শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী জাদুকাঁটায় বালু পাথর কোয়ারি দখলের জের ধরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে সৈয়দ নুর (১৫) নামের এক কিশোর খুন হয়েছেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার ঘাগটিয়া আদর্শ গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত সৈয়দ নুর উপজেলার বাদাঘাট উওর ইউনিয়নের ঘাগটিয়া আদর্শ গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে।
এ ঘটনায় নিহতের পিতা অপর আহত নাসির উদ্দিনকে আশংকাজনক অবস্থায় দুপুরের দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার ঘাগটিয়া আদর্শ গ্রামের মৃত কুদ্দু ছোবানের ছেলে নাসির উদ্দিন ও তার বড় ভাই মৃত নবীকুলের পরিবারের লোকজনের মধ্যে ঘাগটিয়া বড়টেক এলাকার পাকা সড়কের তীরে থাকা জাদুকাঁটা নদীর চরে বালু পাথর কোয়ারির জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে দ্বীর্ঘ দিন ধরে মামলা মোকদ্দমা ও পুর্ববিরোধ চলে আসছিলো।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল হতে জাদুকাঁটা নদীর বিরোধপুর্ণ চরে কোয়ারি দখল করে নাসির উদ্দিনের বড় ছেলে গোলাম নুর ও মৃত নবীকুলের ছেলে গোলাম নুরের জেঠাত ভাই গোলাম কাদির উভয়েই ১৩ সেট সেইভ মেশিন লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিক দিয়ে অবৈধভাবে বালু পাথর উক্তোলনে নামায়।
প্রতিসেট সেইভ মেশিনের বিপরীতে শ্রমিক সর্দারদের নিকট হতে নিয়মিত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে আসছিলো গোলাম কাদির ও চাচাত ভাই গোলাম নুর। মঙ্গলবার কোয়ারিতে লাগানো এক সেট সেইভ মেশিনের চাঁদার টাকা হাতিয়ে আদায় করাকে কেন্দ্র করে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে গোলাম কাদির ও গোলাম নুর।
এ নিয়ে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোলাম কাদির আর্দশ গ্রামে তার বাড়ির সামনে চাচা নাসির উদ্দিনের সাথে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ভাতিজা গোলাম কাদির চাচা নাসিরের বুকে ধারালো (বোজাং) ছুরি দিয়ে আঘাতে রক্তার্থ জখম করেন।
বাঁধা দিতে এগিয়ে আসলে নাসিরের কিশোর ছেলে সৈয়দ নুরের তলপেটে (বোজাং) ছুরি দিয়ে ফের তাকে রক্ষার্থ জখম করেন গোলাম কাদির। আশেপাশে থাকা গ্রামের ও পরিবারের লোকজন পিতা পুত্রকে উদ্ধার করে বেলা ১২টার দিকে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক কিশোর সৈয়দ নুরকে মৃত ঘোষষা করেন।
অভিযোগ রয়েছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জাদুকাটা নদীর বড়টেক, চালিয়ারঘাট এলাকায় উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের মৃত জুলহাস শাহর ছেলে মাহমুদ শাহ, বারিয়া সোনার ছেলে বরকত, মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে আব্দুল আহাদ, এখলাছ মিয়ার ছেলে রানু মিয়া একটি প্রভাবশালী চক্রের সহায়তায় থানা পুলিশ, বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অজুহাত দেখিয়ে কাগজে কলমে তালিকা তৈরী করে বালু পাথর কোয়ারির নামে প্রতি শ্রমিক সর্দারদের নিকট হতে প্রতি কোয়ারির বিপরীতে ৩০ হাজার টাকা করে ৫০ কোয়ারি খনন করিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আদায় করে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ মঙ্গলবারের কিশোর সৈয়দ নুর হত্যকান্ডের পেছনে অবৈধ কোয়ারির দখল বাণিজ্য ছাড়াও এমন সংঘাত উস্কে দেয়ার নেপথ্যে চার কোয়ারির অনুমোদন দাতা ও তাদের পেছনে মদদ দাতা প্রভাশালী মহলের উস্কানি রয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান কিশোর সৈয়দ নুর হত্যাকান্ডের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঘাতক গোলাম কাদিরকে গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছেন।