বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার : আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের মেধা নষ্টের পর এবার ছাত্র-ছাত্রীদের মগজ ধোলাইয়ের কাজ চলছে নীরবে। লেখাপড়ার অত্যাবশ্যকীয় বস্তু খাতায় এবার যোগ হয়েছে সেখানকার নায়ক-নায়িকাদের উলঙ্গ ছবি দিয়ে মলাট তৈরির হিড়িক। আর এসব করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিরাই উপজেলাসহ প্রতিটি উপজেলা সদর ও গ্রামগঞ্জের বাজার এবং জেলা শহরে অবস্থিত লাইব্রেরি, স্টেশনারি দোকানগুলোতে এসব খাতা পাওয়া যায়। এসকল খাতার কোথাও কোন ছাপাখানা কিংবা প্রকাশনীর নাম নেই। তবে খাতার এক কোণে দেয়া আছে শুধুমাত্র একটি মোবাইল (০১৭১৬-২১৫৩২৫) নাম্বার। যোগাযোগ করা হলে মোবাইল রিসিভ করে সহিদ নামের একজন জানান, সিলেটের লালদিঘীরপাড়স্থ সোনার বাংলা প্রোডাক্ট নামে একটি তাদের একটি দোকান রয়েছে, আর এগুলো সেখান থেকে ছেপে সর্বত্র সাপ্লাই দেয়া হয়। নিজেদের ইচ্ছায় এসব ছবি দিচ্ছেন নাকি কোন কাস্টমারের অর্ডার? এমন প্রশ্নে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ি এসব দেয়া হয়েছে। তার মতে, সিলেটসহ সকল স্থানেই পাওয়া যায় এসব খাতা।
সরেজমিন বিভিন্ন লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখা যায়, ভারতীয় সিরিয়ালের ‘পাখি’, ‘কিরণমালা’, ‘জল নূপুর’সহ বিভিন্ন চরিত্রের ছবি সংবলিত খাতা বিক্রি হচ্ছে দোকানে দোকানে। এরমধ্যে একটি খাতায় ‘স্টার জলসা’র কিরণমালা সিরিয়ালের প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রীর বড় রঙিন ছবি দেয়া আছে। যার কারণে খাতাটির নামও দেয়া হয়েছে ‘কিরণমালা’। এছাড়া উপরে রয়েছে স্টার জলসার লোগোও। এমনি ‘পাখি’ খাতাতেও দেখা যায় পাখি চরিত্রের অভিনেত্রী ও এক অভিনেতার রঙিন ছবি।
অনেক বিদ্যালয়েরই নিজস্ব খাতা রয়েছে। সেখানে এই আপত্তিকর প্রচ্ছদযুক্ত খাতাগুলো স্থান করে নিতে না পারলেও যেসব স্কুলে নিজস্ব খাতা নেই কিংবা বিশেষ কারণে খাতা ক্রয় করতে হয়, সেসব স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা মূলত ওই খাতাগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিক্রেতা জানান, পরিবারে সিরিয়াল দেখার প্রবণতা বাড়ায় শিশুরা এসব চরিত্রের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠছে। আর খাতায় এ ধরণের ছবি দেখলে তারা তা কিনতেও চায়। অনেক অভিভাবক বাধ্য হয়ে এসব খাতা তারা ক্রয় করছেন। অধিক মুনাফার জন্য এ ধরণের খাতা বিক্রি করা হলেও তা শিশুদের মধ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলেই মন্তব্য বিশিষ্টজনদের। তাছাড়া মুনাফার জন্য শিক্ষার্থীদের এভাবে প্রলোভনে ফেলাকে অন্যায় বলেও মনে করছেন তারা।
সরকার যখন অটিজম (বিকলাঙ্গ) শিশুদের সক্ষম ও যোগ্য করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট রয়েছেন, ঠিক তখনি একটি স্বার্থান্বেষী মহল স্কুলগামী সুস্থ শিশুদের খাতায় ভারতীয় সিরিয়ালের নষ্ট চরিত্রের ছবি প্রকাশ করে তাদের অসুস্থ করে তুলছে। এদিকে সরকারের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন অভিভাবত মহল।
এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন জানান, এর আগে আমি এ বিষয়ে শুনিনি বা কোথাও দেখিনি, এখন জানতে পারছি। জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে এ ব্যাপারে একটি রেজুলেশন হয়েছে যে, যদি কোন ধারণের অবৈধ খাতা পাওয়া যায়, তাহলে এর বিরুদ্ধে অবিযান চালানো হবে। কোন বই বা খাতায় ভারতীয় ছবি বা অশ্লীল ছবি ব্যবহার করা ঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, শীঘ্রই এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে একটি অভিযান পরিচালনা করা হবে।