রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১২ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : নভেম্বর মাসে সারাদেশে গণগ্রেফতার, নারী নির্যাতন, খুন ধর্ষণের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে গণগ্রেফতার শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৯শ’ ৩৫ জনেরও বেশী রাজনৈতিক নেতাকর্মী। আর নারী নির্যাতনের ঘটনায় যৌতুকের জন্য নিহত হয়েছেন ১৮ জন নারী। অথচ বছরের প্রথম ৮ মাসে ৩০ জন নারী নিহত হয়েছেন। এসব অপরাধ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা’। সংস্থাটি আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানায়, গত নভেম্বর মাসের শুরুতে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক দীপন। আর বিভিন্ন খুনের ঘটনাসহ পুরো মাস জুড়েই দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত ও আহত হয়েছেন সাধারণ মানুষ। আর দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।
মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা জানায়, আশঙ্কাজনকহারে নারী নির্যাতন, যৌতুকের জন্য হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, শিশু হত্যার মতো জঘন্য অপরাধগুলো অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আবার গৃহকর্মী নির্যাতন, খুন, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সহিংসতা, অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার ও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কর্তৃক নিরীহ মানুষ হত্যা ঘটনাও বেড়েছে। দেশের সামাজিক অবক্ষয়ের সঙ্গে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে চরমভাবে। গত মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় নিহত, আহতসহ নানাভাবে ৫ হাজার ১শ’ ৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাছাড়া যৌতুকের জন্য ১৮ জন নারী নিহত হয়েছেন। অথচ বছরের প্রথম ৮ মাসে ৩০ জন নারী নিহত হয়েছেন। গত নভেম্বর মাসে বেশ কয়েকটি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা অলোচিত হয়েছে। তার মধ্যে গাজীপুরের টঙ্গীতে স্বামী জুয়েল ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে চোখ তুলে নেয় স্ত্রী শিউলির। যৌতুক না দেওয়ায় কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারা হয় নাসিমা নামের আরেক গৃহবধূকে।
তাছাড়া, পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী হত্যা, পাবনায় আট মাসের ছেলে ও স্ত্রীকে হত্যার মতো বেশ কিছু ঘটনা সংগঠিত হয় এই মাসে। গত মাসে কথিত ক্রসফায়ারের নামে ৯ জন নিহত হয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ২জন। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৩ জন নারী ও ৭ জন শিশু, আত্মহত্যা করেছে ৭ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারী, গণপিটুনীতে নিহত হয়েছে ১০ জন, সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত ৬৮ জন। এছাড়া, সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি, অদক্ষ চালক, পরিবহন ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ১৩৪ জন মারা গেছেন। বিচার ব্যবস্থার অবনতি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এই সবকিছু মিলেই দেশের জনসাধারণের মানসিক ও মানবিক চিন্তা চেতনার অবক্ষয়ের কারণে বেড়ে গেছে সামাজিক অসন্তোষ। আর এই সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ২৮ জন এবং আহত হয়েছেন ২শ’ ৫৪ জন। আবার রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত হয়েছেন ৯৯ জন ও নিহত হয়েছে ৪ জন। আর পানিতে ডুবে, অসাবধানবসত, বিদ্যুৎপৃষ্টে ১৫ ব্যক্তি মারা গেছেন। প্রতি মাসের মতো নভেম্বর মাসেও চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৫ জনের।
সংস্থাটি জানায়, দেশের চলছে চরম রাজনৈতিক অরাজগতা, চলতি মাসে রাজনৈতিক কারণে গণগ্রেফতার হয়েছেন ২৯৩৫ জনেরও বেশী নেতাকর্মী। এ অবস্থার মধ্যেও সরকারের কিছু কিছু গৃহীত পদক্ষেপ জনমনে স্বস্তি এনেছে। শিশু রাজন, রাকিব, সাঈদ ও সুমন হত্যাসহ বেশ কিছু হত্যার দ্রুত বিচার হওয়ায় কিছুটা হলেও আইনের প্রতি জনগণের বিশ্বাস ফিরে এসেছে।