শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৩ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: সমাজের অবহেলিত ও অসহায় এবং পথশিশুদের নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ মানুষ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘অসহায় ও পথশিশু শিক্ষাকেন্দ্র’ স্কুল। এখনও মাস না পেরুলেও এলাকায় সাড়া পড়েছে এই স্কুলটির। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার পৌরশহরের মজলিশপুর এলাকায় একটি বাসা বাড়িতে গড়ে তোলা হয়েছে এই স্কুলটি। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মোস্তাহার মিয়া (মোস্তাক) জানান, এলাকার অসহায়, নিম্নবিত্ত ও ঝরে পড়া এবং টোকাই শ্রেণির শিশুদেরকে সমাজের মূলস্রোতে আনতেই মূলত এই উদ্যোগ। তাদের নীতি-নৈতিকতা নিয়ে সমাজে নানা প্রশ্ন থাকলেও তারাও যে এই সমাজের লোক, অনেকেই তা ভাবেন না।
জানা যায়, বর্তমানে এই স্কুলে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, এরমধ্যে ছাত্র সংখ্যা ২৪ জন ও ছাত্রী ১৬ জন। তিনি আরো জানান, গত মাসের ২১ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়। এখনও একমাস হয়নি, কিন্তু এলাকায় ভালো সাড়া পড়েছে। প্রথমদিকে টোকাই ও ঝরে পড়া শিশু চিহ্নিত করেছিলাম, তখন ছাত্রছাত্রী পাওয়া না গেলেও এখন জায়গার সংকুলান হচ্ছেনা। প্রতিদিনই অভিভাবকগণ তাদের ছেলে-মেয়ে নিয়ে আসছে। তবে আপাতত কাউকেই ফেরত দেয়া হচ্ছেনা।
সূত্র মতে, যাদের মা-বাবা নেই, সমাজে অসহায়, টোকাই, ঝরে পড়া শিশু, যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না-এ রকম শিশুদের অগ্রাধিকার দিয়ে ‘অসহায় ও পথশিশু শিক্ষাকেন্দ্র’ স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে প্রতিষ্ঠাতাসহ কয়েকজন বিনা বেতনে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। সূত্র আরো জানায়, এম কে ফাউন্ডেশন নামে একটি সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন মোস্তাহার মিয়া (মোস্তাক)। এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৯১ জন, যাদের অধিকাংশই তার ছাত্র-ছাত্রী, ‘অসহায় ও পথশিশু শিক্ষাকেন্দ্র’ স্কুলটিতে তারা নিরলসভাবে কাজ করছে স্বেচ্ছাশ্রমে।
জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক ও স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মোস্তাহার মিয়া (মোস্তাক) জানান, কলেজ জীবনে আমি এমসি কলেজে এই কাজটি করেছি; সমাজের পিছিয়ে পড়া ও টোকাই এবং অসহায় শিশুদের নিয়ে তখনই শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। আমার এই কাজ দেখে তখন অনেক বন্ধুবান্ধব অনুপ্রাণিত হয়ে আমার সাথে যুক্ত হয়েছিল। আমি আজীবন এই কাজটি অব্যাহত রাখতে চাই। স্কুলটিতে বিনাশ্রমে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে সুহিন আহমদ, মিতু দাস, বাচ্ছু মিয়া, ইমন মিয়া, সায়মা আক্তার, দিলারা আক্তার, এমজাদ মিয়া প্রমুখ। বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত এই স্কুলটিতে লেখাপড়া চলে।
অল্পদিনের চালু হওয়া স্কুলটি এলাকায় সাড়া ফেলেছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় রুম ভর্তি শিক্ষার্থী দেখে। এটির খবর এখন সোস্যাল মিডিয়ায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় এক নজর দেখতে প্রতিদিনই সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যাচ্ছেন। এরমধ্যে দিরাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ গোলাপ মিয়া, দিরাই উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম, ব্র্যাকের শিক্ষা প্রকল্পের কর্মকর্তা তারেক আহমদ, জুপিটার পাবলিকেশন্সের সুনামগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী সবুজ মিয়া, আমার সুরমা ডটকম সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার, ডিএসএস একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা শাহজাহান সিরাজ, রাজনীতিবিদ জুনায়েদ মিয়া, তারেক রায়হান চৌধুরী, মহিউদ্দিন মিলাদ, সামছুজ্জামান লিকসন, মোঃ নাজমুল ইসলাম ও নাইম আহমদ তালুকদার প্রমুখ।
ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে ‘অসহায় ও পথশিশু শিক্ষাকেন্দ্র’ স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মোস্তাহার মিয়া (মোস্তাক) জানান, সমাজে নানা ধরণের অন্যায়-অনাচার হয়ে থাকে, এসব অপকর্ম ঘটানোর পেছনে এক শ্রেণির শিশুরা জড়িত থাকার খবর পাওয়া যায়। যাদেরকে সমাজে অবহেলার চোখে দেখে আমি এদের নিয়ে কাজ করছি। তাদেরকে স্বাক্ষরতা শিক্ষার পাশাপাশি নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা দিয়ে সমাজের মূলস্রোতে নিয়ে আসতে চাই। তারাও যে সমাজের একটি অংশ-এই ভাবনাকে মানুষের মনে প্রবেশ করাতেই মূলত এই প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তারা সমাজের মূলস্রোতের পাশাপাশি শিক্ষা আলোয় আলোকিত হবে; এ জন্যই টোকাই শ্রেণির শিশু থেকে শুরু করে যাদের মা-বাবা নেই, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, অসহায় এবং বিশেষ করে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না, তাদেরকে আমার সাধ্যমতো লেখাপড়া শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করেছি। এছাড়া এম কে ফাউন্ডেশনের সদস্যদের নিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, যৌতুক প্রতিরোধ, রক্তদানে উৎসাহিত করতে বিভিন্নভাবে ক্যাম্পেইন করা হবে। সমাজের বিত্তবান ও সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে ‘অসহায় ও পথশিশু শিক্ষাকেন্দ্র’ স্কুলটি একটি ভালো পর্যায়ে চলে যাবে বলেও তিনি আশাবাদি।