম সিদ্দিকী আল-কুরাইশী ২ মে সকাল সাড়ে ৯টায় নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ছিলেন ফুরফুরার মুজাদ্দেদে জামান হজরত আল্লামা আবু বকর সিদ্দিক আল-কুরাইশি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির নাতি। হজরত আল্লামা আব্দুল হাই সিদ্দিকি আল-কুরাইশীর (বড় হুজুরের) মেঝ ছেলে। তিনি পশ্চিম বাংলা, আসাম ও বাংলাদেশে অনেক মাদরাসা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। দ্বীন ও ইসলাম প্রচারে তাঁর ব্যাপক অবদান ছিল। তার জানাজা ও দাফন কখন অনুষ্ঠিত হবে এখনও তা জানা যায়নি।

মাওলানা খলিল আমিনী:

ভারতের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের জনপ্রিয় ওস্তাদ আরবি সাহিত্য বিশারদ মাওলানা নুর আলম খলিল আমিনী (৭৮) ৩ মে সোমবার ইন্তেকাল করেছেন। মাওলানা নুর আলম খলিল আমিনী হিন্দুস্থান থেকে প্রকাশিত আরবি সাহিত্য ম্যাগাজিন আদ-দাঈ-এর প্রধান সম্পাদক ছিলেন। তার মৃত্যুতে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপালসহ আরববিশ্ব ও ইউরোপের অনেকে দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। কারণ আরবি ও উর্দুতে লিখিত তার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রয়েছে। যে কিতাবগুলোর কয়েকটি এসব দেশের মাদরাসাগুলো সিলেবাস হিসেবে পড়ানো হতো। মাওলানা নুর আলম খলিল আমিনী ১৯৫২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিহারের সীতামরাহী জেলার রায়পুর গ্রামের জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট অফ অনার লাভ করেন। দেওবন্দের আরবি সাহিত্যের জনপ্রিয় শিক্ষক আহলে ইলেমদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। তার লিখিত বই গুলোর মধ্যে একটি ‘فلسطین في انتظار صلاح دين’ (ফিলিস্তিন ফি ইন্তিজারি সালাহিদিন) আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণার অর্ন্তভুক্ত ছিল। আর مفتاح العربية (মিফতাহুল আরব) বইটি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মাদরাসায় দরস নিজামির সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান:

প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার শায়খ ড. মাওলানা মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান (৫৭) ১০ মে সোমবার রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ড. মুস্তাফিজুর রহমান নিজ জন্মস্থান কালকিনিতে গড়ে তোলেন কালকিনি শিক্ষা ফাউন্ডেশন (কাশিফা)। তিনি ছিলেন কালকিনি প্রেসকাবের দাতা সদস্য। কর্ম জীবনে তিনি সৌদি দূতাবাসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরআগে তিনি বাংলাদেশ বেতারের বর্হিবিশ্ব কার্যক্রমের সিনিয়র সংবাদ পাঠক ছিলেন। সরকারি মাদ্রাসা আলিয়া ঢাকা’র অতিথি অধ্যাপক হিসেবে ক্লাস নেন। ড. মুস্তাফিজুর রহমান মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লিখিত বই বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠ্যক্রম হিসেবে পড়ানো হয়।

মুহাদ্দিস হাবিবুর রহমান আজমি:

দারুল উলূম দেওবন্দের প্রবীণ উস্তাদ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা হাবিবুর রহমান আজমি (৭৭) ১৩ মে বৃহস্পতিবার ইন্তেকাল করেছেন। তিনি চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দারুল উলূম দেওবন্দে দরস-তাদরিসের দায়িত্ব পালন করেছেন। মাওলানা আজমি দীর্ঘদিন মাসিক পত্রিকা দারুল উলুম দেওবন্দের সম্পাদক ছিলেন। পাশাপাশি জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের ওয়ার্কিং কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। মাওলানা হাবিবুর রহমান আজমি ইতিহাস, বিজ্ঞান ও গবেষণামূলক বই লিখে গেছেন। তিনি পুরুষদের নামকরণে অভিজ্ঞ ছিলেন। ছাত্র-শিক্ষক ও আমজনতার এ প্রিয় আলেম দেশ জাতি ও দেওবন্দের অনেক খেদমত করেছেন।

