বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন
অরুন সরকার:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় দুটি দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তারা একসূত্রে গাঁথা দুটি দল। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহি যেন হয়ে না ওঠে হারের কারণ। সমগ্র দেশে আওয়ামী লীগের জয়-পরাজয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন তুমুল ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দলীয় কোন্দল শেষ দিকে দলকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তাও চিন্তার বিষয়।
অপরদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বৈতরণী পারি দিতে সকল বেদাভেদ ভুলে গিয়ে একজোটে ছাতার নিচে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্ন ধরণের কৌশল অবলম্বন করে রাজনীতির মাঠকে বেশ সরগরম করে রেখেছে। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনূপস্থিতিতে ইতিমধ্যে তিন তিনটি সভা সমাবেশ করে ঐক্যফ্রন্ট সেই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছে। দেশে-বিদেশে ঐক্যফ্রন্টের সেই সভা-সমাবেশগুলো নজর কেরেছে। তারা ‘৩৬০ আউলিয়া সিলেট’র পূণ্যভূমি থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রথম সমাবেশের মধ্য দিয়ে রাজনীতির যাত্র শুরু করে।’ রচয়িতা হয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনি আমেজ। সেই সমাবেশস্থলে বিএনপি নেত্রী কারান্তরীত থাকার পরেও তার অনুপস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে লাখো জনতার ঢল নামে। শুরু হয় ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতির অগ্রযাত্রার পথ। এরপর আরো দুটি সভা সমাবেশ করে দেশের জনগণের নিকট তারা তাদের নিজের অবস্থান তুলে ধরতে সক্ষম হয়। এনিয়ে সামাজিক ও যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করে। ভাইরাল হতে থাকে তাদের নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য। এ যেন দিশেহারা পথিকের খুঁড়িয়ে পাওয়া রাজনীতির এক নতুন গণজোয়ার।
এদিকে নির্বাচন কমিশন তফশিল ঘোষণার দিন আওয়ামী লীগ দল আনন্দ র্যালী-মিছিল করে স্বাগত জানায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে। কিন্তু “ধরি মাছ না ছুই পানি” ঐক্যফ্রন্ট তা নিয়ে নড়েচড়েও বসেনি। তারা ব্যস্ত তাকে তখন নির্বাচনী ইশতেহার ও দাবি আদায়ের শর্ত নিয়ে। আর গোপনে গোপনে কাজ করতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাজনীতির অঙ্গনে। একাদশ নির্বাচনে সুফল বয়ে আনার জন্য তারা মরিয়া হয়ে ওঠে মাঠে-ঘাটে। তৎক্ষণে আওয়ামী লীগ দলীয় কোন্দলে জর্জড়িত। এর বেড়াজাল থেকে এখনও বেড় হতে পারেনি আওয়ামী লীগ, আর বের হতে পারবেও না! তন্মধ্যে আওয়ামী লীগে বসন্তের কোকিলের ডাক। হঠাৎ করে হিড়িক পড়েছে বিএনপি থেকে শত শত নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগদানের। ‘নেতাকর্মী থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও এতে হতভম্ভ! কি ঘটছে রাজনীতির অঙ্গনে? সত্যেকি তারা আওয়ামী লীগ দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে দলে ভিড়ছে না নির্বাচনী মাঠে উল্টো গোল দেয়ার জন্য এ জাল বিস্তার করছে কোনটি।’
নির্বাচন যত সন্নিকটে আসছে কমিশন তথ উত্তপ্ত হয়ে ওঠছে। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’র নামে নির্বাচন কমিশন একেক সময় একেক ধরনের অজুহাত তুলে ধরছে জনসম্মূখে। তারা সত্যি কি চায় একাদশ জাতিয় সংসদ নির্বাচন একটি অবাধ, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। দেশে-বিদেশে তাদের সুনাম বয়ে আনুক। সকল রাজনৈতীক দলের কর্মকর্তাদের পাশ কাঠিয়ে তারা কি পারবে একটি অবাধ, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে? এনিয়ে সংশয় কাটছেনা কারোও। তবে তাদের অবস্থান বলে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন ঠিকই নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যাতে তারা দেশে-বিদেশে সুনাম রক্ষা করতে পারে এবং তারা তাদের মূখ এই বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে যেতে পারেন।
