মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৮ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: পবিত্র ঈদুল আযহার দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই জমে ওঠেছে দিরাইয়ে গরু বাজার, তবে জমেনি বাজারের অন্যান্য ব্যবসাগুলো। সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র দিরাই পৌরসদরে অবস্থিত দিরাই বাজার এ এলাকার প্রাচীনতম ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বাজারটিকে বিভক্ত করেছে একটি মাত্র খাল, তবে তার ওপর রয়েছে উভয় বাজারে সংযোগ স্থাপনকারী সেতু। মূল বাজার পড়েছে সেতুর দক্ষিণপাড়ে, আর উত্তর অংশে সাম্প্রতিককালে গড়ে ওঠেছে আধুনিক বিপণী বিতানসহ বিভিন্ন ধরণের দোকানপাট। তবে উভয় অংশের বাজারই জমজমাটভাবে চলছে। জানা যায়, মূল বাজারে বেশ কিছু বিপণী বিতানসহ বিভিন্ন ধরণের দোকানপাট থাকায় লোকজন এখানে আনাগোনা বেশি হয়। কিন্তু এবারের ঈদে ব্যবসায়িদের বিরাট ধ্বস নেমেছে। কারণ, হাওরাঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা হচ্ছে কৃষি, আর সেই কৃষির ফসল ধানের দাম কম থাকায় কৃষকদের হাতে টাকা নেই। ফলে পবিত্র ঈদুল আযহাসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির সময়ও ব্যবসায় মন্দা চলছে। বেশ কয়েকটি বিপণী বিতান ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য সময়ের চেয়েও ব্যবসা মন্দা রয়েছে, এছাড়া কোরবাণী উপলক্ষ্যে মসলার বাজারও জমজমাট নয়। বিক্রেতারা মাল নিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম। বাজারের মসলা ব্যবসায়ি রশিদ মিয়া জানান, শনিবার দিরাই পৌরশহরের বাজার হলেও ক্রেতা নেই বললেই চলে। তিনি দাবি করেন, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় মসলার বাজার দাম কম। বাজারে আদা ১শত থেকে ১৪০ টাকা, লং ও এলাচি ৯শত থেকে ১ হাজার ২শত টাকা, জিরা ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, দারুচিনি ২৫০ থেকে ৩শত টাকা ও গুলমরিচ ১ হাজার ২শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে দিরাই পৌরশহরে অবস্থিত গরুর বাজার প্রথমদিকে না জমলেও শেষ সময়ে এসে তা জমতে শুরু করেছে করেছে। শুক্রবার গরুর হাটে অন্যান্য বাজারের চেয়ে অধিক গরু বিক্রি হয়েছে। বাজার ইজারাদার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সারাদিনে প্রায় ৬শত গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছে। ঐদিন সর্বোচ্চ দামে একটি গরু বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়, যা ইসলামিক রিলিফ তাদের পরিচালনাধিন এতিম শিশু ও উপকার ভোগীদের মধ্যে ঈদের দিন কোরবাণীর গোশত বিতরণ করা হবে। এছাড়া একটি খাসি বিক্রি হয়েছে ১২ হাজার টাকায়। যা এ পর্যন্ত দিরাই গরু বাজারের সর্বোচ্চ রেকর্ড বলে জানা যায়। ইসলামিক রিলিফ সূত্রে জানা যায়, এ বছর তারা তাদের ৬শত উপকার ভোগীদের মধ্যে ২ কেজি করে কোরবাণীর গোশত বিতরণ করবেন, এরমধ্যে এতিম ছাত্র-ছাত্রী প্রায় ৩শত জন। তারা প্রায় ৩ লাখ টাকার মোট ১৫টি গরু এ বছর দিরাইয়ে কোরবানী দিবেন বলে জানান ইসলামিক রিলিফের উপজেলা ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম। তবে ঈদের আগের দিন অর্থাৎ গরু বাজারের শেষ দিনে আরো বেশি বিক্রি হবে বলে আশাবাদি ব্যবসায়ি এবং ইজারাদার কর্তৃপক্ষ। তারা জানান, অনেকেরই গরু রাখার জায়গা না থাকায় উপস্থিত সময় অর্থাৎ ঈদের আগের দিন পসন্দ মতো গরু কিনে তা কোরবাণী দিবেন।
অন্যদিকে কোরবাণীর ঈদ হওয়ায় বেড়েছে ফ্রিজের বিক্রি। বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে গিয়ে জানা গেছে এ তথ্য। ব্যবসায়িরা জানান, এবারের ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেড়েছে ফিজের বিক্রি। দিরাই পৌরসভার কলেজ রোডস্থ আজাদ এন্ড সন্স ইলেকট্রনিক্সের স্বত্তাধিকারী মোঃ আজাদ সরদার জানান, বেশ কয়েকটি কোম্পানীর ডিলার হওয়ার পরও এবার বিক্রির তালিকার শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গার কোম্পানীর ফ্রিজ, এরপরই আছে ওয়ালটনের ফ্রিজ। প্রাইম ইলেকট্রনিক্সের সাইফুল ইসলাম জানান, তার দোকানে ভিশন কোম্পানীর ফ্রিজ বেশি বিক্রি হয়, ওয়ালটনের ফ্রিজও মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। মাইওয়ান-মাই চয়েস ব্রান্ডের ফ্রিজও ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া যমুনা, কনকাসহ অন্যান্য কোম্পানীর ফ্রিজগুলোও মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে।