আফগানিস্তানের তালেবান সরকার হিরমান্দ বা হেলমান্দ নদীর উপর নির্মিত কামাল খান বাধের মুখ খুলে দিয়েছে এবং দুই দশক পর প্রতিবেশী ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এই নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে। এখন পানি হিরমান্দ নদী দিয়ে ইরানের হামূন হ্রদ ও জলাভূমির দিকে প্রবাহিত হচ্ছে যা প্রায় ২০ বছর ধরে খরা ও পানির অভাবে শুষ্ক এবং মরুভূমিতে হয়েছিল। আর বাঁধ খোলার ৭২ ঘন্টা পরে পানি হামূন হ্রদ ও জলাভূমিতে এসে পৌঁছবে। ১৯৭৩ সালে ইরানের সাথে আফগানিস্তানের হেলমান্দ-হামূন হ্রদ ও জলাশয় অঞ্চলের পানি বন্টনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এ চুক্তি মোতাবেক বছরে ৮০ কোটি ঘনমিটার পানি ইরানের পাওয়ার কথা।
কিন্তু আফগানিস্তানে মার্কিন দখলদারিত্বের পর দেশটির নতজানু সরকারগুলো ওয়াশিংটনের ষড়যন্ত্রে ইরানের ন্যায্য হিস্যা দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং কামাল খান বাধের মুখ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশ মারাত্মকভাবে পানি সংকটের মুখে পড়ে এবং হামুন হ্রদ শুকিয়ে অনেকটা মরুভূমিতে পরিণত হয়। এমনকি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনী একবার চুক্তি বহির্ভূত তেলের বিনিময়ে পানি সরবরাহের উদ্ভট আব্দার তুলেছিল এবং অদ্ভুত প্রস্তাবও দিয়েছিল।
যাইহোক ইরান সরকার আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। এ পানি ছাড়ার আগে ইরান তালেবান সরকারের সাথে হেলমান্দ-হামূন হ্রদ ও জলাভূমির প্রাপ্য পানির হিস্যা নিয়ে কয়েক দফা আলোচনাও করেছে। সিস্তান বালুচিস্তান প্রদেশের গভর্নর হোসেইন মোদাররেস খিয়াবানি জানিয়েছেন, কামাল খান বাঁধের পানি ইরানকে লক্ষ্য করেই ছাড়া হয়েছে এবং এ ব্যাপারে আফগানিস্তানে নিযুক্ত ইরানি প্রেসিডেন্টের বিশেষ প্রতিনিধি, ইরানের জ্বালানি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আফগানিস্তানের স্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার পর এই বাধ খোলা হয়েছে।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত জ্বালানি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ মানসুর বলেছিলেন, কামাল খান বাঁধের পানি আফগানিস্তানের নিমরুজ প্রদেশের কৃষকদের অনুরোধে ছাড়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিতাড়িত ও বের করা গেলে এবং এ সব অঞ্চলের দেশ, জাতি ও সরকারগুলোর ওপর পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের অশুভ নেতিবাচক সাম্রাজ্যবাদী প্রভাব খর্ব করা গেলে বহু আঞ্চলিক সমস্যা, সংকট ও বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার পরিবেশ গোড়ে তোলা সম্ভব।
ইরান গত পাঁচ মাস ধরে আফগানিস্তানে প্রয়োজনীয় খাদ্য, রসদপত্র, ওষুধ, জ্বালানি তেল ও কাঠ সরবরাহ অব্যাহত রেখে ভ্রাতৃপ্রতিম আফগান জনগণের ঘোর দুর্দিনে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আর নি:সন্দেহে এ ধরণের উদ্যোগ ও পদক্ষেপ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও কল্যাণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: পার্সটুডে