বৃটেনের প্রাচীনতম একটি শহর ইপসুইচের শার্বল্যান্ড castle এর মনোরম ও নয়নাভিরাম উদ্যানে গত ১০ অক্টোবর রবিবার দিবারাত্রি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জাতীয় সীরাতুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহা সম্মেলন ২০২১। “জাতীয় সীরাত কনফারেন্স” শিরোনামে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এ কনফারেন্স ইকরা টিভি গ্রুপ ও আল খায়ের ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও চেয়ারম্যান ইমাম কাসিম রশীদ আহমদ এর বিশেষ আমন্ত্রণে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে বৃটেনের বিভিন্ন শহর থেকে সকল স্থরের উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী নেতৃত্ব দানকারী বরেণ্য ব্যক্তিদের দলে দলে যোগদান ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইউকের ইতিহাসে ঈমানী ঐক্য ও ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে বলা যায়।
সকাল দশ ঘটিকা হতে রাত দশ ঘটিকা পর্যন্ত অব্যাহত এ বরকতময় ও জনাকীর্ণ সম্মেলনে কয়েকটি কোচে করে বিভিন্ন শহর থেকে এক যোগে আগমনের ব্যবস্থা থাকায় আনন্দের নতুন মাত্রা যোগ হয় এবং জাতীয় এ সীরাত সম্মেলন টি একপর্যায়ে বড় বড় আলেম উলামার আনন্দ ভ্রমণ ও মিলন মেলায় পরিণত হয়ে যায়।
অনুষ্ঠানের বেশিরভাগ অংশ তিন তিনটি টিভি চ্যানেলে( ইকরা টিভি উর্দু, ইকরা বাংলা টিভি ও ইসলাম টিভিতে) লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থাপনা থাকায় পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত নবীপ্রেমিক অসংখ্য অগণিত দর্শকশ্রোতার দোরগোড়ায় সম্মেলনের বাণী অবলীলায় পৌঁছে যায়, যা তাওহিদী জনতার হৃদয়ে আনন্দের নতুন জোয়ার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। ইমাম কাসিম রশীদ আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সীরাতুন নবী কনফারেন্সে সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট টিভি উপস্থাপক কারী সুলতান আহমদ ও ইকরা টিভির অন্যতম প্রেজেন্টার মাওলানা কারী রাইয়ান মাহমুদ। ইমাম কারী হুযায়ফা শায়খের মনোমুগ্ধকর তিলাওয়াতে কোরআন ও মুফতি আবদুল মুনতাকিমের চমৎকার ও সাহিত্য রসে সিক্ত “না’তে রাসূল” পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় সীরাত কনফারেন্সের শুভসূচনা হয়। এরপর সীরাতের সংজ্ঞা ও পরিচিতি মূলক আলোচনার মাধ্যমে বক্তব্যের ধারাবাহিকতা শুরু হয়, যা রাত অবধি অব্যাহত থাকে। শুভ জন্ম থেকে নিয়ে ইন্তেকাল এবং ব্যক্তিজীবন থেকে আরম্ভ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত নবী জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনায় অংশ নেন অর্ধশতাধিক যোগ্যতায় বলীয়ান প্রতিভাধর উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী চিন্তাবিদগন।
সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির কোঅর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, মাওলানা ফয়েজ আহমদ ও মুফতি আবদুল মুনতাকিম। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন সর্বদলীয় উলামায়ে কেরাম নেতৃবৃন্দ। ঐতিহাসিক এ প্যালেস ও বিশালায়তন জমির বর্তমান মালিক মুহাম্মদ আলী ফার্মার সাহেবের সহযোগিতা সম্মেলনের সফলতার পেছনে স্মরণীয় ভূমিকা পালন করে।
