শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : মার্কিন কংগ্রেসের অন্তর্ভুক্ত মানবাধিকার কমিশনের এক বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় (ব্রিফিং) বক্তারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের সুযোগ কমে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশে জঙ্গি মৌলবাদের উত্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বক্তারা এসব অভিমত তুলে ধরেন। ওয়াশিংটনে মঙ্গলবার এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় নিহত লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ আলোচনায় নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। অভিজিৎ রায়ের হত্যার বিচার এখন পর্যন্ত অসম্পূর্ণ থাকায় তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন এবং মুক্তবুদ্ধির ওপর অব্যাহত হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জঙ্গি সদস্যদের কার্যক্রম এখন একটি নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে ব্লগারদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে এবং এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কার্যত নিষ্ক্রিয় রয়েছে। বিস্ময় প্রকাশ করে রাফিদা আহমেদ বলেন, খুনিদের গ্রেপ্তারের পরিবর্তে ‘সেক্যুলার’ ব্লগারদের হয় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে অথবা তাদের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক ও মুক্তমনা ব্লগাররা আজ নিরাপদ বোধ করছেন না বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। আলোচনার অপর বক্তা লেখকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘পেন’-এর মুক্ত চিন্তা প্রকল্পের পরিচালক কারিন কারলেকার বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধির ওপর অব্যাহত হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ সরকার সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের অধিকারের ওপর বিভিন্ন সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় তার সমালোচনা করে তিনি মুক্তবুদ্ধির পক্ষে অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আলোচনায় বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের বিশেষজ্ঞ সাহার চৌধুরী। তিনি বলেন, কমিশনের তৈরি ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর একাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেদনটিতে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি আত্মসাতের ঘটনার একাধিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। এসব ঘটনা কখনো কখনো সরকারি দলের সমর্থকদের অংশগ্রহণে হয়ে থাকে, প্রতিবেদনটিতে সে কথাও বলা হয়। আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা আটলান্টিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক ভারত গোপালস্বামী। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোকপাত করেন এবং পররাষ্ট্রনীতিতে ‘চীনমুখী’ প্রবণতার কিছু লক্ষণ তুলে ধরেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন মাহবুব হাসান সালেহ এ আলোচনায় বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। এক ঘণ্টা স্থায়ী এ আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা কংগ্রেস সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। প্রাক্তন কংগ্রেসম্যান ও কংগ্রেসনাল হিউম্যান রাইটস ককাসের প্রাক্তন সভাপতি টম ল্যান্টসের নামানুসারে গঠিত টম ল্যান্টস হিউম্যান রাইটস কমিশন মার্কিন কংগ্রেসের একটি অঙ্গ সংস্থা। বহুপক্ষীয় এই কমিশন নির্দলীয় ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা ও মতবিনিময়ের আয়োজন করে থাকে। এ কমিশনের পক্ষে একজন মুখপাত্র জানান, কমিশন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানি ও আলোচনার আয়োজন করতে পারে।