লন্ডনে ইউকে জমিয়তের জনাকীর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃবৃন্দের ঘোষণা
মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি গাজা ফিলিস্তিনের মজলুম গণমানুষের মুক্তির সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিরাট প্রতিবাদ সভা। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের উদ্যোগে আয়োজিত জনাকীর্ণ এ প্রতিবাদ সভায় দল মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। ইউকে জমিয়তের সভাপতি ডক্টর মাওলানা শুয়াইব আহমদ এর সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা হাফিজ মাসরুরুল হক। বিশেষ অতিথির আলোচনা পেশ করেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা আবদুল কাদির সালেহ। বিশেষ বক্তা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন ইউকে জমিয়তের সিনিয়র সহ-সভাপতি বিশিষ্ট মিডিয়া ভাষ্যকার মুফতি আবদুল মুনতাকিম, কমিউনিটি নেতা কে,এম আবু তাহের চৌধুরী, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা ইমদাদুর রাহমান আলমাদানী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শায়খ ফয়েজ আহমদ, ফিলিস্তিনীদের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর, সাবেক এমপি পদপ্রার্থী আজমল মাসরুর, ইউকে জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ, ইউকে জমিয়তের সহসভাপতি হাফিজ হুসাইন আহমদ বিশ্বনাথী ও বিশিষ্ট সাংবাদিক সাঈদ চৌধুরী প্রমুখ।
সভায় অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ও বলিষ্ঠ কন্ঠে বক্তাগন তাঁদের আলোচনায় বলেন গাজা ফিলিস্তিনের মজলুম গণমানুষের উপর পরিচালিত নৃশংস গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী পাশবিকতা ঈমানের উত্থাপ সমৃদ্ধ মুসলিম জনতা কোন দিন ভুলতে পারবেনা। সাম্রাজ্যবাদের যোগসাজশে চরমপন্থী ইহুদিবাদী শক্তি যেভাবে জাতিগত মুসলিম নির্মূলাভিযান অব্যাহত রেখে চলেছে, এর যথাযথ প্রতিকারের উপায় অবলম্বন তাৎক্ষণিক ভাবে সমগ্র মানবজাতির আবশ্যিক দায়িত্ব। শতাব্দীর সবচেয়ে বীভৎস এ গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলীকরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন না করলে মুসলিম ও মুমিন হিসেবে আমরা কোন ভাবেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে হাজিরা দেয়ার সাহস করতে পারিনা। আজ গাজা ফিলিস্তিনে মজলুম দের জিগর ফাঁটা আর্তনাদ, অপর দিকে নরপশুদের হিংস্র উল্লাস কে মানবতার জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম কলঙ্ক আখ্যায়িত করতে হবে। সকল আদীমতা আজ হার মেনেছে বর্তমান নির্মমতার কাছে। আজ ক্ষতবিক্ষত, ছিন্নভিন্ন ও অগ্নিদগ্ধ গাজা ফিলিস্তিনের ভয়াল বিনাশ যজ্ঞের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভাবে ঐক্যবদ্ধ কার্যকর প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখা সকল মুসলিমের উপর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ফরজ দায়িত্ব। কোন উপনিবেশ রাষ্ট্র আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ পেতে পারেনা। ই সরাইল যেহেতু একটি ভয়ঙ্কর কলোনি ষ্টেট। অবৈধ দখলদারিত্ব ও অন্যায় উচ্ছেদাভিযানই তার মূল ভিত্তি এবং মৌলনীতি, অপরদিকে সাম্রাজ্যবাদের বলয় ও যোগসাজশে তার টিকে থাকা। এদিকে সমগ্র মানবজাতির অবস্থা এই একটি মাত্র উপনিবেশ রাষ্ট্রের কারণে আজ মারাত্মক বিপন্ন।এজন্য এই বিষ দাঁতের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বের করা সময়ের অপরিহার্য প্রয়োজন। এমতাবস্থায় সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী হয়ে আরব দেশ গুলো আজ, ই সরাইলের মতো একটি বিষফোঁড়া লালন পালনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এজন্য ই সরাইলি গণহত্যার ভয়াল বিনাশ যজ্ঞের অপরাধে সমান তালে আরব দেশ গুলো আজ বলতে হবে শরীক রয়েছে।
প্রতিবাদ সভায় আরো বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় জমিয়তের নির্বাহী সদস্য ও ইউকে জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা আশফাকুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখার সেক্রেটারি মুফতি সালেহ আহমদ, খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখার জয়েন্ট সেক্রেটারী মাওলানা আব্দুল করিম মামরখানী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শামসুল আলম কিয়ামপুরী, আল্লামা হবিগঞ্জী রহমাতুল্লাহি আলাইহির জামাতা মাওলানা মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, মুফতি শাহিদুর রহমান মাহমুদাবাদী,বিশিষ্ট আইনজীবী জনাব লিয়াকত সরকার,কবি আবু সুফিয়ান চৌধুরী,জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের ট্রেজারার হাফিজ রশিদ আহমদ, ইউকে জমিয়তের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মইন উদ্দিন খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে লন্ডন মহানগর শাখার সেক্রেটারি মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ,ইউকে জমিয়তের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ মাওলানা নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী।
প্রতিবাদ সভায় বক্তা গন বলেন, আজ প্রতিটি এলাকায়, দেশে দেশে এমনকি বিশ্বের সর্বত্র প্রতিবাদ- সংগ্রামের ঝড় তুলে মুসলিম সরকার গুলোকে গণহত্যা রোধের উপায় অবলম্বনের জন্য সফল ভূমিকা পালনে বাধ্য করতে হবে। স্বাধীন ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠারজন্য আন্তর্জাতিক জনমত কে সোচ্চার হতে উদ্ভোদ্ধ করতে হবে। গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে। পূর্ব জেরুজালেম কে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সহ সর্বাত্মক সাহায্য নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে এক ঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে। জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় অগ্রাসনের বিরুদ্ধে ও,আই,সি ও মুসলিম রাষ্ট্র গুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ যেহেতু গাজা ফিলিস্তিনের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে, এজন্য ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে। ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে সরকারের সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে। পাঠ্য বই ওশিক্ষানীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সর্বস্তরের মুসলমানদেরকে ইসরাইলের সহযোগী সকল প্রকার পন্যের স্বতঃস্ফূর্ত বয়কটের অঙ্গীকার করতে হবে।
প্রতিবাদ সমাবেশে প্রস্তাবাবলী পাঠ করে শোনান মুফতি আবদুল মুনতাকিম ও মজলুম ফিলিস্তিনীদের জন্য সম্মিলিত মোনাজাত পরিচালনা করেন প্রধান অতিথি মাওলানা হাফিজ মাসরুরুল হক।