শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১০ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: দিরাইয়ে পৃথক দু’টি অপহরণের ঘটনায় র্যাব ও পুলিশের পৃথক অভিযানে অপহৃতদের উদ্ধার ও অপহরণ চক্রের ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে দিরাই থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দিরাই থানা পুলিশ ও মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের সোয়াতির গ্রামের মৃত সৈয়দ উল্লাহর ছেলে মোঃ আমির হোসেন (৪০) গত ২০ জানুয়ারি ভোরে বাড়ি থেকে হাওরে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হন। ২৮ জানুয়ারি আমির হোসেনের নাম্বারে তার ভাতিজা আলী হায়দার ফোন দিলে অপরিচিত একজন ফোন ধরে তার চাচাকে ফেরত পেতে হলে ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরদিন আলী হায়দার দিরাই থানায় তার চাচা হারানোর ঘটনায় সাধারণ ডায়রী এবং সুনামগঞ্জ র্যাব ক্যাম্পে গিয়ে কোম্পানী অধিনায়ক বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেন। ৩১ জানুয়ারি র্যাবের পরামর্শানুযায়ী অপহরণকারীদের দেয়া বিকাশ নাম্বারে ৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। বিকাশের টাকা উত্তোলনের সময় জগন্নাথপুর উপজেলার রসুলগঞ্জ বাজারের পার্শ্বস্থ মকরমপুর সুপার মার্কেটের ইউসুফ টেলিকম থেকে অপহরণকারী ডিগারকুল গ্রামের মোঃ পারিফ মিয়ার ছেলে সহোদর হাবিবুর রহমান (২৭) ও মোঃ আবু তাহেরকে (৪০) আটক ও অপহৃত আমির হোসেনকে উদ্ধার করে বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে নিয়মিত মামলা দিয়ে দিরাই থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীরা জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় এসব অপহরণ কার্যক্রম পরিচালনাসহ মুক্তিপণ আদায় করে সাধারণ জনগণের সাথে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। অপহৃত আমির হোসেনের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, গত ২০ জানুয়ারি ভোরে জমিতে পানি সেচ দিতে যাওয়ার সময় অপরিচিত ৬/৭ জন লোক আমির হোসেনকে মুখ চেপে ধরে চোখে কাপড় বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে তোলে। মাইক্রোবাসে তোলার পর তাকে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন করে মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণকারীরা ভিকটিমের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তার পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের চিৎকার শুনিয়ে ও মুক্তিপণ দাবি করত।
অপরদিকে গত ২৫ জানুয়ারি একই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের তলবাউসি গ্রামের আজিজুর রহমানের কিশোরী মেয়ে আখি মনিকে (১৫) অপহরণ করে একই গ্রামের লাল মাহমুদের বিবাহিত ছেলে রাজন মিয়া, খেলন মিয়া ও প্রদীপ মিয়া। ঐদিন রাতে আখি মনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হলে তাকে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। গ্রাম্য পঞ্চায়েতের মাধ্যমে অপহৃত উদ্ধারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ১ ফেব্র“য়ারি আখি মনির বাবা বাদী হয়ে দিরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করলে রাতেই অভিযান চালিয়ে তলবাউসী গ্রামের খেলন মিয়ার বাড়ি থেকে আখি মনিকে উদ্ধার ও অপহরণকারী রাজন মিয়াকে গ্রেফতার করে।
দিরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুল জলিল জানান, জগন্নাথপুরের রসুলপুর বাজারের পার্শ্ববর্তী মকরমপুর সুপার মার্কেট থেকে র্যাবের অভিযানে আমির হোসেনকে উদ্ধার ও আসামীদেরকে আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর তলবাউসী গ্রামের ঘটনায় আমাকে জানানোর পরই অভিযান চালিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার ও আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য উদ্ধারকৃতদের কোর্টে ও আসামীদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। দুটি ঘটনায় আলাদাভাবে নিয়মিত মামলা নেয়া হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।