সাইয়েদ উসমান মানসুরপুরী:

দারুল উলুম দেওবন্দের কার্যনির্বাহী মুহতামিম ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের (একাংশ) সভাপতি সাইয়েদ মাওলানা কারী উসমান মানসুরপুরী ৭ মে শুক্রবার দুপুর ১:৩০ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। কারী সাইয়েদ উসমান মানসুরপুরী ছিলেন শাইখুল ইসলাম হজরত মাওলানা সাইয়েদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রাহমাতুল্লাহির সুযোগ্য জামাতা। তিনি জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের একাংশের সভাপতিও ছিলেন।

ইসলামিক স্কলার হিচেম ডাইয়েত:

উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনেশিয়ার বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ও ইসলামিক স্কলার হিচেম ডাইয়েত (৮৬) ১ জুন মঙ্গলবার ইন্তেকাল করেছেন। হিচেম ডাইয়েত ৬ ডিসেম্বর ১৯৩৫ সালে তিউনিশিয়ার তিউনিসে এক উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা-চাচা ও আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও বুদ্ধিজীবি ছিলেন। ইসলামি আইন শাস্ত্র তথা ইলমে ফিকহের সঙ্গে ডাইয়েত পরিবারের সম্পর্ক সুগভীর। বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার হিচেম ডাইয়েত তিউনিশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামিরেটস প্রফেসর ছিলেন। এছাড়াও তিনি কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। তিনি ইউরোপিয়ান একাডেমির বিজ্ঞান ও কলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ইসলাম ও আধুনিক দর্শন নিয়ে অনেক বই রচনা করেন। তার বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ইউরোপ অ্যান্ড ইসলাম (১৯৭৮), দ্য গ্রেট ফিতনা (১৯৮৯), ইসলামিক কালচার ইন ক্রাইসিস : এ রিফ্লেকশন অন সিভিলাইজেশনস ইন হিস্টোরি (২০১১), দ্য লাইফ অফ মুহাম্মাদ : প্রিডিকেশন ইন মক্কা (২০১৪), দ্য লাইফ অফ মুহাম্মাদ : রিভিলেশন অ্যন্ড প্রোফেসি (২০১৪)।

হাবিবুল্লাহ আনসারি:

বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের ঢাকা বিভাগের সভাপতি, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মালাখালার পীর বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা হাবিবুল্লাহ আনসারি (৭১) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১৩ জুন রোববার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। কুরআন শিক্ষা বোর্ডের এ দায়িত্বশীল মাওলানা হাবিবুল্লাহ আনসারি মসজিদ, মাদরাসা, নারীদের ধর্মীয় শিক্ষাসহ তাযকিয়া ও ইসলামি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মুসলিম নারী শিক্ষার প্রসার ও দ্বীনদার নারী সমাজ গঠনে তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি নারী শিক্ষার প্রসারে একাধিক মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। নারায়নগঞ্জের চিটাগাংরোডের হীরাঝিলে জামেয়া এছহাকিয়া (দাওরায়ে হাদিস) মহিলা মাদরাসা, দাউদকান্দির গৌরীপুরে জামেয়া আশরাফুল উলুম (দাওরায়ে হাদিস) মহিলা মাদরাসাসহ জামেয়া আনসারিয়ার প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

শায়খ মহিউদ্দিন:

