বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫২ অপরাহ্ন
ইফতেখার আলম:
চাকুরি করি জেলা সদরের কলেজে, কিন্তু নানান কারনে জেলা শহরটি বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা এমনকি কিছু উপজেলা শহর থেকে পিছিয়ে আছে। এখানের ছেলে- মেয়ে মানে আমার শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়ার ফর্দটা খুউব বড়ো নয়। আসলে হাওর বেস্টিত বিভিন্ন জনপদ থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীরা জানে সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হয়, তাই তারা সংগ্রামমুখর জীবনকেই বেছে নেয়।
ভরা বর্ষায় হাওরের ‘আফাল’ থেকে নিজের বসত বাড়ি রক্ষা করা আর বিস্তীর্ণ জলরাশি ভেংগে স্কুল- কলেজে যাওয়া আবার হেমন্তকালে থেকে যখন হাওর-জলাশয়-নদীর পানি কমতে থাকে, তখন কিছুটা নৌকায় আর কিছুটা পায়ে হাটাঁ আর শীতকালে হাওরের পানিতে যখন আর কোন নৌকা চলেনা, তখন মাইলের পর মাইল পাঁয়ে হাঁটা-একান্তই ভাগ্য লিখন বলে মেনে নিয়েছে।
আমার অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা শহরের কলেজে পড়ে, আমাদের কলেজে ছেলেদের আবাসিক কোন সুবিধা নেই। শহরের বাইরের শিক্ষার্থীরা তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া,শহরে মেসে থাকা-খাওয়া, কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়িতে বাবা-মাকে সহায়তা করতে নিজের পড়ালেখার পাশাপাশি ‘টিউশনি’ করে জীবন নির্বাহ করছে।
সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারনে সরকারের নির্দেশনা অনু্যায়ী দেশব্যাপী ‘ঘরে থাকো’ বা ‘Stay Home ‘ আমার ছেলে মেয়েদের পথ চলার সম্বল ‘টিউশনি’ বন্ধ। ধারদেনা করে, দোকান বাকি করে সুদিনের আশায় মেস বাড়িতে থেকেছে, ভেবেছে এই করোনার প্রকোপ কমলে আবার ‘টিউশনি’ শুরু করবে। কিন্তু এপ্রিল মাস শেষ, মে মাস শুরু। মার্চ মাসে টিউশনি থেকে বেতন পেলেও গতমাসের (এপ্রিল) বেতন পেয়েছে মাত্র কয়েকজন। বেশীরবাগ শিক্ষার্থীই পায়নি। কিন্তু মেস বাড়ির মালিক ‘বাসা ভাড়া’র আর মুদি দোকানী ‘দোকান বাকি’ পরিশোধের তাগদা দিচ্ছেন।
আমার এ শিক্ষার্থীদের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা এমন না যে, পরিবার থেকে টাকা-পয়সা আনতে পারবে। বিবিধ কারনেই কারো কাছে হাতও পাততে পারছেনা আবার পাওনাদার আর মেস বাড়ির মালিকের ক্রমাগত চাপও সামলাতে পারছে না। এই বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীদের দুর্দশা লাঘবের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান করছি।