বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৪ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
তুরস্কের সউদী কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যায় পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন সউদীর একটি আদালত। এ সময় আদালত তিনজনকে ২৪ বছর করে কারাদন্ড দেয়। গতকাল সোমবার সাংবাদিক খাশোগি হত্যাকান্ডে জড়িতদের এ সাজার কথা জানিয়েছেন সউদীর পাবলিক প্রসিকিউটর। এ হত্যা মামলায় মোট ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছেন আদালত।
এ বিষয়ে সউদী আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদেল আল জুবায়ের বলেছেন, বিচারের ক্ষেত্রে সউদী আরব অন্য কোনো দেশের কথা শোনে না। নিজস্ব আইনে বিচার হয়। অন্য অনেক দেশ মনে করছে, বিচার প্রক্রিয়ায় সউদী নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ রয়েছে। এটি সঠিক নয়। তিনি বলেন, বিচারে প্রমাণ হয়েছে, সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ সালমান কাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দেননি।
এদিকে প্রায় ১৫ মাস পর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সউদী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার দায়ে ৫ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং তিনজনকে ২৪ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে সউদী আরব। তবে ইস্তাম্বুলে খাশোগি হত্যার নেতৃত্ব দেয়া কিলিং স্কোয়াডের দুই প্রধান পরিকল্পনাকারী, যারা যুবরাজ সালমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, তাদের খালাস দেয়া হয়েছে।
সউদীর সরকারি কৌঁসুলি সোমবার এ খবর জানিয়ে বলেন, খাশোগি হত্যায় যে ১১ জনের বিচার শুরু হয়েছিল তাদের মধ্যে আটজনকে বিভিন্ন দন্ড দেয়া হলেও হত্যায় অভিযুক্ত যুবরাজ সালমানের তৎকালীন উপদেষ্টা সৌদ আল কাহতানি ও গোয়েন্দা উপপ্রধান আহমেদ আল আসিরির বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেছেন, সউদী আল কাহতানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মতো কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে তাকে মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়েছে। কাহতানি ছিলেন যুবরাজ সালমানের খুব ঘনিষ্ঠদের একজন। আর ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক খাশোগি ছিলেন যুবরাজ সালমানের কট্টর সমালোচক।
মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) তদন্ত করে জানতে পারে, খাসোগি হত্যায় সালমান নিজের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা কাহতানিকে, যিনি হত্যা মিশনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারীর দায়িত্বে ছিলেন তাকে ১১টি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে ও পরে তাকে বার্তাগুলো পাঠান হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার জন্য সমালোচিত সালমান।
সউদী গোয়েন্দা সংস্থার উপপ্রধান মেজর জেনারেল আহমেদ আল-আসিরি ১৫ জনের কিলিং স্কোয়াড গঠন করেন। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) সাংবাদিক খাসোগি হত্যাবিষয়ক তদন্তের উপসংহারে মন্তব্য করে, সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে।
তবে তদন্ত শেষে যুবরাজ সালমান ও তার উপদেষ্টা সৌদ আল কাহতানির মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান হওয়া মোট ১১টি বার্তায় কী লেখা ছিল, তা প্রকাশ না করে সিআইএ জানায়, যুবরাজ সালমানের সংশ্লিটতা আছে কিন্তু সরাসরি জামাল খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন কি না, সে তথ্য তাদের কাছে নেই।
তুরস্কের একটি টেলিভিশনের প্রচারিত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ওই ১৫ জন আততায়ী তুরস্ক বিমানবন্দরে প্রবেশের পর হোটেলে উঠছে। খাসোগি কনস্যুলেটে প্রবেশের ঘণ্টাখানেক আগে কিছু গাড়ি দূতাবাসে ঢুকতে দেখা গেছে। তারা খাশোগিকে হত্যার পর সেদিনই দুটি বিমানে করে সউদী আরবে চলে যায়।
সাংবাদিক জামাল খাশোগি ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সউদী কনসল্যুটে মর্মান্তিকভাবে খুন হন। পরে তদন্তে জানা যায় যুবরাজ সালমানের নির্দেশে ১৫ সদস্যের একটি কিলিং স্কোয়াড কনসল্যুটের ভেতরে তাকে হত্যা করতে দুটি বিমান নিয়ে তুরস্কে গিয়েছিল, সেই দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন খালাস পাওয়া এই দুজন।
প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ঘটনার ১৭ দিন পর সউদী আরব স্বীকার করে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে, ‘হাতাহাতির একপর্যায়ে খাসোগির মৃত্যু হয়েছে’। তবে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে স্বীকার করলেও এতে রাজপরিবার জড়িত নয় বলে দাবি করছে সউদী আরব।