শায়খ মহিউদ্দিন। ১০৭ বছরে এ প্রবীণ ১৯ জুন শনিবার পবিত্র নগরী মদিনায় ইন্তেকাল করেছেন। মসজিদে নববি থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ‘কারবান ও তাজুরি’ এলাকা তার বাড়ি হলেও তিনি নিয়মিত মসজিদে নববিতেই পড়তেন ৫ ওয়াক্ত নামাজ। প্রতিদিন তিনি নিজ বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে মসজিদে নববিতে এসে নামাজ পড়তেন। আরবি গণমাধ্যম আল-খালিজ ডটএই’র তথ্য মতে জানা যায়, শায়খ মহিউদ্দিন ছিলেন মদিনা নগরীর প্রবীণদের অন্যতম। ইসলামে দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বংশধর। ইসলামের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও আলেম মহিউদ্দিন ইবনে আরাবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন তাঁর পূর্বপুরুষ। মসজিদে নববিতেই তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে বাকিউল গারকাদ (জান্নাতুল বাকিতে)-এ দাফন করা হয়।

মাওলানা লুৎফর রহমান:

রাজধানীর মগবাজারের তৃতীয় তলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় গণমাধ্যমকর্মী, পবিত্র কুরআনের হাফেজ ও রেডিও ধ্বনির ইসলামিক অনুষ্ঠান ‘আহকামুল জুমা’র উপস্থাপক মুস্তাফিজুর রহমান ২৭ জুন রোববার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। মুস্তাফিজুর রহমানের ‘আহকামুল জুমা’ অনুষ্ঠানটি সরসারি সম্প্রচার হতো প্রতি শুক্রবার। এছাড়া তিনি রেডিও একাত্তরের ‘ইসলাম ও আমরা’ নামে একটি অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করতেন।

আহমাদ জিবরিল:

নির্যাতিত মুসলিম জনপদ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা, পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন-এর প্রতিষ্ঠাতা আহমাদ জিবরিল (৮৩) সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের একটি হাসপাতালে ৭ জুলাই বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন।

আহমাদ জিবরিল ১৯৩৮ সালে ফিলিস্তিনের ইয়াফা শহরের নিকটবর্তী ইয়াজুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০-এর দশকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন আহমাদ জিবরিল। তিনি ১৯৫৬ সালে মিসরের সামরিক একাডেমিতে ভর্তি হন এবং ১৯৫৯ সালে সেখান থেকে সাফল্যের সঙ্গে কমিশন লাভ করে অফিসার পদে সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালে সিরিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আমিন আল-হাফেজের সঙ্গে মতপার্থক্যের জের ধরে তিনি সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে সার্বক্ষণিক প্রতিরোধ সংগ্রামে যোগ দেন। তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলেন এবং দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

শিল্পী মাওলানা মাহফুজ আলম:

মাহফুজুল আলম ইসলামি সংগীত অঙ্গনের এক পরিচিত নাম। ইসলামি সংগীত নিয়ে কাজ করতেন কলরবে। গত ২০ জুলাই সকালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল আনুমানিক ২৩ বছর। মাহফুজুল আলম কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পী ছাড়াও একজন দক্ষ সাউন্ড ডিজাইনার ছিলেন। কলরবের অসংখ্য নাশিদের সাউন্ড ডিজাইনারের কাজ তার হাতেই হয়েছিল। তার সুললিত কণ্ঠে ‘প্রথমে আল্লাহ আল্লাহ’, ‘আমি চাই না বাঁচতে তুমি ছাড়া’, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’সহ অসংখ্য নাশিদ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে।

মুয়াজ্জিন শায়খ আল-আজলান:

মসজিদুল হারামের প্রবীণ মুয়াজ্জিন শায়খ শায়খ আব্দুর রহমান আল-আজলান (৮৫) ৭ মে শুক্রবার ইন্তেকাল করেছেন। শায়খ আল-আজলান ১৩৫৭ হিজরি মোতাবেক ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের পার্শ্ববর্তী প্রদেশ আল-কাসিমে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য কর্ম জীবনে শায়খ আল-আজলান সৌদি আরবের আল-কাসিম অঞ্চলের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মসজিদে হারামের মুয়াজ্জিন মধ্যে তিনি প্রবীণ। অতপর গত ৩৫ বছর ধরে মসজিদে হারামে ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে তাদরিসের কাজ করেন। শায়খ আজলান মসজিদুল হারামে উলুম শরিয়া তথা শরিয়া বিজ্ঞান বিষয়ে দরস দিতেন। পুরো বছরেই তিনি তার দরস চালু রাখতেন। তার দরসে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিপুল সংখ্যক হজ, ওমরাহ পালনকারী, দর্শনার্থীরা শিক্ষার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করতেন। মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়ার পরও তিনি অনলাইনে তার দরস চালু রেখেছিলেন। তিনি দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে মসজিদুল হারামে তাদরিসের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।

