মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করে তিনি যে চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপ ও নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিক উদ্যোগ নেন, তা বিশ্বের দুটি বৃহৎ অর্থনীতিতে জটিলতা ও সংকট সৃষ্টি করেছে মাত্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প এধরনের বাণিজ্যিক যুদ্ধ থেকে যে ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন সে প্রচারভিযানেও তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন দেখাতে পারছেন না এই রিপাবলিকান নেতা। এর কারণ চীনা পণ্যগুলোতে অধিক শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসের উদ্যোগ নেয়া হলেও গত আগস্টে চীনের পক্ষে বরং এ ঘাটতি ৬৭ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। যা গত ১৪ বছরে সর্বোচ্চ। -সিএনএন
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি গত জুলাইতে ৭ শতাংশ ছিল এবং তা এখন ২৬ বিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে। এ তথ্য দিয়েছে ইউএস সেনসাস ব্যুরো। বরং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার শাসনামল শুরু করার সময়কার চাইতে চীনের সঙ্গে আমদানি ও রফতানি আয়ে যুক্তরাষ্ট্র বরং আরো অধিক পিছিয়ে গেছে। কোভিড মহামারীতেও চীনের অর্থনীতি পনুরুদ্ধার সম্ভব হওয়ায় দেশটির আমদানি ও রফতানি আয় বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত গত সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্পের এই বাণিজ্য যুদ্ধ মার্কিন কৃষকদের জন্যেও বেদনাদায়ক হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম রেইনস বলেন, ট্রাম্পের চীনা পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি একইসঙ্গে আমাদের জন্যে সমান্তরাল ক্ষতি সাধন করে।
পিটারসন ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সের বিশ্লেষক ও হোয়াইট হাউসের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ল্যারি কাডলো বলেন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক চমকারই ছিল। গত আগস্টে চীন চুক্তি অনুসারে অর্ধেক মার্কিন পণ্য আমদানিতে রাজি হয়। কারণ, কোভিড মন্দা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ট্রাম্পের একতরফা শুল্ক বৃদ্ধির বিষয়টি দুদেশের মধ্যেকার চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন অনির্দিষ্টকালের জন্যে স্থগিত হয়ে পড়ে। উইলিয়াম রেইনস বলেন এখানেই ট্রাম্পের ব্যর্থতা সুস্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে। এরপর ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন তথ্য ও প্রযুক্তি চুরির অভিযোগ আনেন এবং পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়। যদিও বেইজিং বরাবরের মতই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা আর স্বাভাবিক পর্যায়ে আরম্ভ হওয়ার মত অবস্থায় নেই বলেন উইলিয়াম রেইনস। অথচ চীনের সঙ্গে বাতচিতের প্রশংসা করে গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশ অতীতের ভুলের অব্যাহতি দিয়ে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ন্যায়, মার্কিন কর্মীদের নিরাপত্তা, কৃষকদের সুরক্ষায় রাজি হয়েছে। কিন্তু এর পরও চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ে ও টিকটকের ব্যবসা নিষিদ্ধ করেন ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প এও বলছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন তার শাসনামলে চীনকে মার্কিন কর্মসংস্থানকে অপহরণের সুযোগ করে দিয়েছেন। বাইডেন জিতলে যুক্তরাষ্ট্র চীন দখল করে নেবে।
কার্যত চীনের অর্থনীতি কোভিড মহামারী সত্ত্বেও গত বছরের তুলনায় এবছর ৪.৯ শতাংশ সম্প্রসারণ হচ্ছে। আইএমএফ বলছে চীনের অর্থনীতি এবছর ১.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছরের প্রথম ৬ মাসে চীনে সরাসরি মার্কিন বিনিয়োগের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ শতাংশ। মার্কিন বিনিয়োগকারীদের টার্গেট করে চীন ৬ বিলিয়ন ডলারের ইন্টারন্যাশনাল বন্ড বিক্রির উদ্যোগ গত এক দশকে প্রথমবারের মতই নিয়েছে। জে পি মরগ্যান এ আভাস দিয়ে বলছে দুটি দেশ ভবিষ্যতে সহযোগিতা হ্রাস, প্রযুক্তি ভাগাভাগিতে সীমাবদ্ধ করা ছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়ত বাণিজ্য বন্ধ করে দেবে। ট্রাম্প যা করতে সমর্থ হয়েছেন তা হচ্ছে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক দরকষাকষিতে আগ্রাসী হওয়া। এরফলে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের দুদেশের সম্পর্ক বিবেচনায় আরো সতর্ক হতে হচ্ছে।