মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:০১ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
২ বছরে ৫৪ ‘সন্তান’, থামতে চান না ডেকলান

২ বছরে ৫৪ ‘সন্তান’, থামতে চান না ডেকলান

clip_image001_106949আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : শত পুষ্প বিকশিত হোক! এটাই বোধহয় তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য, প্রায় আক্ষরিক অর্থেই। তিনি ডেকলান রুনি। নিজেকে ব্রিটেনের সবথেকে বেশি ‘উৎপাদনশীল’ স্পার্ম ডোনার হিসেবে দাবি করে থাকেন বছর তেতাল্লিশের এই ব্যক্তি। তিনি জানিয়েছেন, গত দু’বছরে তাঁর দেয়া শুক্রাণুই জন্ম দিয়েছে মোট ৪৬ জন সন্তানের! নিজেরও ৮ জন ছেলেমেয়ে রয়েছে ডেকলানের। তবে তাদের মা একজন নন, চার জন। ডেকলানের বক্তব্য, ‘আমি তো অন্যায় কিছু করছি না। যাঁদের দরকার, সেই সব মহিলাদের সাহায্য করছি।’ কিন্তু ক্রমে ‘খ্যাতি’ অর্জনের পরে, তাঁর এই কার্যকলাপের উপর তদন্ত শুরু করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, ডেকলানের এই ‘অনিয়ন্ত্রিত পরিষেবা’ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ঘটনা হলো, ব্রিটেনে সরকারি লাইসেন্স পাওয়া শুক্রাণু দাতাদের বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়, যাতে দাতা পুরুষ আর গ্রহীতা মহিলা এই দু’পক্ষেরই স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে। এই সব স্পার্ম ডোনাররা সর্বোচ্চ ১০টি পরিবারকে সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু ডেকলান লাইসেন্স পাওয়া শুক্রাণু দাতা নন। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ কাজে নিয়োজিত তিনি। সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘যাঁরা ডিম্বাণু দান করেন, তাঁদের এ সমাজ সাধু-সন্ত হিসেবে দেখায়। আর মনে করা হয়, স্পার্ম ডোনাররা হলেন ‘অন্ধকার গলির পোকা’ বা ‘নোংরা ছেলেপিলে’! আমি বিন্দুমাত্র লজ্জিত নই। আমি মহিলাদের পরিবার তৈরি করতে সাহায্য করি।’
পেশায় প্রাক্তন ওয়েব ডিজাইনার ডেকলান গত বছরই তৈরি করেছেন নিজস্ব ডোনার ওয়েবসাইট। ফেসবুক আর মোবাইল ফোনের বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন মারফতও নিজের বিজ্ঞাপন দেয়া শুরু করেছেন তিনি। সমকামী মহিলা দম্পতি, অবিবাহিত বা ‘সিঙ্গল’ মহিলা, উভকামী মহিলা, সাধারণ দম্পতি-সকলের জন্যই খোলা তাঁর দরজা। তাঁর কথায়, ‘দরকার হলে ২০০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়েও মহিলা ক্লায়েন্টদের কাছে পৌঁছে যাই আমি। গোটা প্রক্রিয়াটির জন্য আমার যা-যা খরচাপাতি হয়, শুধুমাত্র সেটুকু টাকাই নেই তাঁদের কাছ থেকে। অতিরিক্ত এক পয়সাও নয়। ওয়েবসাইট তৈরি করার পর থেকে আমার শুক্রাণুতে ১৭ জন পুত্রসন্তান ও ১৪ জন কন্যার জন্ম হয়েছে। তারও আগে জনা পনেরো মহিলাকে গর্ভবতী হতে সাহায্য করেছি।’
কী-কী পদ্ধতিতে হয়ে থাকে এই সাহায্য? ডেকলানের কথায়, ‘কৃত্রিম গর্ভাধান (ইনসেমিনেশন) পদ্ধতিতে। অথবা চিরাচরিত স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়-কিন্তু কোনো তথাকথিত সম্পর্ক তৈরি ছাড়াই।’ এই সব ‘সাহায্যের’ উদ্দেশ্য কি আসলে ‘মজা লোটা’? ডেকলানের জবাব, ‘কখনো নয়। যদি চাইতাম, যে সব মহিলার সঙ্গে এ ব্যাপারে সাফল্য পেয়েছি, তাঁদের সঙ্গে আবার বিছানায় যেতে পারতাম। কিন্তু আমার উদ্দেশ্যই সেটা নয়। মানুষকে উপকারে আসাটাই এখানে একমাত্র ব্যাপার। গর্ভাধান করার আগে ভাবি মায়েদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করি। আর দেখে নেই, তাঁদের পারিবারিক আয় বা সামাজিক সুবিধাগুলি কতটা, ভাবি সন্তানের যত্ন তাঁরা ঠিকমতো করতে পারবেন কি না।’
ডেকলানের বর্তমান ‘পার্টনার’ তাঁর তিন বছরের ছেলে এবং দুই ও এক বছর বয়সি দুই মেয়ের মা। নিজের পুরুষসঙ্গীর এই কাজে সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এই মহিলার। অন্য দিকে, বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ডেকলানের ‘ঔরসে’ জন্মানো ছেলে-মেয়েরা, যারা জন্মগতভাবে ‘ভাই-বোন’, তাদের পরিবারগুলি খুব কাছাকাছি বাস করতে পারে। সে ক্ষেত্রে, তাদের পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে সন্ততি জন্মানোর সম্ভাবনাটা থেকেই যায়। তবে ডেকলানের দাবি, তাঁর কাছে আসা প্রত্যেক মহিলাকেই অপর ক্লায়েন্টদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে রাখেন তিনি। সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক পরিবারের ‘গোপনীয়তা’ও রক্ষা করা হয়।
আসলে ছোট থেকেই ডানপিটে ডেকলান। ১৯৯৩ সালে, যুবা বয়সে দেওয়ালে ‘গ্রাফিত্তি’ আঁকার দল বানিয়েছিলেন। সেই সূত্রেই ফেঁসে গিয়েছিলেন ৬০ হাজার পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তির ‘অপরাধমূলক’ ক্ষতি করার মামলায়। আদালতের রায়ের নির্দেশের অপেক্ষায় সাত মাস কাটিয়েছিলেন তরুণ অপরাধীদের হোমে। উল্লেখ্য, আদালতে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে ‘সবথেকে উৎপাদনশীল গ্রাফিত্তি শিল্পী’ আখ্যা দিয়েছিল। শেষপর্যন্ত সাজা স্থগিত (সাসপেন্ডেড সেনটেন্স) থাকে। হাসতে হাসতে আদালত থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। সেই দুষ্টু হাসি এখনো লেগে রয়েছে ডেকলানের ঠোঁটে!

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com