শায়খ নেয়ামাতুল্লাহ তুর্কি:

জীবনের বেশিরভাগ সময় ইসলামের দাওয়াত নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণকারী তুরস্কের বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার শায়খ নেয়ামাতুল্লাহ তুর্কি (৯০) ৩০ জুলাই শুক্রবার ইস্তাম্বুলে ইন্তেকাল করেছেন। দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে নিয়োজিত বিশ্ববিখ্যাত এ শায়খের মৃত্যু মুসলিম উম্মাহর জন্য বড় পরিতাপ ও শোকের খবর ছিল। শায়খ নেয়ামাতুল্লাহ ৯০ বছরের জীবনের বেশির ভাগ সময় দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে এশিয়া ইউরোপসহ বিশ্বের ৫৫টি দেশে গিয়েছেন। মানুষকে দ্বীনের পথে আহ্বান করেছেন। শায়খ নেয়ামাতুল্লাহ তুর্কি ১৯৩১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। উসমানি সম্রাজ্যের শেষ সুলতান আবদুল হামিদের শাসনামলে অনেক আলেমের কাছে তিনি শিক্ষা অর্জন করেন। অতঃপর দ্বীনের কাজে বিশ্বব্যাপী ঘুরে বেড়ান।

মুফতি ইরশাদ কাসেমি:

মিয়ানমারের প্রবীণ আলেম মুফতি ক্বারি মুহাম্মাদ ইরশাদ হুসাইন কাসেমি (১১০) কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে ১৮ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। মুফতি ইরশাদ হুসাইন কাসেমি ছিলেন মিয়ানমারের প্রবীণ আলেম ও ক্বারি। এক সময় তিনি বার্মার সরকারি চ্যানেলে পবিত্র কুরআনুল কারিম তেলাওয়াত করতেন। রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক জান্তার অমানবিক নির্যাতনের সময় তার নাগরিত্ব বাতিল করে তাঁর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে নিরূপায় হয়ে তিনি বাংলাদেশে হিজরত করতে বাধ্য হন। ১১০ বছর বয়সী এ প্রবীণ আলেম বার্মার মংগডুর অধিবাসী ছিলেন। তিনি আরাকান মুসলিমদের একজন প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা ছিলেন। এক সময় বার্মার সরকারি চ্যানেলে কুরআন তেলাওয়াতের জন্য নির্বাচিত হন এবং দেশটির বিখ্যাত ক্বারি হিসেবে সরকারি চ্যানেলে নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করতেন।

শায়খ আলি জাবের আল-হাদরামি:

বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ আলি জাবের আল-হাদরামি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার ইয়ারসি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। শায়খ আলি বিন সালেহ বিন মুহাম্মাদ বিন আলি জাবের আল হাদরামি ইন্দোনেশিয়ার প্রখ্যাত আলেম এবং প্রভাবশালী দাঈ ছিলেন।

ড. আবলা আল কাহলাবি:

