বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০১ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
মহামারী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, দীর্ঘ হচ্ছে মুত্যুর মিছিল। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সতর্কতায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এবার আর্থিক সহায়তা করছেন তারা। করোনা মোকাবেলায় আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য তহবিল গঠন করেছেন বাংলাদেশের ২৭ জন ক্রিকেটার।
এই ২৭জন ক্রিকেটার তাদের এক মাসের বেতনের অর্ধেকটা দান করবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সর্বশেষ কেন্দ্রীয় চুক্তির ১৭জন ক্রিকেটারের সঙ্গে এই কার্যক্রমে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের আরও ১০জন ক্রিকেটার। স¤প্রতি জাতীয় দলে খেলা চুক্তির বাইরে থাকা এই ১০ ক্রিকেটারও তাদের বেতনের অর্ধেকটা দান করবেন।
চুক্তিতে না থাকলেও কোনো সিরিজে খেললে ওই মাসে নিজের গ্রেড অনুযায়ী বেতন পান ক্রিকেটাররা। একইভাবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা ক্রিকেটাররা বেতন পাচ্ছেন। নিজে থেকেই কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের সদ্যবিদায়ী ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও তার বেতনের অর্ধেকটা করোনা আক্রান্তদের সাহায্যে দিচ্ছেন।
ক্রিকেটারদের এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ব্যাপারে মাশরাফি বলেন, ‘করোনা নিয়ে খুবই বাজে অবস্থা তৈরি হয়েছে। করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, কয়েকজন মারা গেছেন ইতোমধ্যে। এমন অবস্থায় ক্রিকেটারদের দেওয়া অর্থ করোনা আক্রান্তদের সহায়তায় কাজে লাগলে ক্রিকেটারদের এই প্রচেষ্টা কিছুটা হলেও সফল হবে।’
এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক মুমিনুল হক, তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের প্রশংসাও করেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
নিজেদের সম্মিলিত এই প্রচেষ্টার ব্যাপারে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নাজমুল হাসান শান্ত বলেন, ‘আমরা খেলোয়াড়রা যারা আছি, সবাই মিলেই উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছে। দেশের অবস্থা বিবেচনায় আমরা উদ্যোগটা নিয়েছি। আমাদের দেখে যদি কেউ এগোয়, তাহলে আমাদের দেশের করোনা আক্রান্তদের সাহায্য করা হবে। এ কারণেই আমাদের এই উদ্যোগ। এটা আমাকে প্রথম তামিম ভাই জানান। পরে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই।’
তরুণ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের নতুন অধিনায়ক তামিম ভাই আমাকে এ বিষয়ে জানান। এরপর আমাদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রæপে বিষয়টা জানান সাব্বির খান ভাই। উনি ম্যাসেজ করে জানান আমরা করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে চাই। তবে এটা বাধ্যতাম‚লক নয়। এমন অবস্থায় যে কেউ-ই পাশে দাঁড়াতে চায়। তো এরপর আমরা সবাই সম্মত হই সাহায্য করার ব্যাপারে।’’
আরেক ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘আমরাক্ষুদ্র চেষ্টা করেছি। আমাদের দেশে এমনও মানুষ আছে, যারা বেশ বিত্তবান। দেশ লক ডাউন, অনেকের আয়ের উৎস বন্ধ। তো সব মিলিয়ে আমরা ২৭ জন মিলিয়ে চেষ্টা করেছি যতটা সাহায্য করা যায়। আমরা আমাদের অর্ধেক বেতন দিচ্ছি এখানে। এতে হয়তো অনেকরই এক বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা হতে পারে।’
জাতীয় দলের তরুণ ডানহাতি অফ স্পিনার নাঈম হাসান বলেন, ‘সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে একটা পরিমাণে অর্থ করোনা আক্রান্তদেরকে দেবে। এখানে অনেকেই কন্ট্রিবিউট করেছে। আমাকে এটা প্রথমে জানান তামিম ভাই। আসলে মাশরাফি ভাই, মুশফিক ভাইরা মিলে এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। আমরা তাদের এই সিদ্ধান্তে রাজি হয়ে অর্ধেক বেতন দিচ্ছি।’
২৭জন ক্রিকেটার তাদের বেতনের অর্ধেক দিলে অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা (কর কেটে নেওয়ার পর ২৫ লাখের মতো দাঁড়াবে)। এই অর্থ সরকার নাকি কোনো প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেবেন, এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি ক্রিকেটাররা।
এক মাসের বেতনের অর্ধেকটা দান করা ক্রিকেটাররা হলেন : মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, মোহাম্মদ মিঠুন, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, নাঈম হাসান, আবু জায়েদ রাহি, এবাদত হোসেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, আফিফ হোসেন ধ্রæব, নাঈম শেখ, শফিউল ইসলাম, মাশরাফি বিন মুর্তজা, আল আমিন হোসেন, মাহেদী হাসান, হাসান মাহমুদ, সাঈফ হাসান, ইয়াসির আলী রাব্বি, তাসকিন আহমেদ, নাসুম আহমেদ ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।