সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০০ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বৃহত্তর সিলেটেসহ সুনামগঞ্জের দিরাইয়েও ব্যাপক পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন অবকাঠামোগত ক্ষতিসহ নানা ধরণের ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় পৌণে ৫শত কোটি টাকা। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি তার চেয়েও বহুগুণ বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। দিরাই উপজেলা প্রশাসন, এলজিইডি, মৎস্য ও বিদ্যুৎ বিভাগসহ বিভিন্ন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এ ধরণা পাওয়া গেছে।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও পিআইও অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় ১৭ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত ‘লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ প্রতিবেদন’-এ ৪৭৪ কোটি ৮৭ লাখ ৪৭ হাজার ১৩ টাকা উল্লেখ করা হয়। সূত্র মতে, দিরাই উপজেলা এলজিইডি অফিসের আওতায় রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগত ক্ষতি নিরুপন করা হয়েছে ১৬৩ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা, মৎস্য খাতে ক্ষতি ১০৩ কোটি টাকা, পিডিবির ক্ষতি প্রায় ৬০ লাখ টাকা ও পল্লীবিদ্যুৎ খাতে ক্ষতি প্রায় ১৭ লাখ টাকা।
সূত্র মতে, দিরাই উপজেলা এলজিইডির আওতায় ৮৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার রাস্তা ভেঙ্গে পড়েছে। যার ফলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪৭ দশমিক ২২ কোটি টাকা। এছাড়া ব্রিজ/কালভার্টের এপ্রোচ ১ দশমিক ২ কিলোমিটার, ক্ষতির পরিমাণ ৩ দশমিক ৫ কোটি টাকা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ও ফ্লোর ধসে যাওয়ার সংখ্যা ৫৮টি, ক্ষতির পরিমাণ ২ দশমিক ৯ কোটি টাকা। বিভিন্ন বাজারে নির্মিত মার্কেটের ড্রেন ভেঙ্গে যাওয়া, সিসি, এপ্রোচ ও সেফটি টেংকি ভেঙ্গেছে ৪টি, ক্ষতির পরিমাণ ১ দশমিক ৫ কোটি টাকা। মার্কেট প্রটেকশন দেয়াল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১ হাজার ১৫০ মিটার, ক্ষতির পরিমাণ ৭২ লাখ টাকা। গ্রামভিত্তিক দেয়াল ৫ হাজার ৫৩০ মিটার, ক্ষতির পরিমাণ ৩ দশমিক ৪ কোটি টাকা। বিভিন্ন খাসপুকুর ১৫টি, ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি টাকা। সবজি বাগান নষ্ট হয়েছে ১২টি, ক্ষতির পরিমাণ ১ দশমিক ৫ কোটি টাকা।
অন্যদিকে দিরাই পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছরের ভয়াবহ বন্যায় অফিসিয়াল আসবাবপত্র, ট্রান্সফরমার ও লাইন সংক্রান্ত প্রায় ১৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান দিরাই সাব-জোনাল অফিসের এজিএম মোঃ নূরুল ইসলাম। তাছাড়া লাইন পড়ে যাওয়া, ট্রান্সফরমার বিকল হওয়াসহ দিরাই পিডিবির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকার বলে জানান আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ রুবেল রানা।
শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় দিরাইয়ে যে কয়টি বিভাগে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মৎস্য খাত। দিরাই উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১ হাজার ১৭২টি পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। ২০৭ হেক্টর জমির এসব পুকুরের মাছ ভেসে গেছে ৩ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮৩ কোটি টাকা। এছাড়া ৩ কোটি বিভিন্ন জাতের পোনার মূল্য ১৫ কোটি টাকা, বিভিন্ন অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকার।
তবে এবারের ভয়াবহ বন্যায় প্রকৃত অর্থে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরুপণ করা সত্যিই কঠিন বলে মনে করেন সচেতন মহলের লোকজন। সরকারিভাবে যে পরিমাণ দেখানো হয়েছে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও তারা মনে করেন।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন এ প্রতিবেদককে জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দিরাইয়ে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সূত্র ও মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। আশা করছি, সরকার এই জনপদের মানুষের কল্যাণে দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে কিছুটা হলে ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সচেষ্ট হবেন।