আরব বিশ্বের প্রখ্যাত নারী ইসলাম প্রচারক অধ্যাপক ড. আবলা আল কাহলাবি (৭২) মহামারি করেনায় আক্রান্ত হয়ে ২৪ জানুয়ারি রোববার মিসরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ড. আবলা তার বাবার অনুরোধেই মিসরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের জন্য ইসলামিক অ্যান্ড আরবি স্টাডিজ কলেজের ফিকহ (ইসলামি আইন বিষয়) বিভাগের অধ্যাপনা শুরু করেন। এরপর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগে সুনামের সঙ্গে অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে কলেজ অব এডুকেশনের ইসলামি শরিআহ বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি সৌদিআরবের রিয়াদে কলেজ অব এডুকেশন ফর গার্লস ও আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্লস কলেজেও শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি ইসলামের প্রচার-প্রসারে নারীদের মাঝে দাওয়াতি কাজ শুরু করেন। মিসরসহ সৌদিআরবের পবিত্র নগরী কাবা শরিফেও নারীদের দারসে অংশগ্রহণ করেন। বশেষে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তিনি ফেসবুক লাইভে শুরু করেন দ্বীন প্রচারের কাজ। তাঁর সর্বশেষ নিয়মিত প্রোগ্রাম ছিল চিরস্থায়ী আমল বিষয়ক ‘আল বাকিয়াত আস সালিহাত’ নামক অনুষ্ঠান।

মাওলানা সৈয়দ মাসউদ আহমদ:

জামিয়া দ্বীনিয়া মৌলভীবাজারের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)-এর অন্যতম খলিফা হজরত মাওলানা সৈয়দ মাসউদ আহমদ সাহেব ২ সেপ্টেম্বর সিলেট ওমেন্স মেডিকেল কলেজে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক)-এর সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন।

মাওলানা শরীফুদ্দীন শাহ চৌধুরী:

উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া আরাবিয়া দারুল হিদায়া, পোরশা, নওগাঁর মুহতামিম হজরত মাওলানা শরীফুদ্দীন শাহ চৌধুরী (রহ.) ১২ জানুয়ারি রাজশাহী পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি তার স্ত্রী, তিন মেয়েসহ হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক ও শুভানুধ্যায়ীদের রেখে গেছেন।

হাফেজ মানসূর আহমাদ:

খুলনা শামছুল উলুম খাদেমুল ইসলাম পল্লীমঙ্গল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম হাফেজ মানসূর আহমাদ (রহ.) ৪ সেপ্টেম্বর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিস, কিডনি, ক্যানসারে ভুগছিলেন। তিনি ছিলেন খুলনা অঞ্চলের প্রথিতযশা ওলামায়ে কেরামের উস্তাদ, হুফ্ফাজের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি।

মাওলানা সাইফউদ্দীন ইয়াহইয়া:

মাসিক কাবার পথের সম্পাদক বিশিষ্ট গবেষক আলেম মাওলানা সাইফউদ্দীন ইয়াহইয়া (রহ.) ৮ জুলাই সকাল ছয়টায় রাজধানীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি একাধারে ছিলেন দক্ষ সংগঠক, জনহিতৈষী রাজনীতিক, গবেষক আলেম, জনপ্রিয় লেখক ও সম্পাদক। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো মাসিক কাবার পথে ও সাপ্তাহিক ইসলাহ। তার সুনিপুণ সম্পাদনায় পত্রিকা দুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।

এই চলে যাওয়ার ধারা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। একজন আলেম চলে যাওয়া মানে মাথার ওপর থেকে একখণ্ড শীতল মেঘ সরে যাওয়া। একটি ঝলমলে প্রদীপ নিভে যাওয়া। এক এক করে বাংলাদেশ হারাচ্ছে তার ধর্মীয় অভিভাবক। আলো ও ছায়ার বটবৃক্ষ। শূন্যতা গ্রাস করছে, হাহাকার বাড়ছে। আমাদেরই প্রয়োজনে-কল্যাণে তাদের বেঁচে থাকাটা খুব দরকার। দোয়ায় প্রার্থনায় তাদের বেঁচে থাকার মিনতি হয়ে উঠুক আমাদের কান্না, আমাদের অশ্রু। যারা চলে গেছে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে, তাদের মাগফিরাতের জন্য আমাদের হাত উঠুক মহামহিমের দরবারে। তার দরবার হতে, কেউ ফেরে না খালি হাতে।

amarsurma.com

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: