রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
একমাত্র সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় মাতা-পিতার চোখে এখন দু:স্বপ্ন। মা আকলিমা বেগম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। সারাক্ষণ ঘরের সামনের টিউবওয়েলে দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করছেন আদরের সন্তানের। সে কখন নামায থেকে আসবে, এই অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্যের দেখা পাওয়া যায় সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের নতুন জগদল গ্রামে।
সরেজমিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গত ৮ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ হয় নতুন জগদল গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও আকলিমা বেগম দম্পত্তির একমাত্র ছেলে আলী উসমান (৫)। বাড়ির আশপাশ, পুকুর, ক্ষেতসহ সম্ভ্যাব্য সব জায়গা খুঁজে না পেয়ে গ্রামের প্রতিটি মসজিদে মাইকিং করা হয়। সোমবার সকালে গরু নিয়ে হাওরে যাওয়ার সময় তার বাড়ির পশ্চিমের একটি ডোবায় একটি শিশুর লাশ ভাসতে দেখে আলী উসমানের পরিবারে খবর দিলে তারা নিশ্চিত হন এটি তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানের লাশ। সাথে সাথেই স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে খবর দেয়া হয়। পরে জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রশিদ লাভলু থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে আটক করা হয় নিহতের বাড়ির পাশের সম্পর্কীয় চাচা মুজাহিদুল ইসলামকে (১৩)। এ ঘটনায় নিহত আলী উসমানের পিতা আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে একমাত্র ঘাতক মুজাহিদুল ইসলামকে আসামী করে দিরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-০৫, তারিখ-১০/০৪/২০২৩ ইংরেজি।
পরিবার ও আশপাশের বাসিন্দারা জানান, শনিবার সন্ধ্যার সামান্য আগে মুজাহিদুল ইসলাম পার্শ্ববর্তী জগদল বাজার থেকে রাছনা কিনে নিয়ে আসে। এরপর বোতলে ভরে বাড়ির পশ্চিমের দিকে তারা চলে যায়। তারপর থেকে তাদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাদেরকে খোঁজাখুঁজি ও তাদের সন্ধানে গ্রামের প্রত্যেকটি মসজিদে মাইকিং করা হয়। পরে মুজাহিদুল ইসলামকে রাত ১টায় ধানের ক্ষেতের ভেতর থেকে কাদামাটি অবস্থায় পাওয়া যায়। আলী উসমানের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে একেক সময় একেক কথা বলে। পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হলেও যেহেতু কোন সঠিক তথ্য নেই, তাই তাকে বেশি কিছু বলা হয়নি বলে জানান নিহত শিশু আলী উসমানের পিতা আনোয়ার হোসেন ও চাচা হোশিয়ার মিয়া। তারা আরও জানান, এ ঘটনার পর দুইদিন মুজাহিদুল ইসলাম ঘরের মধ্যেই ছিল। এমনকি লাশ পাওয়ার খবর পেয়ে সেও সেখানে দেখতে যায়। বিষয়টির বিস্তারিত শোনার পর পুলিশ তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করে জানায়, শিশু আলী উসমানকে ফুসলিয়ে বলাৎকারের জন্য রাতের আঁধারে মাঠে নিয়ে যায়। এসব খারাপ কাজে বাধা দেয়া ও বাড়িতে গিয়ে মা-বাবার কাছে বলে ফেলার কথা বলায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যার ব্যাপারে ঘাতক মুজাহিদুল ইসলামের মা জানতেন। তাই তাকে দুইদিন ঘর থেকে বের হতে দেননি। তার ধারণা ছিল হয়ত লোকজন মুজাহিদকে সন্দেহ করবে না। গ্রামের মসজিদে যখন মাইকিং করা হয়, তখনও আলী উসমান মুজাহিদকে বলে, ‘চাচা, চলো বাড়িতে যাই, আমাদেরকে না পেয়ে দেখো মসজিদে মাইকিং করতেছে’। সম্ভবত এরপরই তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চুপ রেখে হত্যা করেছে। সূত্রটি আরও জানায়, এসব কথা মুজাহিদ তার মাকে বলেছে। বর্তমানে ঘাতক মুজাহিদুল ইসলামের মা-বাবা পলাতক রয়েছে।
দিরাই থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী মুক্তাদির হোসেন মামলা রুজু হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দিরাইয়ের জগদলে নিহত শিশু আলী উসমানের ঘাতক মুজাহিদুল ইসলামকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে কোর্টের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। কোর্টে জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। দণ্ডবিধি ধারা ৩০২ মোতাবেক একমাত্র তাকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বলাৎকার সংক্রান্ত কোন কিছু থাকতে পারে। তবে এ ব্যাপারে আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। লাশের ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।