মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২০ পূর্বাহ্ন
মিজান আহমদ, (জগন্নাথপুর): * রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়তের অর্থ অন্তরের সংকল্প। যেমন মনে মনে এভাবে বলবে আমি আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকাল রোজা রাখবো। নিয়তের জন্য অন্তরের সংকল্পই যথেষ্ট, মুখে বলা জরুরি নয়, তবে মুখেও বলে নেওয়া ভালো। বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৫
* আরবী নিয়ত জরুরি নয়, উত্তমও নয়। আরবি নিয়তে পৃথক কোন সওয়াবও নেই। যারা আরবি জানেন না তাদের জন্য বাংলাতেই নিয়ত করা উচিত। আর যারা আরবি জানে ও বুঝে, তারা আরবিতেও নিয়ত করতে পারবে।
* রোজার উদ্দেশ্যে সাহরী খেলে সেটিই রোজার নিয়তের জন্য যথেষ্ট। আলমাবসূত ৩/৫৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫
* রমজানের রোজার নিয়ত রাতের করাই উত্তম। তবে সূর্য ঢলার ‘মধ্যাহ্ন’ আগে আগে নিয়ত করলে ও রোযা হয়ে যাবে। বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৬
* পুরো রমজানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়, বরং প্রত্যেক রোযার জন্য প্রতিদিন পৃথক পৃথক নিয়ত করতে হবে। কারণ প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন ইবাদত। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত জরুরি। হাদীস শরীফে আছে সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। সহীহ বুখারী ১/২; ফাতওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫
* রাতে রোজার নিয়ত করার পরও সুবহে সাদিক পর্যন্ত খাওয়া দাওয়া ও স্ত্রী মিলন জায়েজ। এতে নিয়তের কোন ক্ষতি হবেনা। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেছেন তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে রমজানের রাতে স্বীয় স্ত্রীর সাথে প্রবৃত্ত হওয়া। সূরা বাকারা ১৮৭
* নিয়তের সময় শুরু হয় পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমন, মঙ্গলবারের রোজার নিয়তের সময় সোমবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে আরম্ভ হয়। সুতরাং সোমবার সূর্যাস্তের আগে মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। কেননা হাদীসে রাতে নিয়ত করার কথা বলা হয়েছে। আল মুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৩; ফাতাওয়া শামী ২/৩৭৭
* রোজার নিয়ত করার আগেই যদি কেউ অজ্ঞান বা পাগল হয়ে যায় এবং নিয়তের শেষ সময় ‘রোজার দিন সূর্য ঢলা পর্যন্ত’ সুস্থ না হয় তাহলে তার অনাহারে থাকা রোজা হিসেবে ধর্তব্য হবে না। পরবর্তীতে এ রোজার কাযা করতে হবে। ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৬
আযান পর্যন্ত সেহরী খাওয়া: অনেকে মনে করে আযান পর্যমত সেহরী খাওয়া যায়। অথচ আযান হয় সুবহে সাদিকের পর। আর সেহরীর শেষ সময় সুবহে সাদিক পর্যমত। তাই আযান পর্যমত সেহরী খেতে থাকলে তার রোযা হবে না। অনেক সময় আযান পর্যমত পান খেতে দেখা যায়। পান মুখে দিয়ে আযান পর্যমত ঘুমিয়ে থাকলে রোযা হবে না।-শামী:২/৪০৫, উসমানী:২/১৮৬
সেহরী খাওয়া ছাড়া রোযা: সেহরী খাওয়া সুন্নত, তবে তা রোযা বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যক নয়। তাই কেউ সেহরী খেতে না পারলেও তার সেহরী ছাড়াই রোযা রাখা জরুরী। নতুবা মারাত্মক গোনাহগার হতে হবে এবং রোযাও কাযা করতে হবে।
