শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
মানবসৃষ্ট ‘করোনা’ ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপি কিছু অজ্ঞাত চরিত্রের আত্মপাকাশ ঘটেছে। প্রকাশ পেয়েছে মুনাফিকের আসল রূপও। করোনা ভাইরাস যে মানবসৃষ্ট এবং তার গতি-প্রকৃতি তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে, যারা এর পেছনের মূল হোতা! তবে এই মহামারীর কারণে অনেক দেশই আক্রান্ত হয়েছে। বস্তুত: করোনা ভাইরাসকে উপলক্ষ্য করে গভীরতম চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে, তা অন্তরের চোখ দিয়ে দেখা ও কান পেতে শোনা যায়।
‘কোভিট-১৯’ যা বিশ্বব্যাপি করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত। এর শুরু যে চীন দেশ থেকে হয়েছে এবং তারা এর গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে, তা ফুটে উঠেছে বিশিষ্ট লেখক-গবেষক, আলেমেদ্বীন, জামেয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা সাজিদুর রহমান সাহেবের একটি লেখায়। নিম্ন তা তুলে ধরা হলো।
‘সিলেটরত্ন অভিজ্ঞ আলেমে দ্বীন আল্লামা মুশাহিদ আলী বায়মপুরি রাহ.-এর নাকি উক্তি রয়েছে, এ চায়নারাই মূলত ইয়াজুজ মাজুজ। যারা সভ্য পৃথিবীর কলঙ্ক। যারা যাবতীয় সভ্যতা ধ্বংস করবে। ধ্বংস করবে গোটা পৃথিবী। সে আলামতই ধীরে ধীরে পরিদৃশ্য হচ্ছে’।
‘এক আমেরিকান অস্ত্রবিজ্ঞানি দাবি করেছেন-করোনা ভাইরাস মানববিধ্বংসী জৈবিক অস্ত্র। চায়নারা ২০৩০ সাল থেকে বিশ্বের একমাত্র সুপার পাওয়ার হওয়ার জন্য এটা চাষ ও আবিষ্কার করেছে। এটার প্রতিষেধকও তাদের কাছে আছে। তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এ ভাইরাসের গতিপথ। চীনের থেকে ভাইরাস বের হলো। সুদূর আমেরিকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়লো। কিন্তু চীনের রাজনৈতিক রাজধানী বেইজিং এবং অর্থনৈতিক রাজধানী সাংহাইয়ে সে ভাইরাস ঢুকল না। এতেই বুঝা যায়, তারা ভাইরাসটি গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সফলভাবে। আবার করোনার কারণে ইতালিসহ ইউরোপ অঞ্চলে যে পরিমাণ মানুষ মরেছে, চীনে কিন্তু সেভাবে মরেনি। তারা তো এটাকে নিয়ন্ত্রণই করে ফেলেছে। এখন চীনে কোনো করোনা রোগী নেই। অস্থায়ী হাসপাতালগুলো ক্রমে বন্ধ করে দিচ্ছে। তারা করোনা ভাইরাস এবং তার প্রতিষেধক উভয়টিকেই সফলভাবে পরীক্ষা করে নিয়েছে।
উত্তর কোরিয়ায় ১১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। তাদের ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে মৃত্যু নিশ্চিত করে দেশ করোনামুক্ত করেছে। এই মৃত লাশগুলো পরীক্ষা করেই উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, এটা চায়নাদের মানবসভ্যতা বিধ্বংসী শয়তানি উচ্চাভিলাস। এটা জৈবিক গ্যাস জাতীয় অস্ত্র। যা বিশ্বের কিয়ামত ঘটিয়ে দিতে পারে। তারা চীনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার ঘোষণা দেয়। ৮৫/৮৬টি দেশেরও উত্তর কোরিয়ার কথা বুঝে এসেছে। তারাও চীনের বিরুদ্ধ মামলা করবে জানিয়েছে’।
এখন আসি মূল কথায়; অনেক আগেই আমি একটি স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছিলাম যে, এটি মূলত ইসলামের বিপক্ষে একটি ষড়যন্ত্র। অনেকে বিভিন্ন ধরণের কমেন্ট (মতামত) দিয়েছে। একজন লিখেছেন, এর দ্বারা শুধু মুসলমান মারা যাচ্ছে না, অন্যান্য ধর্মের লোকজনও মারা যাচ্ছে এবং তাদের সংখ্যা বেশি। আমাদের অনেকেরই একটি সমস্যা হলো-বিষয়ের গভীরে না গিয়ে, ইতিহাসের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ না ভেবেই মন্তব্য করে ফেলি।
পৃথিবীর আদি থেকেই আল্লাহর একত্ববাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে একটি গোষ্ঠী, যা শয়তানের সঙ্গি-সাথি হিসেবেই পরিচিত। ক্রমেই তাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আখেরী নবীর আগমন, আল্লাহর নির্দেশিত ও নির্বাচিত ধর্ম ইসলাম কিয়ামত অবধি স্থায়ী থাকা, মানুষের মুক্তির একমাত্র বার্তাবাহক সংবিধান আল-কুরআনকে ঘোষণা করায় আল্লাহ বিরোধি ও ইসলাম বিদ্বেষীরা সেই শুরু থেকেই বিভিন্নভাবে এর বিরোধিতা করে আসছে।
