বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মাথাপিছু সরকারি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ১৫২ টাকা। যা ২০০০-২০০১ অর্থবছরে ছিল নয় হাজার ১১৪ দশমিক ১৭ টাকা। গত ১৫ বছরে মাথাপিছু সরকারি ঋণের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুন বেড়েছে। সংসদে প্রশ্নোত্তরে আজ মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ তথ্য জানান। বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যাংকে গচ্ছিত জনগণের আমানত দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৪৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যা ২০০-২০০১ অর্থবছরে ছিল ৮১ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। গত ১৫ বছরে েআট গুণেরও বেশি আমানত বেড়েছে। যা ৮১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
৯১.৪৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি, ছাড় ৬৪.৭৯ : আখম জাহাঙ্গীর হোসাইনের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন দাতাদেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মোট ৯১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক সাহায্যর প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছে। এই সহায়তার মধ্যে ৬১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ এবং ২৯ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান। একই সময়ে মধ্যে ঋণ ছাড় হয়েছে ৬৪ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ এবং ২৫ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান। মন্ত্রী জানান, চীন সরকার নয়টি সুদমুক্ত ঋণের মোট ৬১২ দশমিক ৪০ মিলিয়ন আরএমবি সমপরিমান প্রায় ৯৯ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ মওকুফ করেছে। বাংলাদেশ সরকার ও জাপান সরকারের মধ্যে ১৯৮৮ সালের পূর্বে সম্পাদিত ঋণ চুক্তির অধীনে আসল ও সুদ বাবদ প্রতিবছর বাংলাদেশ সরকার যে অর্থ পরিশোধ করে তা জাপান সরকারফেরত প্রদানের ঘোষণা দিয়ে এর আসল এবং সুদ বাবদ পরিশোধিতব্য আনুমানিক ১৮ হাজার ৭২৮ কোটি টাকার মধ্যেডেট রিলিফ গ্রান্ট এসিসট্যান্সের (ডিআরজিএ) মাধ্যমে অনুদান হিসেবে প্রায় নয় হাজার ৬২৮ কোটি টাকা জাপান সরকার বাংলাদেশকে ফেরত দিয়েছে। পরবর্তীতে অবশিষ্ট প্রায় নয় হাজার ১০০ কোটি টাকা জাপানডেট ক্যানসেলেশন ফান্ডের (জেডিসিএফ) মাধ্যমে বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের সম্মত তালিকা অনুযায়ী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অর্ন্তভূক্ত বিভিন্ন প্রকল্পে এ অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছে।
মন্ত্রী আরো জানান, বর্তমানে মাথাপিছু ঋণের পরিমান ১৬৯ মার্কিন ডলার বা ১৩ হাজার ১৬০ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ১৮২ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমান প্রায় ১ হাজার ৪১৯কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
আমানতের সুদ হার নিম্নমুখী : নূরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদ হারে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বর্তমানে ব্যাকিং খাতে পর্যাপ্ত তারল্য থাকায় আমানতের সুদ হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে তফসিলি ব্যাংকগুলোর স্থায়ী আমানতের সুদহার সর্বনিম্ন ১.২ শতাংশ হতে সর্বোচ্চ ১১.২৫%-এর মধ্যে রয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানা বাণ্যিজিক ব্যাংকগুলোর স্থায়ী আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে নির্ধারিত রয়েছে।
বিনিয়োগ কমেনি, বৃদ্ধি পাচ্ছে : বিনিয়োগ কমে যাওয়া এবং তারল্য সংকট বৃদ্ধির বিষয়টি সত্য নয় দাবি করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বিনিয়োগ কমেনি বরং ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজাম উদ্দিন হাজারীর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী জানান, সরকারি ও বেসরকারি খাতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত ২ হাজার ৫১১ দশমিক ৩ বিলিয়ন টাকা যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৫ সালের জুন শেষে (সাময়িক তথ্য অনুযায়ী) ৪ হাজার ৩৮৪ দশমিক ৪ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। ২০১১ সালের জুনে দেশে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল জিডিপির ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে জুন-২০১৫ শেষে জিডিপির ২৯ দশমিক ০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে সমন্বিত প্রচেষ্টা : কাজী কেরামত আলীর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে ২০ লাখ ৪১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুর ডলার ফেরত আনা হয়েছে। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে কিছু অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলাও হয়েছে। ২০১১ সালের ২৩ জুন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় দূর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত একটি মামলার রায় ঘোষিত হয়। আদালত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২ এর আওতায় সংশ্লিষ্ট দোষী ব্যক্তিদের ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া ছাড়াও অর্থদণ্ড দিয়েছেন।
অর্থ পাচাররোধে সফলতার গল্প বলার সময় আসেনি : ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর এক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্নভাবে বিদেশে অর্থ পাচার হয়। আমরা এগুলো ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু পাচারকারিরা এতোটাই ধুরন্ধর যে তারা পাচারের পদ্ধতি একের পর এক পাল্টে ফেলে। ফলে পাচাররোধে আমাদের সফলতার গল্প বলার সময় এখনো আসেনি। তিনি বলেন, সংবাদপত্রগুলো অতিরঞ্জিতভাবে পাচারের গল্প কাগজে চাপে। যার ফলে মনে হয় কত কিনা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিক না।
একবছরে এক লাখ বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ : নির্ধারিত সময়ে নবায়ন ফি জমা না দেয়ায় ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে এক লাখ তিন হাজার ৮৩৩টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল অবদুল মুহিত। কামাল আহমেদ মজুমদারের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদকে এ তথ্য জানান।