শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা নিহত

বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা নিহত

file (45)আমার সুরমা ডটকম : রাজধানীর হাজারীবাগে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আটক থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়া র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছেন। এছাড়া মাগুরায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান ওরফে আজিবর শেখ। আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। এই প্রথম যুবলীগের এবং ছাত্রলীগের একজন নেতা র‌্যাবের সাথে বন্ধু যুদ্ধে নিহত হল। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবকলীগের কতিপয় নেতাদের বির্তকিত কর্মকা-ে শুধু প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেই নয়, সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনা সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের জন্য একটি বড় বার্তা বলে মন্তব্য করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অপরাধ করলে বা বেপরোয়া হলে এর পরিণত ভাল নয় বলেও অনেকেই মন্তব্য করেছেন। শুধু রাজধানীতেই নয়, মাগুরায় মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশুর ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ নিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল মাগুরায় পুলিশের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন এক যুবলীগ নেতা আজিবর শেখ। মাগুরায় আওয়ামীলীগ সমর্থক দুই পক্ষের সংঘর্ষে মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আসামি মেহেদী হাসান ওরফে আজিবর শেখ পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। গত রাতে ১টার জেলা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে আজিবর নিহত হন। নিহত আজিবর যুবলীগের পৌর কমিটির সদস্য ছিলেন। মাগুরার পুলিশ সুপার এহসান উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, সোমরার আজিবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে নিয়ে অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চালালে তার সহযোগীরা দোয়ারপাড় এতিমখানা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। তখন পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থলে আজিবর শেখের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। অন্য সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। উল্লেখ্য, গত ২৩ জুলাই গুলিবিদ্ধ নাজমার দেবর কামরুল ভূইয়ার সমর্থকদের সঙ্গে এলাকার আধিপত্য নিয়ে জেলা শহরের দোয়ারপাড়া এলাকায় সংঘর্ষ বাধে আজিবর ও মোহাম্মদ আলীর সমর্থকদের। এতে কামরুলের চাচা মোমিন ভূইয়া নিহত ও ভাবি নাজমা গুলিবিদ্ধ হন। নাজমার গর্ভস্থ সন্তানও গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। গুলির দাগ নিয়ে ভূমিষ্ঠ শিশুটি এখন আশঙ্কামুক্ত। মা ও  মেয়ে দুজনেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।এদিকে রাজধানীতে আরজু নিহত হওয়ার ব্যাপারে র‌্যাব-২ এর অপারেশন অফিসার ফেরদৌসি বলেন, রাজাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা হওয়ার পর র‌্যাব জানতে পারে আরজু হাজারীবাগ পার্কে লুকিয়ে আছে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি স্বীকার করেন। আরো যারা জড়িত তাদের ধরিয়ে দেবে বলে রাত আড়াইটার দিকে তাকে নিয়ে শিকদার মেডিক্যালের পেছনে বছিলা নদীর পাড়ে যায় র‌্যাব। তাকে নামিয়ে দিলে দৌড় দেয় এবং তার অনুসারীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পরে র‌্যাব পাল্টা গুলি চালালে আরজু আহত হয়। তাকে ঢাকা মেডক্যালে নেওয়া হলে চিকিৎসক ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় দুটি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া র‌্যাবের একজন এএসআইসহ দুজন আহত হয়েছেন। গত সোমবার হাজারীবাগের গণকটুলি এলাকায় মোবাইল চুরির অভিযোগ এনে রাজা (১৬) নামের এক শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়াসহ কয়েকজন রাজাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগ করেন রাজার পরিবার। এ ঘটনায় সোমবার আরো তিনজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের গতকাল আদালতে পাঠানোর পর পুলিশের আবেদনে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এলাকাবাসী ও স্বজনদের অভিযোগ, মুঠোফোন ও ল্যাপটপ চুরির অভিযোগে পাগলাটে স্বভাবের কিশোর রাজা মিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়া ও তার সহযোগীরা। হাজারীবাগ থানা-পুলিশ মনির, সুজন ও সাগর নামে আরজুর তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে রাতেই। হত্যার অভিযোগে আরজুকেও সোমবার দিবাগত রাতেই আটক করে বলে স্থানীয় লোকজন জানায়। তবে র‌্যাব বলছে, আরজুকে আটকের পর তার সহযোগীদের গ্রেফতার করতে অভিযানে গেলে  তার সহযোগী গুলি চালায়। পরে আত্মরক্ষার্থে র‌্যাবও পালটা গুলি চালায়। এ সময় আরজু গুরুতর আহত হয়। পরে হাসপাতালে নিরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।  