সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন
মোঃ সাইফ উল্লাহ, বিশেষ প্রতিবেদক: সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে ওএমএসের তিনজন ডিলারের নামে বরাদ্দকৃত ৬ মেট্রিকটন চাল তাদেরকে না জানিয়ে তিনি নিজেই উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, অকাল বন্যায় উপজেলার কৃষকের একমাত্র বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর সরকারিভাবে কৃষকদের জন্য ১৫ টাকা কেজি দরে খোলা বাজারে চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই লক্ষে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১১ জন ওএমএসের ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। আর প্রত্যেক ডিলার প্রতিদিন ১৫ টাকা কেজি দরে খোলা বাজারে ৫ কেজি করে ২শত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষদের মধ্যে চাল বিক্রি করে আসছে। কিন্তু খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ধর্মপাশা উপজেলা উপ-খাদ্য পরিদর্শক) গোলাম কিবরিয়া উপজেলার মধ্যনগর সদর ইউপির ডিলার শাখাওয়াত হোসেন, দক্ষিণ বংশিকুন্ডা ইউপির ডিলার রাজু আহম্মেদ ও বংশিকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের ওএমএসে ডিলার আব্দুর রাজ্জাক ওই তিন ডিলারের নামে চলতি মাসের ১৪-১৫ তারিখে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খোলা বাজারে বিক্রির জন্য বরাদ্দকৃত ৬ মেট্রিকটন চাল ওই তিন ডিলারকে না জানিয়েই তিনি চলতি মাসের ১৩ তারিখে তাদের নামে ব্যাংকে চালান জমা দিয়ে তিনি বরাদ্দকৃত ৬ মেট্রিকটন চাল উত্তোলন করে তা নিজেই আত্মসাত করেন।
সোমবার সকালে এ বিষয়ে ধর্মপাশা সোনালী ব্যাংকে গিয়ে জানা যায়, খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা চলতি মাসের ১৩ তারিখে তিনি ওএমএস ডিলার আব্দুর রাজ্জাক, রাজু আহম্মেদ ও ডিলার শাখাওয়াত হোসেনের নামে ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর চালান মূলে ওই তিন ডিলারের নামে বরাদ্দকৃত ৬ মেট্রিকটন চাল উত্তোলণের জন্য ৮১ হাজার টাকা তিনি জমা দেন।
এদিকে ওই তিন ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা চলতি মাসের ১৪-১৫ তারিখে খোলা বাজারে চাল কিনতে না পারায় তাদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়াতেই তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস পায়না। তিনি এলাকার কালোবাজারিদের সাথেও সখ্য গড়ে তুলেছেন বলেও একাধিক সূত্রে জানা যায়। এমনকি খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে একাধিকবার আর্থিক জরিমানাও গুণতে হয়েছে তাকে।
উপজেলার বংশিকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের ওএমএস ডিলার রাজু আহম্মেদ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, চলতি মাসের ১৪-১৫ তারিখের জন্য আমার নামে বরাদ্দকৃত ২ মেট্রিকটন চালের টাকা ১৩ তারিখে ব্যাংকে জমা না দেয়ার জন্য খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজেই আবার ১৩ তারিখে আমার নামে বরাদ্দকৃত চালের টাকা আমার অগোচরে ব্যাংকে জমা দিয়ে উক্ত চাল উত্তোলণ করে নিয়েছেন। আর এ জন্য দুইদিন খোলাবাজারে চাল বিক্রি করতে না পারায় এলাকার ভূক্তভোগীদের চাপ সামলাতে হচ্ছে আমাকে। একই ধরণের ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপজেলার মধ্যনগর ইউপির ডিলার শাখাওয়াত হোসেন ও বংশিকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের ডিলার আব্দুর রাজ্জাক।
উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া তার বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ৩ জন ডিলারের নামে ১৪-১৫ তারিখে খোলাবাজারে বিক্রির জন্য বরাদ্দকৃত ৬ মেট্রিকটন চালের টাকা ধর্মপাশা সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়েছি এবং উক্ত চাল আমার গুদামেই রয়েছে। তবে পরিবহনের সমস্যার কারণে ডিলাররা ওই চাল নিতে পারেন নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাঈমা খন্দকার জানান, বিষয়টি তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোঃ জাকারিয়া মোস্তফার কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার পর তদন্তে প্রমাণিত হলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।