বিগত পনেরোশত বছরের ইতিহাসে চোখ বুলালে ইসলাম বিদ্বেষীদের ইতিহাস সহজেই ভেসে উঠে। এমন কোন শতাব্দী নেই, যুগ বা দশক নেই; যে সময়ে ইসলাম নির্মুলের ষড়যন্ত্র হয়নি। আল্লাহদ্রোহী ও ইসলাম বিদ্বেষীরা শয়তানের কুমন্ত্রণা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে; যদিও তারা কিয়ামত পর্যন্ত সফল হবে না।
ইসলাম হচ্ছে খাঁটি ধর্মের নাম; তাকে যারা মনে-প্রাণে পালন করে, তারা হচ্ছে ধার্মিক। আর খাঁটি ধার্মিকরা আল্লাহর প্রিয়পাত্র। তাদের দেহ-মন, চরিত্র সবই খাঁটি ও নির্মল। কিন্তু শয়তান ও তার দোসরদের কাছে এগুলো অসহ্য যন্ত্রণার কারণ।
করোনা ভাইরাস সাম্প্রতিককালের একটি মহামারী। এর আগেও বহু মহামারী ও ষড়যন্ত্র প্রকাশ পেয়েছে। দেখা গেছে, এর মূল টার্গেট ইসলাম ও মুসলমান। তবে সবদেশের বা সব অঞ্চলের মুসলমান নয়; যে দেশ বা অঞ্চলে খাঁটি ইসলাম ও মুসলমান রয়েছে, সেখানেই ইসলাম বিদ্বেষীদের কালো থাবা বিস্তার করেছে অত্যন্ত সুকৌশলে। সাহায্য-সহযোগিতার নামে, পরামর্শের নামে, কুচকৌশল চালানো, বাণিজ্য বৃদ্ধির নামে দেশে দেশে অপসংস্কৃতির সয়লাব ঘটানো হয়েছে মূলত মুসলিম দেশগুলোতে।
বর্তমান বিশ্ব নিয়ে যাদের চোখ-কান খোলা, তারা ভালো করেই অবগত আছেন যে, ইয়াহুদী-নাসারা ও খৃস্টানসহ সকল ইসলাম বিদ্বেষীরাই বিভিন্নভাবে মুসলিম দেশগুলোতে নানা প্রকারের ষড়যন্ত্র বা ফিতনা চালিয়ে যাচ্ছে। কোথাও গায়ে পড়ে তারা যুদ্ধ চালাচ্ছে, আবার কোথাও মুসলিম দেশগুলোতে নিজেদের উপনিবেশ গড়েছে; আবার কোথাও মুসলিম দেশগুলোতে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে দিচ্ছে। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনতো প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে। অতি আধুনিকতার নামে প্রতিটি মুসলিম দেশগুলোতে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি চালু করে খাঁটি ও ধর্ম ভীরুতার বিপক্ষে এক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। আর তাদের বপন করা বীজ বছরান্তে না হলেও দশকের মধ্যে উদগিরণ হয়ে মুসলিম মানসে তা সহজেই বৃক্ষে রূপান্তরিত হচ্ছে। এটা আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত দু:খ ও হতাশাজনক। আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে আমাদের প্রকাশ্য শত্রু ভাবতে বলেছেন, আমরা তাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছি! কোন কৌশলে যে তারা আমাদের মন-মানসে প্রবেশ করছে, তা আমরা বিজ্ঞ দাবিদাররা (!) ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারতেছিনা। ফলাফল যা হওয়ার হচ্ছে, কিয়ামত দিবসে এসবের কুফলের হিসাব আমাদেরকে কড়ায়-গণ্ডায় দিতে হবে।
করোনা ভাইরাসের এই মহামারীকে সামনে এনে ইসলাম বিদ্বেষীরা তাদের প্রণীত দীর্ঘকালের নীলনকশার অনেকটাই বাস্তবায়নের পথে। এই ভাইরাসের কারণে পৃথিবীর কোন ধর্মেই ধর্মীয়ভাবে কোনো বিতর্ক দেখা দেয়নি। শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিভিন্নভাবে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানসহ নানা কাজে আজ সর্বত্র বিতর্কের ঝড় বইছে। ‘এই কাজ করা যাবে না, তো করলেও এভাবে করা যাবে না’ ইত্যাদি নানা বিতর্ক।
মসজিদ মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান এবাদতের স্থান। সেখানে তারা কমপক্ষে দৈনিক পাঁচবার মিলিত হয়ে একতাবদ্ধ শক্তি নিয়ে খাঁটি মনে আল্লাহর ইবাদত করে। এই একতাবদ্ধ শক্তি চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে ইয়াহুদী-খৃস্টানদের কুমন্ত্রণার কোন কমতি ছিলনা। আগেও ছিল, এখনও আছে। করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে তারা মসজিদে প্রবেশ করে ফেলেছে। সহিহ হাদিস মুতাবেক নামাযে দাঁড়ানোর পর কাতারে কোন ফাঁক না রাখার নির্দেশ রয়েছে। আগে ইমাম সাহেব ও মুসুল্লীগণ একে অপরকে কাছাকাছি গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়াতে বলতেন। আর করোনা ভাইরাসের অজুহাতে এখন ইমাম সাহেব ও মুসুল্লীরা দূরে থাকতে বলেন। কি মনে হয়, ইসলাম বিদ্বেষীরা তাদের ষড়যন্ত্রের একটি অংশে এখানে সফল কি না?