রোযাবস্থায় বমি: ইচ্ছাপূর্বক মুখ ভরে বমি করলে রোযা ভেঙ্গে যায়। আর মুখ ভরে না হলে কিংবা ইচ্ছা ছাড়া একা একাই বমি হয়ে গেলে রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে যদি বমি মুখে এসে যাওয়ার পর ইচ্ছা পূর্বক গিলে ফেলে তাহলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে। শামী: ২/৪১৪
রোযাবস্থায় ইঞ্জেকশন, সেলাইন ও ইন্সুলিন ইঞ্জেকশন, সেলাইন ও ইন্সুলিন নিলে রোযা ভঙ্গ হয় না, তবে গ্লোকোজ ইঞ্জেকশন (যা খাদ্যের কাজ দেয়) নেয়া মাকরূহ।- উসমানী: ২/১৮১-১৮৬, কিতাবুল ফাতাওয়া: ৩/৩৯১-৩৯২
রোযাবস্থায় রক্ত দান: রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের করলে রোযা ভঙ্গ হয় না। তবে এই পরিমাণ বের করা মাকরূহ যাতে রোযাদার ব্যক্তি দুর্বল হয়ে যায় এবং রোযা রাখা তার জন্য মুশকিল হয়ে পড়ে। কিতাবুল ফাতাওয়া: ৩/৪০০-৪০১
রোযাবস্থায় ধূমপান: রোযা রেখে ধূমপান করলে রোযা ভেঙ্গে যায়। শামী: ২/৩৯৫
টুথপেস্ট ও মাজন ব্যবহার: রোযাবস্থায় এগুলো ব্যবহার করা মাকরূহ, তবে মিসওয়াক ব্যবহার করা সুন্নত। কিতাবুল ফাতাওয়া:৩/৪০১
ইনহেলার সালবুটামল, নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার: রোযাবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যায় এবং কোন রোগীর দিনে ইনহেলার ব্যবহার করা ছাড়া কোন উপায় না থাকলে পরবর্তীতে রোযাটি কাযা করে নিবে। আর কাযা
করা সম্ভব না হলে ফিদিয়া দিয়ে দিবে।
রোযাবস্থায় এন্ডোসকপি বা এনজিওগ্রাম: রোযা অবস্থায় এন্ডোসকপি বা এনজিও গ্রাম করালে রোযা ভঙ্গ হয়না। তবে যদি পাইপে কোনো ওষুধ লাগানো হয় কিংবা পাইপের মাধ্যমে পানি ছিটানো হয়, তা হলে রোযা ভেঙ্গে যায়। রোযাবস্থায় ডুশ বা সাপোজিটর দেয়া পিছনের রাস্থায় ডুশ বা সাপোজিটর দিলে রোযা ভেঙ্গে যায়।
নাক-কান ও চোখে ঔষধ দেয়া: কানে ও চোখে ঔষধ তেল বা অন্য কিছু দিলে রোযা ভঙ্গ হয়না। তবে নাকে ঔষধ দিলে তা গলায় চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যায়।-শামী: ৪০২, আলমগীরী: ১/২০৪
রোযাবস্থায় স্বপ্নদোষ, হস্তমৈথুন ইত্যাদি: স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভঙ্গ হয়না। তবে হস্তমৈথুন, স্ত্রীকে চুম্বন ইত্যাদি করার কারণে বীর্যপাত হলে রোযা ভেঙ্গে যায়।শামী: ২/৩৯৬-৩৯৯
মুসাফিরের রোযা: ক. কেউ রোযা রাখার পর দিনের বেলা সফর শুরু করলে তার ঐদিনের রোযা ভঙ্গ বৈধ নয়। খ. ৪৮ মাইল বা ততোধিক দূরত্বে সফর করা অবস্থায় রোযা না রাখা বা ভঙ্গ করা জায়েয আছে। তবে পরবর্তীতে কাযা করে নিতে হবে। গ. নিজ এলাকা থেকে ৪৮ মাইল দূরে গিয়ে কোন স্থানে ১৫ দিনের বেশি থাকার নিয়ত করলেও তার রোযা না রাখা বা ভঙ্গ করা বৈধ নয়। তবে ১৫ দিনের কম হলে পরে কাযা করার শর্তে রোযা না রাখা বৈধ হবে। ঘ. রোযা না রাখা অবস্থায় সফর থেকে এলাকায় ফিরে এলে অবশিষ্ট দিন রোযাদারদের মতই না খেয়ে থাকা আবশ্যক এবং পরবর্তীতে তার কাযাও করে নেয়া জরুরী। শামী: ২/৪২১, আলমগীরী:১/২০৬
নারীদের বিশেষ পিরিয়ডের সময় রোযা: নারীদের হায়েয ও নেফাসের সময় রোযা রাখা বৈধ নয়। এ সময়ের রোযাগুলো পরে কাযা করে নিতে হবে। উল্লেখ্য, হায়েয বা নেফাস থেকে দিনের বেলা পাক হলে দিনের অবশিষ্ট অংশ রোযাদারদের মত থাকা আবশ্যক। তবে সেদিনের রোযাও কাযা করতে হবে। তিরমিযী: ১/১৬৩, হেদায়া: ১/২০৪
রোযাবস্থায় ওষুধ সেবন করে মাসিক বন্ধ করা: এভাবে মাসিক বন্ধ করালে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা বৈধ নয়। তবে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলে তা করা উচিত নয়।