বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
হাওরের কান্না থামছেই না ফসলহানির পর এবার মৎস সম্পদ বিপন্নের পথে

হাওরের কান্না থামছেই না ফসলহানির পর এবার মৎস সম্পদ বিপন্নের পথে

দক্ষিন সুনামগঞ্জ থেকে সামিউল কবির: দক্ষিন সুনামগঞ্জের ১৬টি হাওরের ২২ হাজার ২শত ৭৫ হেক্টর বোর জমি পানিতে তলিয়ে গিয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিতে কৃষক যখন দিশেহারা, ঠিক তখনই পানিতে এমোনিয়া গ্যাস হয়ে অক্সিজেন কমে গিয়ে সকল প্রজাতির হাজার হাজার মাছ মরে ভেসে উঠছে প্রতিটি হাওরে। ধান হারিয়ে গরু ছাগল বিক্রি করে যখন হাওর অঞ্চলের কৃষকরা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করার স্বপ্ন দেখছিল, ঠিক তখনই মাছ মরে ভেসে উছে কৃষকের বুকভরা আশাকে ভেঙ্গে করছে দুরাশা। হাওরপাড়ের কৃষকদের মাঝে কান্না যেনো থামছেই না। দেখার হাওরসহ উপজেলার সকল হাওরের বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার পর এখন হাওরের সকল মাছ মরে ভাসছে পানিতে। মরার উপর খরার ঘার মতো অবস্থা। কৃষক ও মৎসজবীরা এখন দিশেহারা। যেসব মৎসজীবী কৃষক মানুষ ধান হারিয়ে মাছের আশায় নিজেদের স্বপ্নকে জিয়িয়ে রেখেছিলেন, এখন তাদের সকল স্বপ্নও নষ্ট হয়ে গেছে। হাওরে ধান পঁচে বেরোচ্ছে দূর্গন্ধ। মাছ ও পানির জন্য ক্ষতিকর সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করায় এমন এমটি ঘটছে বলে মনে করছেন সাধারণ কৃষক, জেলে ও হাওরের সাথে সংশ্লিষ্টজন। এসব মাছ বিষাক্ত হওয়ায় ইতোমধ্যে উপজেলা ব্যাপি মাইকিং করে মাছ না খাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। একেতো মানুষের সকল ধান পানিতে তলিয়ে গেছে, তার উপর মাছও মরে মরে ভাসছে হাওরে। এসব মাছ ও ধান পঁচার গন্ধ চারদিকে ছড়াচ্ছে। উৎকট গন্ধে হাওর পাড়ের মানুষেরা ঠিকে থাকাটাও কষ্ট সাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে হাওরে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে অথৈ পানি। হাওর নয়, যেনো আস্ত একটা সাগর। পানির খুব কাছাকাছি উড়ছে চিল, কাক আর মাছ খেকো পাখি। অসংখ্য মাছ মরে ভেসে উঠছে পানিতে। ছোট ছোট মাছের পরিমান খুব বেশি। বড় মাছও আছে। আছে রুই, বোয়াল, কার্পও। বড় মাছগুলো কোনোটার ওজন এক থেকে পাঁচ কেজি হবে। কৃষকরা নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রচ- গরম উপেক্ষা করে কয়েকজন জেলে মাছ ধরায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে থেমে থাকতে চান না ওরা।
কথা হয় তাদেরই একজনের সাথে। নাম মকবুল হোসেন। কাদিপুর গ্রামের এই জেলে বলেন, ‘ধান তো আল্লায় আগেও নিছইনগি। একটু আশা আছিল যে, মাছ মাইরা অইলেও বাইচ্ছা খাচ্ছা, আম্মা আব্বারে লইয়া কোনো রকম ই বছর কান কাটাইমু। আল্লায় ই পথও রাখছইন না। হাওরোর হখল মাছ মইরা মইরা ভাইযার। পানিতও খুব গন্ধ করে। তবুও বাঁচন লাগবো। মাছ মারতাম আইছি, দেখি তুরা মাছ ফাই নি।’একই হাওরের কৃষক মাস্টার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমারও এই হাওরে তিন হাল জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এভাবে আরো অনেক ধান তলিয়েছে। এসব ধান পঁচা গন্ধ পানিতেও ছড়িয়েছে। তাই প্রচুর মাছ মরছে।’ আস্তমা গ্রামের কৃষক আলী হোসেন জানান, ‘বাঁধের দিকে হাওরে পানি ডুকার প্রভাব মাছের উপরও পড়ছে। ধান পঁচা গন্ধ, সারের গন্ধে মাছ ঠিকতে পারছে না। তাই মরছে।’ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ছমির উদ্দিন বলেন, ‘কচি ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া, জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক সার ব্যবহার করায় পানিতে অক্সিজেনের প্রচন্ড ঘাটতি থাকার কারণে এমনটা ঘটতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে হাওরের অগভীর এলাকায় চুন দেওয়া শুরু করেছি। আশা করি ভাল ফল আসবে। আর এমন দূর্যোগ তৈরি হওয়ায় এ বছর ২ হাজার ৫০ কেজি অবমুক্ত করণ মাছের চাহিদা দিয়েছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com