স্বজনেরা জানান, রাজার বাবা বাবুল মিয়া নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে রাজা সবার ছোট। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, দুই বছর আগে মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই রাজার পাগলাটে আচরণ শুরু হয়। এরপর থেকেই সে আর কিছু করত না। ঘুরেফিরে বেড়াত। ঠিকমতো খেত না বলে শরীর ছিল একেবারে হাড্ডিসার। পুলিশ জানিয়েছে, রাজার পাতলা শরীরে অসংখ্য আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। বাঁ ও ডান হাত ছোলা জখম, কপালের বাঁ পাশে এক আঙুল পরিমাণ গভীর গর্ত রয়েছে। তার শরীর ভরা নীলা-ফুলা জখম। হাজারীবাগ এলাকার বাসিন্দারা ও বন্ধুকযুদ্ধে নিহত আরজুর প্রতিবেশীরা জানান, আরজু ও তার দলবলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ। ওই নির্মাণাধীন ভবনে প্রায় প্রতিদিনই মাদকের আড্ডা বসত। বিভিন্ন অজুহাতে চাদা আদায় করা হতো স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। বাড়ির নির্মাণকাজে কেউ হাত দিলে আগে আরজু বাহিনীকে সন্তুষ্ট করতে হতো। ভয়ে এতদিন কেউ কিছু বলেননি। রাজাকে মারার সময়ও আশপাশের লোকজন গ্রিলের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলেও কেউই ছেলেটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন নি। এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, আরজু মাদক ব্যবসায়ী। এছাড়া চাঁদাবাজি, দখলদারিসহ নানা অপরাধে সে জড়িত ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আরজু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। এলাকার সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতো। কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে এরকম কেউ বলতে পারবে না। অন্যদিকে চুরির অভিযোগে পিটুনিতে নিহত রাজার পরিবারের লোকজন বলেছেন, আরজু মিয়া ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নিউ মার্কেট এলাকায় তিনি ইয়াবাসহ ফেনসিডিল সাপ্লাই করত। তার বিরুদ্ধে শুধুমাত্র নিউ মার্কেট থানাতেই ডজন খানেক মামলা রয়েছে। গতকাল সকাল ১১টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে গিয়ে দেখা যায়, শত শত লোক মর্গের সামনে ভিড় করে আছেন। আরজুর ‘ক্রসফায়ার’ নিয়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলছেন। একটু এগিয়ে দেখা যায়, মর্গে পড়ে রয়েছে আরজুর নিথর দেহ। কাছে গিয়ে দেখা যায়, মাথার বাম পাশে কানের ওপরে একটি, বুকের ঠিক মাঝখানে একটি এবং বুকের বাম পাশে পাঁজরে একটি করে গুলির চিহ্ন রয়েছে।এদিকে রাজার চাচা হান্নান ও ফুফু সোহাগীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, রাজা হিরোইনচি না। ওরা মিথ্যা বলেছে। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর চাচা শামীম ও ফুফু রতœা তাকে আনতে যায়। তাদের হাতে-পায়ে ধরে বলে, সে চুরি করে থাকলে আমরা জরিমানা দেব। তবুও তাকে ছেড়ে দেন। বাসায় নিয়ে আমরা তাকে শাসন করবো। কিন্তু তারা রাজাকে ফেরত না দিয়ে বছিলা নদীর পাড়ে আরজুর টর্চার সেলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে কিছুক্ষণ পর আরজুর ছেলেরা রাজাকে বাসার সামনে অচেতন অবস্থায় ফেলে দিয়ে যায়। রাজাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাই, তখন আরজু বলেন, চোরকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাঁচাতে পারিস কি-না দেখ। ফুফু রতœা বেগম বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে থানায় যাই মামলা করতে। মামলা করে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বাসায় ফিরে আসি। ১৫ জনের নাম উল্লেখ এবং চারজনকে অজ্ঞাতনামা আসমি করে মামলা করি। একজন মারা গেছে। বাকিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুক পুলিশ এটাই চাই। এ প্রসঙ্গে হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, আরজুর নামে থানায় কোনো মামলা ও জিডি নেই। তিনি কয়েকবার থানায় এসেছিলেন। বেশি একটা আসতো না। রাজাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ এনে তার ফুফু একটি মামলা করেছেন। ১৫ আসামির মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন মারা গেছে। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। শিগগির গ্রেফতার করা হবে তাদের।তবে হাজারীবাগ থানা পুলিশের একজন এসআই (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, আরজুর নিজের থানা এলাকাতে তার নামে কোনো মামলা ও জিডি নেই। কিন্তু আরজু একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট থানায় ডজন খানেক মামলা রয়েছে। ওই এলাকাতে তিনি ইয়াবা ও ফেনসিডিল সরবরাহ করতেন। নিউ মার্কেট থানায় যোগাযোগ করা হলে আরজুর মামলার বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ওসি ইয়াসীর আরাফাত। প্রসঙ্গত, সোমবার হাজারীবাগের গণকটুলী এলাকায় মোবাইল চুরির অভিযোগে রাজা নামে এক ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়া। এরপর তাকে মেরে ফেলে রেখে যায় আরজুর ছেলেরা। পরে রাজাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com