বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলন ঘিরে সিলেটে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। স্বেচ্ছাসেবকলীগের কাঙ্খিত সম্মেলন সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন করতে সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে কমিটিতে ভাগবাটোয়ারা হতে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন তৃণমূল নেতারা।
তৃণমূল নেতাদের দাবি, কেন্দ্রীয় নেতারা সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও আজ নাও ঘোষণা করা হতে পারে কমিটি। কেন্দ্র থেকে পরবর্তীতে কমিটি ঘোষণা করার সম্ভবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের নতুন কমিটি বলয় ভিত্তিক ভাগবাটোয়ারা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি বলয় ভিত্তিক কমিটি ভাগবাটোয়ারা হয়, তাহলে কমিটি থেকে ছিটকে পরতে পারেন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা।
অবশ্য আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানান, ‘কমিটি পুরাতন ও নতুন নেতাদের নিয়ে গঠন করা হবে। কমিটিতে গুরুত্ব পাবেন দলের ত্যাগী ও নিবেদিত নেতারা। তিনি বলেন, আমি আশা করি স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সম্মেলন মঞ্চেই কমিটির নেতৃত্বদানকারীদের নাম ঘোষণা করবেন।’
এদিকে, একযুগ পর স্বেচ্ছাসেবকলীগের আজকের সম্মেলনকে ঘিরে সিলেট নগরী ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। নগরীর রেজিস্টারি মাঠে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। বুধবার দিনরাত চলে পদপ্রত্যাশীদের শেষ বেলার দৌড়ঝাঁপ। আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারাও ব্যস্ত রয়েছেন নিজের বলয়ের নেতাদের কমিটিতে স্থান দিতে। আর সেজন্য কেন্দ্রের সাথে দফায়-দফায় চলে যোগাযোগ-এমন তথ্য আওয়ামীলীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া গেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা সিলেট সফরকালে স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে যান। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন যুগ্ম আহ্বয়াক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ এমপি একটি কর্মীসভা করেন। ওই কর্মীসভার মাধ্যমে ২০০৩ সালের ১৩ এপ্রিল সুব্রত পূরকায়স্থকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে সিলেট জেলা, অ্যাডভোকেট শেখ মখলু মিয়াকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট বেলাল উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে সিলেট মহানগর কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। এরপর ১২ বছর ৩ মাস সময় পর সিলেটে স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতৃত্বে আসতে যুবলীগ, ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা বিরামহীন প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই নতুন ও সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে এবার জেলা ও মহানগর কমিটি গঠিত হবে। জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগে নতুন নেতৃত্বে আসতে পারেন অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন নেতা। সাবেক কমিটির পরীক্ষিত নেতাদেরকে বাকি পদগুলোর দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। তবে সিলেটের ১৩ উপজেলায় ২৫ জন, মহানগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ২৫ জন, জেলা ও মহানগর কমিটির আরো ১০০ জন কাউন্সিলর দলের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতৃত্ব নির্বাচন করার কথা রয়েছে।
এবারের সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনার শীর্ষে বর্তমান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম, জালাল উদ্দিন ফয়েজ, আফছর আজিজ, নগর শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি, সিলেট শহর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল লতিফ নুতন, জেলার সহ-সভাপতি তপন চন্দ্র পাল, লন্ডন মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সুহেল আহমদ সাহেল, মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আফছর আজিজসহ অনেকেই।
মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বেলাল উদ্দিন, মুহিবুছ ছালাম রিজবী, জেলা শাখার বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খান, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক পিযুষ কান্তি দে, স্বেচ্ছাসেবকলীগ মহানগর শাখার যুগ্ম সম্পাদক মুহিবুস সালাম রিজভী, অরুন দেবনাথ সাগর, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আলী আশরাফ সোহেল, ছাত্রলীগ নেতা দেবাংশু দাস মিটুসহ অনেকের নাম আলোচিত হচ্ছে।
জেলা ও মহানগর কমিটির সাংগঠনিক পদে আশরাফুর রহমান পাঠান, বাবুল মিয়া, আব্দুস সামাদ লস্কর মিন্টু, হীরক পাল, শামসুল ইসলাম লস্কর আলম, আবু সালেহ, মো. কামরুল আই রাসেল, জকি খানের নাম আলোচনায় রয়েছে।
সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান জানান, গত কয়েক দিন থেকে সিলেটে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও সম্মেলন সফল করতে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। রেজিস্টারি মাঠ সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, আমি আশাকরি এবার জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগে একটি সুন্দর নেতৃত্ব আসবে। যারা দলের জন্য হামলার শিকার হয়েছেন, জেল খেটেছেন তাদেরকে এবার দল মূল্যায়ন করবে বলে কিশ্বাস করি। কারণ আওয়ামীলীগ সব সময় ত্যাগী নেতাদেরই মূল্যায়নে বিশ্বাসী।
সিলেট জেলা স্বেচাছাসেবকলীগের সভাপতি সুব্রত পূরকায়স্থ জানান, সম্মেলনে উপস্থিত কাউন্সিলর ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত, পদপ্রার্থীদের যোগ্যতাসহ সার্বিক বিষয় যাচাই-বাছাই করে সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হবে। সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ মকলু মিয়া জানান, সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীরা অনেকটা চাঙা হয়ে ওঠেছেন। দলে প্রানচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। আজ আমরা সেই কাঙ্খিত সম্মেলন উপহার দিতে যাচ্ছি।
অপরদিকে, ইতোমধ্যে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি চুড়ান্ত করা হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে সিলেট ঐতিহ্যবাহি রেজিস্টারি মাঠে সম্মেলন শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছার ও প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি। সভাপতিত্ব করবেন স্বেচ্ছাসেবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক ও সিলেট জেলার সভাপতি সুব্রত পুরকায়স্থ।