মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
ঝড়-বৃষ্টির সময় সারাদেশে বজ্রপাতে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে চারজন, সিরাজগঞ্জে পাঁচজন, ফেনীতে দুজন মাদারীপুর, নোয়াখালী, মুন্সিগঞ্জ, পটুয়াখালী, মানিকগঞ্জ ও বরিশালে একজন করে মোট ছয়জন মারা গেছেন।
বজ্রপাতে মৃত্যুর সব ঘটনায় ঘটেছে রোববার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
চট্টগ্রামের মিরসরাই ও বোয়ালখালীতে বজ্রপাতে দুজন নিহত হয়েছেন। একইদিনে ফটিকছড়িতে মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে দুই নারীও মারা যান। এ সময় আহত হয়েছেন আরো তিনজন।
নিহতরা হলেন- বোয়ালখালীর জ্যৈষ্ঠপুরা পাহাড়ের গরজংগিয়া এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা কামালের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর (৩৯), মিরসরাইয়ের সাহেরখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর পূর্ব ডোমখালী ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা স্কুলছাত্র সাজ্জাদ হোসেন (১৬), যোগেন্দ্র শীলের স্ত্রী ভানুমতি শীল (৪০) ও বানেশ্বর দাশের স্ত্রী লাকি রানি দাশ (৩৮)।
সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুরে বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেলের দিকে উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলায় এসব ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের চর আঙ্গারু গ্রামের আমানত হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২৬), নরিনা ইউনিয়নের বাতিয়া গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে আলহাজ্ব বাবুর্চি (৫০), সলঙ্গা ইউনিয়নের আঙ্গারু বাঘমারা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪৫) ও উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের আগদিঘল গ্রামের শাহেদ আলীর ছেলে ও উধুনিয়া মানিকজান উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ফরিদুল ইসলাম (১৫) এবং বেলকুচি উপজেলার চরশমেসপুর গ্রামের ইউসুফ আলীর স্ত্রী লাইলী থাতুন (৩৫)।
সলঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফি কামাল শফি ও আঙ্গারু কমিউনটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, রবিবার সকালে পাশের বাঙ্গালা ইউনিয়নের দরিয়াল বিলে খাদ্য খাওয়ানোর জন্য হাঁসের বাথান নিয়ে যায় রফিকুল ইসলাম। হাসের পরিচর্যা ও খাদ্য খাওয়ানো শেষে হাঁসের বাথান নিয়ে বিকালে বাড়ি ফেরার পথে প্রচণ্ড ঝড় ও বৃষ্টির কবলে পড়ে বজ্রপাতে রফিকুল মারা যান।
অন্যদিকে বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিসুর রহমান জানান, সন্ধ্যায় চর শমেসপুর গ্রামে বাড়ির পাশের মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে লাইলী খাতুন মারা গেছেন।
মাদারীপুর জেলার শিবচরে বাদাম তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে আয়েশা বেগম (৫০) নামে এক নারী নিহত হন। বিকেলের দিকে উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের বালুরটেক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আয়েশা একই এলাকার ছোরফান হাওলাদারের স্ত্রী।
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন।
ফেনী জেলার সোনাগাজীতে বজ্রপাতে দুই শিশু মারা গেছে। বেলা ১১টায় উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের আলামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- সাজেদা আক্তার (১২) ও আল আমীন (৬)। সাজেদা ওই গ্রামের আনু ফরায়েজি বাড়ির সোলেমান মিয়ার মেয়ে ও আল আমীন একই বাড়ির বাহার উদ্দিনের ছেলে। তারা দুজনই স্থানীয় কাটাখিলা ছমদিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
নোয়াখালী জেলার হাতিয়ায় ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মো. আবদুল মান্নান খোকন (৩৬) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। দুপুর সাড়ে ৩টায় উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব মাইসচরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খোকন একই গ্রামের মৃত সৈয়দ আহমদ মুন্সীর ছেলে।
পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জে ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে আবদুল জলিল নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। দুপুরে উপজেলার মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জলিল তারাবুনিয়া গ্রামের মৃত সেরজন আলী হাওলাদারের ছেলে।
মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখানে বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে অপূর্ব বর্মন (১৯) নামে এক কলেজছাত্র মারা গেছেন। বিকেলের দিকে উপজেলার শেখরনগর মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয়েছেন আরো দুজন। অপূর্ব উপজেলার শেখরনগর ইউনিয়নের জেলেপাড়া গ্রামের স্বপন বর্মনের ছেলে ও আলী আজগর অ্যান্ড আব্দুল্লাহ কলেজের এইচএসসির পরীক্ষার্থী।
মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওরে বজ্রপাতে মো.শাহীন হোসেন (১৮) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। বিকেলের দিকে ঘিওর উপজেলার বৈলট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। শাহীন ঘিওর সদর ইউনিয়নের মুক্তার হোসেনের ছেলে। তিনি শিবালয়ের মহাদেবপুর ইউনিয়ন ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব।
বরিশাল জেলায় বিকেলে বৃষ্টির সময় জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা গ্রামে বজ্রপাতে নান্টু বালী (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই এলাকার ইউনুস বালীর ছেলে।
উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শওকত হোসেন নান্টু বালীর স্বজনদের বরাত দিয়ে জানান, বিকেলে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে একাধিক বজ্রপাত হয়। এ সময় নান্টু বালী নিজ ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে স্মার্ট ফোনে ভিডিও দেখছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে নান্টু বালী ও তার কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিবেশী মো. সুমন গুরুতর আহত হন।
তিনি আরো জানান, পরিবারের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে পৌঁছার আগেই নান্টু বালীর মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত সুমনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।