মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ অপরাহ্ন
সামিউল কবির: কত বছর পর সুনামগঞ্জ বাসীর স্বপ্ন পুরুন হতে যাচ্ছে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপিত হবে বলে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষ আনন্দিত না হয়ে ঠিক তার উল্টো আচরন শুরু করে দিয়েছেন মুলত মেডিকেল কলেজটির স্থাপনের স্থান নির্ধারন নিয়ে! সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবিত স্থানটি হলো জেলা সদর উপজেলার মদনপুর নামক স্থানে যার দূরত্ব শহর থেকে মাত্র ১১ কিঃ মিঃ দুরে। কিন্তু ১০-১১ কিঃ মিঃ তো মাত্র এখানে শহরের মানুষজনের তেমন অসুবিধা হবার কথা নয়। এতে বরং দেখা যাচ্ছে জেলার ১১ টি উপজেলার মধ্যে এটিই সবচেয়ে মধ্যবর্তী স্থান.. যেমন ছাতক, (আবার শুনা যাচ্ছে ছাতক ভেঙ্গে দুটি উপজেলা হবে নামও একখান ঠিক হয়ে আছে যেমন দক্ষিণ ছাতক)জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা, জামালগঞ্জ, আর বিশম্ভপুর, সুনামগঞ্জ সদর তো কাছেই। শুধু তাহিরপুর, ধরমপাশাই একটু দুরে.! সুনামগঞ্জ শহরে হলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি হবে..? সেটাও আগে পাঠ করা দরকার! সুনামগঞ্জ শহর কি বিকেন্দ্রীকরণ হয়ে একদিন মদনপুর কে টাচ করবেনা? যেমন ভাবে সিলেট শহরের সব দামি জায়গা ছেড়ে শাবিপ্রবি করা হয়েছিলো শহর থেকে প্রায় ৮ কিঃ মিঃ দুরে এতে লাভ হলো কার? লাভ হলো শহরের যা তার আকার আরো বড় করলো। ধরুন একটা ভোটাভুটি যদি হয় স্থান নির্ধারন নিয়ে, আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছাতক, দোয়ারা, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা,জামালগঞ্ জ, সদরের একাংশ যেমন (লক্ষণশ্রী, মহনপুর ইউনিয়ন) সহ সকল সাধারন জনগনেই বলবেন স্থান নির্ধারন ঠিক আছে। আর শহরের ভিতরে হলে উল্লেখিত ৭ টি উপজেলার কি লাভ..? এর একটাই কারন হতে পারে উপরের মানুষ উপরে থাক..! মেডিকেলটি মদনপুর হলে মদনপুর, জগজীবনপুর, কাঠইর, উলতুলু নোয়াগাও, গোবিন্দপুরের মানুষ আর ঔ ৭ উপজেলার মানুষ শহরের মানুষের চেয়ে দামী হয়ে যাইতনি..? প্রকৃত সত্যটা হলো শহুরেজন তাদের আধিপত্যের বাইরে প্রান্তজনের আরেকটি বাজার হোক, কর্মসংস্থান হোক, আর্ত-সাংস্কৃতিক মুক্তি পাক কিংবা রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রান্তিক মানুষের অভিগম্যতা ঘটুক সেটা তাহারা হৃদয় থেকে চান না। নিজের সময় নিজের হিৎস্যা বুঝে নিতে অস্থির! সর্বোপরি আমি তাদের কণ্ঠে আধিপত্যবাদী পূজিবাদেরই প্রতিধ্বনি শোনতে পাই। এই হীনমন্নতা পরিহার করতে হবে আগে কারন আমাদের একটাই দেশ বাংলাদেশ, আর সুনামগঞ্জ আমাদের জেলা, জেলার উন্নয়ন আমরা সবাই চাই। সুতরাং জেলা সদরের মদনপুর নামক স্থানে মেডিকেল কলেজ স্হাপন করা হলে এতো আমাদের আনন্দের বিষয় গর্বের বিষয়। আপত্তি থাকারতো কথা নয়? সুনামগঞ্জের কত এমপি মন্ত্রী হলেন গেলেন কেউ কি একটি মেডিকেল কলেজ স্বপ্নে ভাবতে পেরেছিলেন? আমি যতদুর জানি একজন ভেবেছিলেন তিনি দক্ষিণ সুনামগঞ্জের এক কৃতী সন্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নান। এবং তিনি সরাসরি সরকার প্রধানের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে এসেছেন হাওরবাসীর জন্য মহামূল্যবান এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি। এটি যখনেই বাস্তবায়নের দিকে এগুচ্ছে আমরা তখন মুখে খই ফোটাচ্ছি যে মদনপুরে ইহা কেনো হচ্ছে? শহরে ভেতরে কেনো নয়? শহরে কি জায়গার অভাব? সাম্য উন্নয়নে বিশ্বাস করলে এইসব উদ্ভট প্রশ্ন আপনাদের মাথায় আসতে পারতোনা। কিছুু মানুষ আছেন মিনারেল পানির বোতল সামনে রেখে বিভিন্ন সেমিনারে গিয়া সাম্য অর্থনীতি আর উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলে গলা ফাটিয়ে দিবেন যখন বাস্তবতা সামনে আসে তখন বেমালুম বক্তারা তাদের বক্তব্য ভুলে যান। যেসব কর্তারা মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য মদনপুরকে বেছে নিয়েছেন এখানে তাদের সাধুবাদ দিতেই হবে। এখন বুঝা যাচ্ছে মেডিকেল কলেজ স্বাপিত হবার আগে মদনপুরের মানুষ’রা একটাই স্বপ্ন দেখে যে আমাদের দিরাই রাস্তা পয়েন্ট আর এমন থাকবেনা, আলো ঝলমল করবে, বড় বড় দোকাটপাট হবে, উচু উচু বিল্ডিং হবে, দেশী বিদেশী ছাত্র/ছাত্রীর সমাগম ঘটবে.. হোষ্টেল, হোটেল তুলা হবে। নতুন করে নতুন একটা এলাকার নতুন কিছু মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততা বাড়বে। মদনপুরতো শহরেই! মদনপুর যদি একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনেই শহরের স্বাদ আহ্লাদ গ্রহন করতে চায় সেটাতো অন্যায় নয়? গত কয়েকদিন থেকে দেখতেছি শহরের কিছু ফেইসবুকধারীদের এমন স্ট্যাটাস যে ‘আমাদের শহরের মানুষ’রা সোচ্চার হতে হবে আর এখনেই আওয়াজ তুলতে হবে? যেনো মদনপুরে ইহা স্থাপন করা না হয়’ এটা কেমন কথা? স্বীকার করছি প্রাথমিক অবস্থায় কিছু সমস্যা হলেও হতে পারে! কিন্তু এজন্য ইহা শহরের ভিতরেই যে করতে হবে তা বাধ্যতামূলক নয়, এইসব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে গুণীজনদের ভাবনা অধিকাংশ জণগনের পক্ষেই যায়। আর মনে রাখা দরকার যে গ্রামের মানুষেরাই শহরে গিযা শহর বানায়! আর আর্দশিক এক নেতার ছোয়ায় কোনো গ্রাম একদিন শহর হয়ে যায়। অবহেলিত মদনপুর হয়তো আজ তার স্বপ্নের পথেই হাটছে তাই উন্নয়নে স্রোতে আর উল্টো নয়, তাদের স্বপ্নের সহযাত্রী হই আমরা কিংবা আমাদের স্বপ্ন পুরুনের দিকে এগোই আর সেটাই হওয়া উচিত।
লেখকঃ উন্নয়নকর্মী ও সংবাদকর্মী