মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:২৪ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
যারা আন্দোলনে ব্যর্থ হন, তারা নির্বাচনেও ব্যর্থ হন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিএনপি বার বার নির্বাচন ঠেকাতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু এদেশের জনগণ যেভাবে তাদের নির্বাচন ঠেকানোর অভিন্ধি ব্যর্থ করে দিয়েছিল, তেমনই আন্দোলনেও সাড়া দেয়নি।
বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের আয়োজনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
নিজেদের কারণেই বিএনপি নির্বাচনে হেরেছে মতামত ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তাদের মনোনয়ন বাণিজ্য, অগ্নিসন্ত্রাস, এতিমের টাকা লুটপাট এবং দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায় জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি কেন নির্বোচনে হেরেছে সেটা তাদের নিজেদেরও ভাবা উচিৎ। কেননা, তারা ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তাণ্ডব চালিয়েছে। অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। যানবাহন পুড়িয়েছে। ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়ে ঘরে ফেরবেন না বলে ঘরে ফিরে গেলেন। সেই ধর্মঘট এখনও আছে! আবারও নির্বাচন প্রতিরোধের নামে নৃশংসতা চালালেন। জনগণ তাদের সেই সহিংস আন্দোলন ব্যর্থ করে দিয়েছে। দলটির প্রধান এতিমের টাকা চুরি করে জেলে। আবার তিনি জেলে যাওয়ার পর এমন একজনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হলো, যিনি নিজেই দুর্নীতি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি।’ বিএনপির এসব তৎপরতার কারণে নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আগামী ৫ বছর আমাদের জন্য কঠিন পরীক্ষা। যে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছি— এটা আমাদের অব্যাহত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। জনগণ আমাদের ওপরে আস্থা-বিশ্বাস রেখেছে। এই বিশ্বাসকে মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। তার আদর্শ বুকে নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই, এদেশের যে উন্নতি আমরা করেছি এবং সেটা যেন আরও অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে। আজ জাতির পিতা স্বশরীরে আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তিনি আছেন। এই ৫৪ হাজার বর্গ মাইলের সব জায়গায় তিনি আছেন।’
এ সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি জানি না,কিন্তু সেটা আমি উপলব্ধি করতে পারি, তিনি আছেন। নইলে আমার পক্ষে এত দ্রুত দেশের উন্নতি করা বা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এতটা অর্জন করা কখনও সম্ভব হতো না। আমি সবসময় মনে করি, আমার বাবা-মা, আমাকে সবসময় ছাঁয়া দিয়ে রেখেছেন বলেই আজকে এটা সম্ভব হচ্ছে এবং নিশ্চয়ই তিনি বেহেশত থেকে দেখেন।’
নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এদেশের মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে, তাদের বাসস্থান হবে চিকিৎসা, শিক্ষার সুযোগ হবে, উন্নত জীবন পাবে— এটাইতো ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র উদ্দেশ্য। বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষকে খুব ভালোবাসতেন। এদেশের বঞ্চিত জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি মহৎ আত্মত্যাগ করে গেছেন। সেই আত্মত্যাগ আমাদের ভুললে চলবে না। আমাদেরকে সেটাই অনুসরণ করে চলতে হবে এবং দেশের মানুষ যদি ভালো থাকে, দেশের মানুষ যদি সুন্দর জীবন পায়, এর থেকে বড় স্বার্থকতা একজন রাজনীতিবিদের জীবনে আর কিছু হতে পারে না।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। সভায় বক্তব্য রাখেন— আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, আব্দুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ। আলোচনা মঞ্চে দলটির কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করে আওয়ামী লীগ। সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এছাড়া, সকাল সাড়ে ছয়টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করার হয়।