জয়-পরাজয় থাকবেই তাই বলে কি গণতন্ত্রকে বির্সজন দিয়ে একনায়কতন্ত্র রাজনীতি সৃষ্টি করে, জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্গ করে। এই বাংলার জনগণ মাতৃভুমি ও মাতৃভাষার জন্য যখন একজোটে যুদ্ধে নেমে দেশ স্বাধীন করেছিল সেই দিন ‘তো’ কোন ভেদাভেদ ছিলনা, তাদের চোঁখে ছিল শুধু ভ্রাতৃত্ববোধ আর ¯েœহাশীষ মায়াজাল। সেই মায়াজাল বেধ করতে পারেনি পাক হানাদার বাহিনীও। অবশেষে জয় চিনিয়ে আনতে পেরেছিল বাংলার দামাল লোকেরা। আমরাতো সেই মাতৃভুমির সন্তান। তাহলে আজ কেন নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারবে না? কেউতো আনন্দ র্যালী-মিছিল সমাবেশে ভাসছেন আর কেউতো আবার জেল, জুলুম, নির্যাতনের নিপিড়ন সহ্য করে নীরবে কাঁদছেন। তারা সবাইতো আপনার আমার কোন না কোনভাবে আত্মীয়-স্বজন। অথচ সেই জাল নিমিষেই শেষ করে দিতে পারে ‘নির্বাচন কমিশন।’ ঔষুধ শুধু একটাই অবাধ, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সকল দলের চাওয়া-পাওয়ার ইচ্ছেটা পূরণের সহযোগীতার হাতিয়ার হচ্ছে এই নির্বাচন কমিশন। হয়ত-বা একাদশ নির্বাচনে সেই চাওয়া-পাওয়ার আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটতে যাচ্ছে।
বলাবাহুল্য পিঠ যখন দেয়ালে থেমে যায় তখন কোন না কোন রাস্তা বের হয় সেই দেওয়াল পাড়ি দেওয়ার জন্য। ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি যুগে সামাজিক ও যোগাযোগ মাধ্যম অতি সহজেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌছে দিচ্ছে দেশের সব খবরা খবর। ঘরে বসে সকল প্রজন্মের লোকেরা দেশের খবর রাখতে পারছেন সহজে। এ থেকে বড় পাওয়ার আর কিছু নেই। দেশে শুরু হয়েছে প্রতিহিংসার রাজনীতি ও দাম্ভকিকতা। সেই দেওয়াল আমাদের টপকাতে হলে অবশ্যই সরলমনা মনোভাব নিয়ে সামনের দিকে এগোতে হবে। আমরা যেকোন দল করিনা কেন সবসময় আমাদের একটি কথা মনে রাখতে হবে রাষ্ট্রের ভালর জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। যাতে আমরা সহজ সরল জনগণরা ভুল পথে দাবিত না হই। আইনের ভেতরে থেকে সকল দাবি দাওয়া উদ্ধার করতে পারি। অহিংস রাজনীতি পরিহার করে রাষ্ট্রের মঙ্গলে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারি। আমরা সকলে বলে থাকি আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী একটি গোষ্ঠির হয়ে কাজ করে থাকে। কিন্তু আজ সেই কথা বাদ দিয়ে আমাদের নিজের আয়নাটাকে বদলিয়ে নেই দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে। আগে আমরা আমাদেরকে সাজিয়ে নেই তবেই তো আমরা সেই স্বাদ-আল্লাদ গ্রহণ করব তার আগে নয়।
“যদি আমরা একটু পেছনের দিকে থাকাই তাহলে দেখতে পাবো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সেনা সৈনিক জিয়ার আর্দশ। তাদের মধ্যে ছিল এক গভীর মহানূভবতা, দেশাত্মবোধ। নীরবে তারা এই দেশের জনগণের জন্য নিজেকে বিলিয়ে গেছেন। তাদের এই গৌরবাজ্বল ইতিহাস থেকেও আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একে-অপরের সাথে আমরা ভ্রাতৃত্বের সহীত কাদে কাদ মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এখন দেখা যায় এক সূত্রে গাঁথা আওয়ামী লী-বিএনপিতে বিভাজন। সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে একটি তৃতীয় পক্ষ। সেই সুযোগ এক সময় উভয় পক্ষের জন্য হয়ে ওঠতে পারে ভয়ংকর ‘থাবা’। হাতছাড়া হতে পারে গোষ্ঠির লড়াই। কেউতো রয়েছেন নির্বাচনে জয়লাভ করতে ছোট-বড় দলগুলোকে নিয়ে ব্যস্ত আবার কেউতো রয়েছেন ওয়াদা পূরণের বিলিয়ে দেওয়ার ধান্দায়। ছাড়দিকে শুধু হিড়িক আর হিড়িক শুধু উন্নয়নের হিড়িক। কেউবা রয়েছেন জেলে আবার কেউবা রয়েছেন বাড়ি ছাড়া! কেউ হয়েছেন রাজনীতির বলির পাটা আবার কেউ হয়েছেন গোলাম। এর মধ্যেখানে পড়ে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর মধ্যভোগীরা রয়েছেন হেলে-দূলে।”
কথায় কথায় কতিপয় রাজনীতিবিদরা বিচার বিভাগ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তি আইন, একনায়কতন্ত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তারা কি আজ পর্যন্ত সেই প্রশ্নগুলোর সমাধান দিতে পেরেছেন? দেশে অনিয়ম, দুর্ণীতি হচ্ছে তার কোন সূরাহা বের করতে পেরেছেন? বরং তাদের সাথে কতিথ এই রাজনীতিবিদরা অঙ্গা-অঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে তৃতীয় পক্ষের প্রতিবাদি কোন দল দেখা যাচ্ছে না। সবার মুখে ‘ঝঁপনাম শুধূ একটি মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে-স্বপক্ষে।’ একইভাবে দলীয়করণ হয়ে গেছে মিডিয়া। গোটা কয়েকটি দর্পণ ছাড়া প্রত্যেকটি দর্পণেও ডুকে গেছে রাজনীতি। যদি সেই দর্পণ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তি আইন পাশের সময় অনেক বড় বড় সাংবাদিক, লেখক, সম্পাদকরা কি ভূমিকা পালন করেছিলেন তাহলে তার কোন সঠিক উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ! কার ঐ “শর্ষের ভেতরে ভুত রয়েছে।”
আজ রাজনীতিতে চলছে ক্রান্তিকালীন সময়। কে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করে মসনদে বসবেন। তাই আসুন আমরা সবাই তর্ক-বির্তক, দলা-দলির অবসান ঘটিয়ে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে উন্মুক্ত করে দেই।
লেখক ও সাংবাদিক