আল খায়ের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইমাম কাসিম রশীদ আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণ কালের এ নৈপুণ্যের স্মারক সীরাত সম্মেলনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সর্বাঙ্গ স্বচ্ছ ও অনিন্দ্য সুন্দর জীবনের বৈচিত্র্যময় সর্বোত্তম আদর্শের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা পেশ করেন বিশ্ব বরেণ্য স্কলার মুফতি ইসমাইল মেনক, (ভিডিও লিংক এর মাধ্যমে) ব্রিটেনের স্বনামধন্য স্কলার শায়খ রিয়াদুল হক, ব্রিটেনের শির্ষ মুরব্বি আলেম শায়েখ মুফতি আবদুল হান্নান, ডঃ শায়েখ রামজী, মাওলানা শায়েখ তরিকুল্লাহ, শায়খুল হাদীস মুফতি আবদুর রহমান মনোহরপূরী, মুফতি আব্দুল কাদির বরকতুল্লাহ, হযরত মাওলানা এখলাছুর রহমান, মাওলানা শুয়াইব আহমদ, মাওলানা ফরিদ আহমদ খান, মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল কাদির সালেহ, শায়েখ মাওলানা রেজাউল হক, মাওলানা ছাদিকুর রহমান, মাওলানা মুফতি আবদুল মুনতাকিম, মাওলানা শায়েখ ফয়েজ আহমদ, ব্যারিষ্টার আহমদ তমসন, শায়েখ আব্দুর রহমান মাদানী, ডঃ শায়েখ আবুল কালাম আজাদ, শায়েখ মাওলানা আব্দুর রব (সারে), শায়েখ মাওলানা ইমদাদুর রহমান আল মাদানী, শায়েখ মাহমুদুল হাসান, মাওলানা ইমদাদুল হাসান নূমানী, মাওলানা মুনাওয়ার মাহমূদী, মাওলানা আব্দুর রব ফয়েজী, মাওলানা সৈয়দ মুশররফ আলী, হাফিজ মাওলানা ইকবাল হুসাইন, মুফতি তাজুল ইসলাম, আলহাজ্ব মাওলানা আতাউর রহমান, মুফতি মওসুফ আহমদ, মাওলানা শাহ মিজানুল হক, মাওলানা সৈয়দ তামিম আহমদ, মুফতি সালেহ আহমদ, মাওলানা এনামুল হাসান ছাবির, মাওলানা মামনূন মহি উদ্দিন, মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ, হাফিজ হুসাইন আহমদ বিশ্বনাথী, হাফিজ মাওলানা আব্দুল কাদির, মাওলানা শাহনুর মিয়া, মাওলানা ইউসুফ সালেহ, হাফিজ মাওলানা এনামুল হক, মাওলানা শাহ হালিম উদ্দিন নুরী, আ ফ ম শুয়াইব, মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম আল মাদানী, মাওলানা মাহফুজ আহমদ, মাওলানা আব্দুল বাসীত, মাওলানা আনিছ রহমান, মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ, মাওলানা আখতারুজ্জামাম, মুফতি জয়নাল আহমদ, মাওলানা আল আমিন, মুফতি শাহ হামজা প্রমুখ৷ কোরআনে কারীম থেকে তেলাওয়াত করেন শায়েখ কাজী আশীকুর রহমান ও মাওলানা মুদ্দাসসির আনওয়ার।
সম্মেলনে প্রথিতযশা উলামায়ে কেরাম ও যুগ সচেতন ইসলামী স্কলারগন তাঁদের সুচিন্তিত বক্তব্যে মহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র সীরাত ও মহান জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন সমগ্র পৃথিবী যখন ঘাের অমানিশায় আচ্ছন্ন ছিল, চারদিকে অন্ধকারের কালাে থাবা ছিল বিস্তৃত, অন্যায়-উৎপীড়ন, অনিয়ম- অবিচার, জুলুম-অত্যাচারের জাঁতাকলে পিষ্ট ছিল সমাজ জীবন। কোথাও কোনাে নিয়ম নীতির বালাই ছিলনা, বাহুবল ও পেশিশক্তি কে যখন শেষ কথা মনে করা হত, ক্ষমতার জোর ও প্রতিপত্তির দণ্ডের কাছে যখন ডুকরে কেঁদে উঠতো মানবতা, অধিকারহারা মানুষের চাপা আর্তনাদ বাতাসে মিলিয়ে গিয়ে ছিলো, বঞ্চিত ও শােষিত শ্রেণির অস্ফুট স্বর শােষকের গর্জনের কাছে ক্ষীণ হয়ে এসেছিল, মরুচারী বেদুইনরাও হয়ে গিয়েছিল মরুভূমির মতােই; ফাপা, অন্তঃসারশূন্য আর কঠোর। মরুচারী বেদুইনরা ছিল স্বেচ্ছাচারী, উন্মাদ। বেপরােয়া বল্গাহীন ছিলো তাদের জীবনধারা। কথায় কথায় নাঙ্গা তলােয়ার হাতে দাঁড়িয়ে যাওয়া কিংবা সামান্য বিষয় নিয়ে প্রতিপক্ষের মস্তক উঁড়িয়ে দেওয়া ছিল খুবই সাধারণ ঘটনা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বয়ে বেড়াত যুদ্ধ-হানাহানির অভিশাপ। এমন এক আত্মঘাতী জীবনাচারে জর্জরিত ধূলির ধরায় যখন আল্লাহর দয়ার প্রস্রবণ নেমে আসে, তখন আমীনার ঘরে এক চাঁদের টুকরো’ র জন্ম হয়, রাহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে আবির্ভাব হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের, তখন মরুভূমিতে প্রাণ ফিরে আসে, উষর রুক্ষ পৃথিবী সুফলা হয়ে ওঠে। যে-ই তাঁকে দেখে, তাঁর মায়াময় চেহারার মায়ায় পড়ে। তার কোমল আচরণের, অনুপম গুণাবলির প্রেমে মাতােয়ারা হয়ে যায়।