আগে যত ইচ্ছা মুসুল্লী নামাযে আসতে পারতেন, এখন তা নির্ধারিত করা হয়েছে ৫, ১০ ও ১২-তে। শেষ পর্যন্ত পবিত্র রমযানের তারাবিহ নামাযে মুসুল্লী নির্ধারিত করায় এতে ত্রিমুখি সংকট তৈরি হয়েছে। ইমাম, মুসুল্লী ও মসজিদ কমিটির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। অনেক জায়গায় ইতিমধ্যে এ নিয়ে সংঘর্ষ হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ জাতিতে সহিংসরূপ ঢুকিয়ে দেয়ার কুট-কৌশলেও কি তারা সফল হল না?
মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন লোক মারা গেলে যারাই সুযোগ পেয়েছে, জানাযায় অংশগ্রহণ করতে কোন বাধা-নিষেধ ছিল না। কিন্তু করোনা ভাইরাসকে উৎস্য করে তাতেও বিভিন্ন ধরণের জটিলতা দেখা দিয়েছে। কেউ মারা গেলে প্রশাসনের লোক উপস্থিত ও সামান্য সংখ্যক লোক নিয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে জানাযা শেষ করা। সর্বোপরি, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কওমী মাদরাসাগুলোকেও পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
* মসজিদ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান; এখানে ধর্ম-কর্ম পালন করা হয়। ঠিক তেমনিভাবে মন্দিরও তাদের ধর্মীয় স্থান, যেখানে তারা উপাসনা করে থাকে। মসজিদে লোক সমাহম সীমিত করা হলো, কিন্তু মন্দিরসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে মানুষের সমাগম সীমিত করার কোন দলীল নেই।
* জানাযা মুসলমানদের একটি ধর্মীয় কাজ; সেখানে জনসমাগম সীমিত করা হলো, কিন্তু অন্যান্য ধর্মাবলম্বী বিশেষত হিন্দু ধর্মের সৎকারে জনসমাগম সীমিত করা হয়নি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে শুধুমাত্র মুসলিমদের আচার-অনুষ্ঠানে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অমান্য করায় জরিমানা এমনকি গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু হিন্দুদের মন্দিরে বা সৎকারে সামাজিক দূরত্ব না মানার কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ পর্যন্তও দেয়া হয়নি।
* তর্কের খাতিরেই অনেকেই বলবেন যে, এই করোনা ভাইরাসের কারণে শুধু মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না, বরং অন্যান্য ধর্মের লোকজনও বেশি মারা যাচ্ছে। তাদের জন্য যে কথাটি বলতে চাই, প্রত্যেক মানুষের শেষ ঠিকানা বা আশ্রয় হচ্ছে ধর্ম। আর তাই আল্লাহদ্রোহী বা ইসলাম বিদ্বেষীরা তাদের মূল টার্গেট হচ্ছে ধর্ম। যারা এর পেছনে মূল শক্তি বা বুদ্ধি দিয়ে কাজ করছে, তারা এক সাথে দুটি অর্জন পাচ্ছে। এক. মানব সম্প্রদায়ের হ্রাস ও দুই. ধর্মীয় মেরুদণ্ডহীনতা। মানব সম্প্রদায় হ্রাসের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে বিভিন্ন কার্যক্রম চালু রয়েছে। সাথে যদি ধর্মীয় মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে পারে বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়ের, তবেই তাদের কিল্লাহ ফতেহ! আর ধর্মকে মূল সূত্র ধরেই বিশ্বব্যাপি ইয়াহুদী-নাসারাদের নানা প্রকার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
০৭-০৫-২০২০