সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
বলা হচ্ছিলো করোনাভাইরাস একটু ভারি এবং বাতাসে ভাসতে পারে না। কিন্তু একদল গবেষক সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে কৃত্রিম দৃশ্য তৈরি করে দেখেছেন, কোনো করোনা রোগী যখন হাঁচি বা কাশি দেন তখন ছোট ছোট ভাইরাল কণা ছড়ায় এবং আশপাশেই তা ঘুরতে থাকে। এর পর অন্য কোনো মানুষ যখন ওই স্থান দিয়ে যায়, তখন শ্বাসের মাধ্যমে ওই ভাইরাল কণা তার ভেতরে প্রবেশ করে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেন ফিনল্যান্ডের আলটো ইউনিভার্সিটি, ফিনিশ মেটেরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট, ভিটিটিস টেকনিক্যাল রিসার্চ সেন্টার ও হেলসিঙ্কি ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক।
তারা এমন একটি মডেল তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে মুদি দোকানের কাঠামোর মতো ইনডোরে কীভাবে সূক্ষ্ম বায়ুবাহিত ভাইরাল কণা ছড়িয়ে পড়ে তা বোঝা যায়। গবেষকরা দাবি করছেন, তারা যে মডেল তৈরি করেছেন তা নভেল করোনাভাইরাসের বাতাসে ছড়ানোর বিষয়টি আরো ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে লাইভ সায়েন্স। এতে বলা হয়, সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে গবেষকরা এই মডেল তৈরি করেছেন। কৃত্রিম দৃশ্য তৈরি করে তারা দেখেছেন, কীভাবে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের অঞ্চল থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাইরাল কণা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে দোকানের দুই তাকের মাঝে কোনো ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দিলে সেখানকার বায়ু চলাচলের বিষয়টি হিসাবের মধ্যে আনা যায়।
ফ্লুইড ডায়নামিকস নিয়ে গবেষণাকারী আলটো ইউনিভার্সিটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উইল ভুরিনেন এক বিবৃতিতে বলেন, কোভিড-১৯ ছড়ানোর মডেল নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তারা দেখেছেন, কেউ যখন হাঁচি-কাশি দেয় তখন তার চারপাশে অ্যারোসল ‘মেঘ’ তৈরি হয়। সেইসঙ্গে ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে ও মিশে যায়। তবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কয়েক মিনিট সময় লাগে।
তিনি বলেন, এই ঘনীভূত মেঘ ছড়ানোর সময় কেউ ওই এলাকা দিয়ে হেঁটে গেলে ওইসব ভাইরাল কণা তার শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে।
এই গবেষক আরো বলেন, এমনিভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত কোনো রোগী যখন কাশি দিয়ে চলে যান তখন তিনি করোনাভাইরাস বহনকারী অত্যন্ত ছোট অ্যারোসোল কণা পেছনে রেখে যান। আর এসব কণা আশপাশের মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষকেরা ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট অ্যারোসোল কণার গতিবিধির মডেল তৈরি করেছেন, যাতে অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাও আছে, যা বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। এই কণা এতটাই ক্ষুদ্র যে কোনো পৃষ্ঠে পড়ার চেয়ে বরং বাতাসের মাধ্যমে চলাচল করে।
অবশ্য গবেষকেরা বলছেন, তাদের উদ্ভাবিত মডেলটি আরো উন্নত করতে কাজ করবেন তারা। সেইসঙ্গে ভিজুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়াও উন্নত করবেন যাতে বায়ুতে চলাচলকারী কণার চলাচল আরো ভালোভাবে বোঝা যায়।
ফিনল্যান্ডের ওই গবেষকরা তাদের গবেষণার ভিত্তিতে মানুষকে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে কোনো আক্রান্ত রোগীর হাঁচি-কাশি থেকে ভাইরাস ছড়ানোর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।