বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
দিরাইয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের টিমের পরিদর্শন

দিরাইয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের টিমের পরিদর্শন

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: স্বাধিনতা যুদ্ধের সময় সংগঠিত হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণ তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের টিম আবারো দিরাইয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই মামলাকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতেই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তদন্ত চলছে বলে জানান তদন্ত টিমের প্রধান কর্মকর্তা এএসপি মোঃ নূর হোসেন (বিপিএম)। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি আরো বলেন, ৬ সদস্যের তদন্ত দল গণহত্যার পরিদর্শন, ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে আলোচনা করেছি এবং এ বিষয়ে আরো যাচাই-বাচাইয়ের প্রয়োজন থাকায় রিপোর্ট জমা দিতে সময় লাগবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত পেরুয়া-শ্যামারচর হত্যাযজ্ঞে জড়িত অপরাধিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২১ অক্টোবর শুক্রবার তৃতীয়বারের মত ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ নূর হোসেনের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের তদন্তদল ঘটনাস্থল উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের পেরুয়া-শ্যামারচর এলাকায় যান। তদন্ত কাজে ২৩ অক্টোবর রোববার পর্যন্ত এই তদন্ত দল দিরাই অবস্থান করে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায় এর আগে ২০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে দিরাই শহরে পৌঁছার পর তদন্ত সংস্থার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি মো. নূর হোসেন (বিপিএম) সর্বপ্রথম দিরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আতাউর রহমান, সাংগঠনিক কমান্ডার করুনা সিন্ধু দাস ও উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা কানাইলাল দাসের সাথে এই গণহত্যার বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তার সামনে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আতাউর রহমান একাধিক রাজাকারের ব্যাপারে ও গণহত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।
এর আগে এই এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন এই তদন্তকারী দল। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগি দোসর বাঙালি দালাল রাজাকারেরা যে কয়েকটি বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করেছিল, এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দিরাই উপজেলার পেরুয়া-শ্যামারচর হত্যাযজ্ঞ। এখানে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর দেড় থেকে দুইশত মেয়েকে ধর্ষণ ও ৬০ থেকে ৭০ জন নিরীহ বাঙালি গণহত্যার শিকার হন, কয়েকশ’ ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এই এলাকার দুইজন বীরাঙ্গণা এখনো জীবিত রয়েছেন বলে দাবি করছেন স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।
এই ধ্বংসযজ্ঞে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবার হিসাবে পরিচিত ‘পেরুয়া বড়বাড়ি’। সে সময় পেরুয়া বড়বাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেওয়া হয়েছিল। এই বাড়ির হেমচন্দ্র রায় ও চিত্তরঞ্জন রায় গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন। এই গণহত্যা ও পৈশাচিক নির্যাতনের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষি কয়েকজন এখনো জীবিত রয়েছেন। কিন্তু পাক হায়েনাদের দোসরেরা এখনো জীবিত ও প্রভাবশালী হওয়ায় মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না তারা। কেউ কেউ স্বাধিনতা পরবর্তী সময়ে বর্তমান সরকারি দল আওয়ামীলীগের সঙ্গেও যুক্ত হয়ে যাওয়ায় তাদের প্রভাব পাকিস্তান সময়কালের মতো এখনো রয়েছে। চাপের মুখে অনেকে সত্য গোপন করে রয়েছেন।
জানা যায়, দিরাই থানায় ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও হাসপাতালে ছিল রাজাকারদের ক্যাম্প। এখান থেকেই রাজাকাররা পাকিস্তানি হানাদারদের নিয়ে নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার চালাতো।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আতাউর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে একটানা ৭২ ঘণ্টা যুদ্ধ করেছি, ৬ ডিসেম্বর শ্যামারচর-পেরুয়া হত্যাকাণ্ডের সময় দিরাই থেকে কুখ্যাত রাজাকার সুনুর মেম্বারের নেতৃত্বে একদল রাজাকার সেখানে গিয়েছিল, সুনুর রাজাকার নিজেকে বাঁচাতে এখন আওয়ামীলীগ করছে, ১৯৭২ সালে দালাল আইনে মামলা হয়েছিল, রজনীকান্ত ও আমি রাজাকারদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম, রাজাকারদের তালিকা করা হয়েছে, গ্রামভিত্তিক রাজাকারের তালিকা তৈরি করতে ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত পেরুয়া-শ্যামারচর হত্যাযজ্ঞসহ সকল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত যুদ্ধাপরাধিদের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজে সঠিক তথ্য দিয়ে তদন্ত সংস্থাকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ নূর হোসেন বলেন, ‘শ্যামারচর-পেরুয়া গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশের মুক্তিকামী মানুষকে যারা নির্বচারে হত্যা করেছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হলে স্বচ্ছ তদন্ত দাঁড় করতে হবে। প্রয়োজনে সত্য গোপন কারিদের মুখোমুখি করা হবে। দিরাই ও শাল্লা থানা পুলিশের সহযোগিতায় আমরা তদন্ত শুরু করেছি, এর আগেও আমরা এসেছি, ইতিমধ্যে আমরা এখানকার দৌলতপুর, পেরুয়া ও উজানগাঁওয়ের শতাধিক প্রত্যক্ষদর্শীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলেছি, তারা প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে সহায়তা করছেন আমাদের। জিজ্ঞাসাবাদে গণহত্যা, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণের স্বাক্ষী প্রমাণ মিলেছে। তিনি জানান, পাক হায়েনাদের সহায়তাকারী ১০-১২ জনের নাম পরিচয় ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষীরা বলেছেন, আরো অনেক রাজাকারের নাম আসছে, যাচাই শেষে ট্রাইব্যুনালে রিপোর্ট জমা দেবেন তারা। তদন্তের স্বার্থে যুদ্ধাপরাধিদের নাম পরিচয় এখন প্রকাশ করা হবেনা বলে জানান তদন্ত সংস্থার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি মো. নূর হোসেন (বিপিএম)।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com