জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে টাওয়ার হামলেট শাখার আয়োজনে এক গুরুত্বপূর্ণ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত ১ অক্টোবর বুধবার ইস্ট লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত বৈঠকের আলোচনার মূল বিষয় ছিল— “ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনে আমাদের করণীয়।”
বৈঠকে নেতৃবৃন্দ বলেন, সমাজে, পরিবারে এবং রাষ্ট্রে ইনসাফ অনুপস্থিত থাকার কারণেই আজ সর্বত্র অশান্তি, বিশৃঙ্খলা এবং অব্যবস্থা বিরাজ করছে। মানুষের মধ্যে আস্থা নষ্ট হচ্ছে, পরিবার ভেঙে পড়ছে এবং সমাজে অবিচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা জোর দিয়ে বলেন, যদি আমরা নিজেদের জীবন ও কর্মক্ষেত্রে, এবং আমাদের তত্ত্বাবধানে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হই, তবে সমাজে অগ্রগতির নতুন পথ উন্মোচিত হবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআনে সুস্পষ্টভাবে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য— আজ বিশ্বব্যাপী সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে। দেশে দেশে ইনসাফকে ধ্বংস করা হচ্ছে, ন্যায়বিচারকে হত্যা করা হচ্ছে। যুদ্ধের নামে কোটি কোটি নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, মানুষকে ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, নিপীড়নের শিকার করা হচ্ছে। এটি দিনের সূর্যের মতোই স্পষ্ট বাস্তবতা।
বক্তারা বলেন, ইনসাফ প্রতিষ্ঠার সূচনা করতে হবে নিজ নিজ জীবন থেকে। আমরা নিজেদের ওপর কি ইনসাফ করছি? পরিবারে কি ইনসাফ করতে পারছি? আমাদের প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে কি ইনসাফ কায়েম হচ্ছে? ব্যবসা-বাণিজ্যে কি আমরা ন্যায়নীতি অনুসরণ করছি? সমাজের যে অবস্থানে আমরা রয়েছি, সেখানে কি আমরা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারছি? এসব প্রশ্নের জবাব আমাদের ভেতর থেকে খুঁজে বের করতে হবে।
তারা বলেন, আল্লাহর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার গুরুত্ব আজ আমরা ভুলে গেছি। এ কারণেই সমাজ, কমিউনিটি এবং রাষ্ট্রে ইনসাফ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আমাদের প্রত্যেককে আরও সতর্ক হতে হবে। অন্যকে উপদেশ দেওয়ার আগে নিজেদের জীবনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজের গণ্ডির ভেতর ইনসাফের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
নেতৃবৃন্দ জোর দিয়ে বলেন, ইসলাম আমাদেরকে ইনসাফ ও ইহসানের শিক্ষা দিয়েছে। আমরা যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নির্দেশ অনুযায়ী ইনসাফ ও ইহসানের ওপর আমল করি, তবে সমাজে, রাষ্ট্রে এবং গোটা বিশ্বে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। আজ আমরা সবাই খেলাফতে রাশেদার আলো দেখতে চাই। কিন্তু যদি আমরা জুলুম চালিয়ে যাই, একে অপরের প্রতি অবিচার করতে থাকি, তবে সেই আলো সমাজে ছড়াবে না। খেলাফতে রাশেদার আদর্শ কেবল কথায় নয়, বরং বাস্তবে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে টাওয়ার হামলেট শাখার সভাপতি হাফেজ মাওলানা মোঃ ইলিয়াসের সভাপতিত্বে এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে টাওয়ার হামলেট শাখার সেক্রেটারি মাওলানা নাজমুল হাসানের সার্বিক পরিচালনায় “ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনে আমাদের করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনা পেশ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব ডক্টর মাওলানা শোয়াইব আহমদ। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারি মুফতি আব্দুল মুনতাকিম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউকে জমিয়তের সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় জমিয়তের সহকারী আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হাফিজ মাওলানা সৈয়দ তামিম আহমদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সহ-সভাপতি হাফিজ হোসাইন আহমদ বিশ্বনাথী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম লন্ডন মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা আশফাকুর রহমান। বিশেষ বক্তা হিসেবে আলোচনা করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামা ইসলাম ইউকের ট্রেজারার হাফিজ রশিদ আহমদ, জমিয়তে উলামা ইসলাম ইউকের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মইনুদ্দিন খান, লন্ডন মহানগর জমিয়তের সেক্রেটারী মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে নিউহাম শাখার সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল গফফার, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে হেকনি শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সানোয়ার আহমেদ,লন্ডন মহানগর জমিয়তের সহ-প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাবের হোসাইন চৌধুরী এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার ট্রেজারার সাদিকুল হক।