শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১২ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা: হতদরিদ্র পরিবারের এক নিরীহ কলেজ ছাত্রকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিল সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বাদাঘাট এলাকার ছাত্রলীগ নামধারী কিছু দুর্বৃত্তরা। উপজেলার বাদাঘাটের আলহাজ¦ জয়নাল আবেদীন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠ থেকে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সহপাঠির সাথে থাকা অবস্থায় বাদাঘাটের শহিদুল্লাহ মীরের ছেলে ও বাদাঘাট সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু মীরকে (১৭) ছাত্রলীগ নামধারী কয়েকজন দুর্বৃত্তরা মারধর করে মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ ফাড়িতে সোপর্দ করে। এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসির মধ্যে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইতে শুরু করে। জানা গেছে, বিগত ২০১৬ সালে ২ নভেম্বর রাতে চালপড়া চোর শনাক্তকরণ, অপমানে বিষপানে যুবকের আত্মহত্যা ও মামলা দায়েরের পর ৪ নভেম্বর নিরীহ ব্যবসায়ী মানিককে নির্যাতনের পর মুখে বিষ ঢেলে হত্যার অভিযোগে পরিবার মামলা করলে দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয়, আঞ্চলিক দৈনিকে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এদিকে উপজেলার বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাটে গত ৩০ জানুয়ারি রাতে হোটেল পরিষ্কার করতে গিয়ে ময়লা ছেড়া ফাড়া বিভিন্ন খেলাধুলার পোস্টার হোটেল মালিক বাজারের গলিতে ফেলে দিলে বাজারের দু’ নৈশ প্রহরি শীতের প্রকোপ ঠেকাতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিকদের ওপর পাল্টা প্রতিশোধ নিতে মানিক হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামী বাদাঘাট বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পৈলনপুর গ্রামের মৃত রহিছ মিয়ার ছেলে মাসুক ও তার সহযোগিরা একই গ্রামের দর্জি জীবন তালুকদার পুত্র জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ঝুমুর তালুকদারকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ঐ ঘটনার ২ দিন পর ১ ফেব্র“য়ারি একই গ্রামের সহপাঠি দর্জি জীবন কৃঞ্চ তালকদারের পুত্র জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পরিচয়ধারী ঝুমুর জীবন কৃঞ্চ তালকদারকে বাদী বানিয়ে দৈনিক যুগান্তরের তাহিরপুরের স্টাফ রিপোর্টার ও সুনামগঞ্জ প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার হাবিব সরোয়ার আজাদ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের সংবাদের তাহিরপুর প্রতিনিধি বাদাঘাট সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী আলম শেখ ও সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু মীরসহ তিন জনের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করে। এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনকে চাপে ফেলতে বহুল আলোচিত মানিক হত্যাকাণ্ডের আসামী ও তাদের লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে কৌশল অবলম্বন করে শাসকদলের ক্ষমতা কাটিয়ে ঝুমুর তালুকদার একাধিক মানববন্ধন কর্মসূচি পালনও করেছেন।
এদিকে কলেজ ছাত্র রাজুর পিতা শহিদুল্লাহ মীর ও প্রত্যক্ষদর্শী কলেজ সহপাঠি সুমন মিয়া, কামড়াবন্দ গ্রামের জাফরুল ইসলাম জানান, ঝুমুর তালুকদার, মানিকের ছেলে রাহাত ও হত্যা মামলার আসামী মানুকের ভাগ্নে মাহবুবসহ তাদের সাথে থাকা ৮-১০ জন সংঘবদ্ধ হয়ে রাজুকে স্কুলে মাঠ থেকে আমাদের সামনেই মারধর করে মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে তদন্তকারী এসআই রফিককে খবর দিয়ে তার হাতে তুলে দেয় রাজুকে। অভিযোগ রয়েছে, সাধারন ডায়েরির তদন্তকারী অফিসার এসআই রফিক মিয়ার বিরুদ্ধে ইতিপুর্বেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে চারাগাঁও সীমান্ত থেকে ১’শ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে পরদিন ৮০ পিস ইয়াবা ট্যাবলটে উধাও করে দিয়ে মাত্র ২০ পিস ইয়াবা জব্দ দেখিয়ে রফাদফা করার সংবাদ প্রকাশ হলে তিনিও বেশ কয়েকমাস ধরে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন, আর অতি উৎসাহী হয়ে মাসুকের প্ররোচনায় ওই এসআইর মদদেই শুক্রবার পুলিশের ভূমিকা পালন করলো কিছু ছাত্রলীগ নামধারী দুবৃক্তরা।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্রী নন্দন কান্তি ধর বলেন, এ ঘটনায় রাজুকে গ্রেফতারের পর থানায় নিয়মিত মামলা ডায়েরি ভূক্ত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাজুকে মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই রফিক নিজেই পুলিশ ফাঁড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছেন।