রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
শাল্লায় মামুনুলবিরোধী স্ট্যাটাস নয়, জলমহাল নিয়ে বিরোধের জেরে হিন্দুদের বাড়িতে তাণ্ডব!

শাল্লায় মামুনুলবিরোধী স্ট্যাটাস নয়, জলমহাল নিয়ে বিরোধের জেরে হিন্দুদের বাড়িতে তাণ্ডব!

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম:

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ভিন্নদিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার পর নেপথ্যের ঘটনা বেরিয় আসতে শুরু করেছে। এই তাণ্ডবের পেছনে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ইউপি সদস্য রয়েছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় অনেকের বক্তব্য- হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে মামুনুল হকবিরোধী ফেসবুক স্ট্যাটাসের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং একটি জলমহাল নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই অমানবিক কাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সনাতন ধর্মালম্ভীদের মধ্যে এখনও বিরাজ করছে আতঙ্ক।

মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) হেফাজতের নেতা মাওলানা মামুনুল হককে উদ্দেশ্য করে গ্রামের এক যুবকের দেয়া ফেইসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাঁও-এর ২০-৩০টি ঘরবাড়িতে মামুনুল হকের অনুসারীরা ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন বলে একটি মহলের দাবি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপজেলায় শাল্লার এমন ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ বিভাগসহ সরকারে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ, দেশজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়।

বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। হামলাকারীদের শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি। ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও নিরাপত্তা ও তদন্তের স্বার্থে বাদি ও আসামির নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।

এদিকে, মাওলানা মামুনুল হককে কটূক্তিকারী যুবক নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাশ আপনকে গ্রেফতার করার পরও হিন্দুদের বাড়িতে মামুনুল হকের অনুসারীদের সংঘবদ্ধ হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর নেপথ্যে আরও কি কোনো ঘটনা থাকতে পারে? হামলার নেতৃত্বে বা ইন্দনদাতা কারা? প্রকাশ্যে মাইকিং করে হিন্দুদের বাড়িতে হামলার ঘটনার পেছনে আর কোনো ঘটনা লুকায়িত আছে কি না? এমন অনেক প্রশ্নই এখন জনমনে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে হামলা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ভোক্তভোগীয় স্থানীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নোয়াগাঁও হিন্দুদের ঘরবাড়ি ভাঙচুরে যোগ দিয়েছিলেন নাচনী, চন্ডিপুর, সন্তুষপুর, ধনপুর , খাশিপুরসহ দিরাই শাল্লা উপজেলার কয়েক গ্রামের হাজারো লোকজন।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান, হামলার মূল নেতৃত্বে ছিলেন দিরাই উপজেলার নাচনী গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ও একই গ্রামের ক্ষমতাধর আরেক ব্যক্তি পক্কন মিয়া।

জানা গেছে, নাচনী গ্রামের স্বাধীন মেম্বার স্থানীয় বরাম হাওরের কুচাখাই বিলের ইজারাদার। জলমহাল নিয়ে স্বাধীনের সাথে কিছুদিন ধরে গ্রেফতারকৃত যুবক ঝুমন দাশসহ নোয়াগাঁও-এর কিছু লোকের বিরোধ চলছিলো। জলমহালে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ ও জলমহালের পানি শুকানোর ফলে চাষাবাদে সেচের পানির সংকটের ব্যাপারে নোয়াগাঁও-এর হরিপদ দাশ ও মুক্তিযোদ্ধা জগদীশ দন্দ্র দাস শাল্লা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে স্বাধীন মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৮ জানুয়ারি সরেজমিনে কুচাখাই বিলে গিয়ে অবৈধ সেলাই মেশিনসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ জবদ্ধ করে জলমহালের পানি ছেড়ে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মোক্তাদির হোসেন। এসময় বাঁধের কাটার কাজে নোয়াগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অকিল চন্দ্র দাসের ছেলে অমর চন্দ্র দাস ও পানি ছেড়ে দেয়ার দৃশ্য ফেইসবুকে প্রচার করেন একই গ্রামের ঝুমন দাশ। এই ঘটনায় স্বাধীন মেম্বার নোয়াগাঁও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আছিলেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। ঝুমন দাসের এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে হেফাজতের অনুসারি ও তাঁর নিজস্ব লোকদের দিয়ে বুধবার নোয়াগাঁও গ্রামে ভাঙচুর ও লোটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেন গ্রামের অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। বলা চলে- মামুনুল হকের অনুসারিদের উস্কিয়ে তাদরে সামনে রেখে হিন্দুদের বাড়িতে তাণ্ডব চালান স্বাধীন ও তার অনুসারীরা।

নোয়াগাঁও গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত সৈলেন চন্দ্র দাশ বলেন, স্বাধীন ও পক্কনের নেতৃত্বে আমাদের ঘরবাড়ী ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। তারা আমার ঘরের টাকা-পয়সা ও অলঙ্কার লুট করে নিয়ে গেছে। স্বাধীনের সাথে আমাদের গ্রামবাসী ঝামেলা চলে আসছিলো। সে বরাম হাওরের কুচাখাই বিল সেচতে চায় আমরা গ্রামবাসী বাধা দেই। বিল সেচার কারণে জমিতে পানি দেয়া যায় না। পানির অভাবে জমি ও ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। এই বিষয়ে আমরা ইউএনও সাহেবের কাজে অভিযোগ করেছি আমরা। অভিযোগকারী ছিলেন আমার কাকা হরিপদ দাশ । এই কারণেই হরিপদ বাবুর আত্মীয়-স্বজনের বাড়িঘর বেশি ক্ষতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধা অকিল চন্দ্র দাশ বলেন, আমি ঘরে ছিলাম। আমার ঘরের দরজা ভেঙে সব কিছু তছনছ করে টাকা-পয়সা ও মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটসহ অনেক কিছু নিয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধা বলার পরও তারা আমারে রেহাই দেয়নি। হামলা করেছে শত শত মানুষ। আমি শুধু পক্কন মিয়া ও স্বাধীন মেম্বারকে চিনতে পেরেছে। তিনি স্বাধীন মিয়ার সাথে আমাদের বিরোধ আছিল। ওসি ও ইউএনও সাহেব যখন বাঁধ ভাঙার অনুমতি দিছেন তখন আমার ছেলে অমর চন্দ্র দাশ বাঁধ কাটে। এই কারণেই সে আমার ঘরে বেশি ভাঙচুর। এমন ঘটনার নেতৃত্ব দেয়ায় স্বাধীন মেম্বারের বিচারের দাবি করেন তিনি।

অপরদিকে, ভিডিও ফুটেজ দেখে সনাতন ধর্মালম্বীদের ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার সাথে জড়িত হেফাজতের নেতাকর্মীসহ মূল ইন্দনদাতাদেরকে শনাক্ত করা দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

বৃহস্পতিবার নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে মতবিনিময়কালে ঘটনার সাথে জড়িত শনাক্ত করার পাশাপাশি হামলার ইন্দনদাতাদের খোঁজে বের করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com