রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার : আসন্ন দিরাই পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে প্রার্থীরা তাদের পছন্দের প্রতীক হাতে পেয়েই ছুটে চলছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে; তাদের লাগানো পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা, পরণিত হয়েছে মাইকিংয়ের শহরে। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, দেশে বিদ্যামান নানা সমস্যার কারণে তারা এ বছর পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনে হিমশিম খাচ্ছেন। আবার অনেকেই তাদের মতামত এখনই ব্যক্ত করতেও নারাজ। কারণ, যে কোন মুহূর্তে যে কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
তবে এসবের দিকে নজর দেয়ার সময় নেই প্রার্থীদের। তারা দিনরাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিজের পরিচিতি তুলে ধরার পাশিপাশি প্রতীক হাতে দিয়ে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করছেন। কৌশলী ভোটাররাও কোন প্রার্থীকেই নিরাশ করছেন না, সবাইকে শান্তনার বাণী শুনিয়ে দোয়া দিচ্ছেন। তবে ভোটাররা তাদের ভোট প্রকৃত ও যোগ্য প্রার্থীকে দেয়ার জন্য গভীরভাবে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। নিজ এলাকা ছাড়াও অন্য এলাকার ভোটারদের সাথে আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শ করছেন। এ বছর নির্বাচন কমিশন কর্তৃক মেয়র পদে দলীয়প্রার্থী হওয়ায় ভোটের রাজনীতিতে ব্যতিক্রমী মেরুকরণ হচ্ছে, এতে করে ভোটাররা বিপাকে পড়েছেন। কারণ, একই গ্রাম বা এলাকা হওয়ার সুবাদে ভোট দেয়ার চিরাচরিত নিয়মানুযায়ি ভোট দেয়ার পদ্ধতি চলে আসলেও এবার আত্মীয়, গ্রাম-এলাকার ব্যক্তিকে ভোট দেবেন, না দলীয়প্রার্থীকে ভোট দেবেন; এ নিয়ে ভোটাররা চরম সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন বক্তব্য দিয়েছেন অনেকেই।
এদিকে প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েই প্রার্থীরা পুরো নির্বাচনী এলাকাকে ঢেকে ফেলেছেন পোস্টার দিয়ে, এছাড়া লিফলেট দিচ্ছেন ভোটারদের হাতে হাতে। দিরাই পৌরশহরের প্রতিটি অলিগলিতে পোস্টার আর ব্যানার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে ভোটারদের। তাছাড়া ব্যাপক প্রচারের জন্য মাইকিংও চলছে প্রার্থীদের পক্ষে।
দিরাই পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ধানেরশীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী উপজেলা যুবদলের সভাপতি মোঃ মঈন উদ্দিন চৌধুরী মাসুক, নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোশাররফ মিয়া, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয়পার্টি মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম সরদার রফিক ও মশাল প্রতীক নিয়ে জাসদের মনোনীত প্রার্থী মোজাম্মিল হক।
এছাড়া মহিলা কাউন্সিলর পদে সংরক্ষিত ১নং আসনের বর্তমান কাউন্সিলর সাবিনা বেগম (আঙ্গুর), কোশনামা বেগম (কাঁচি) ও শাহারভানু (হারমোনিয়াম)। সংরক্ষিত ২নং আসনের বর্তমান কাউন্সিলর রেহেনা বেগম (ভ্যানেটিব্যাগ), আলীমুন নেছা (পুতুল) ও হেলেনা বেগম (কঁাঁচি)। সংরক্ষিত ৩নং আসনের বর্তমান কাউন্সিলর শামীমা পারভিন নাজমা (ভ্যানেটিব্যাগ), হেলেনা বেগম খেলা (আঙ্গুর), বাসন্তী সরকার (কাঁচি) ও মাধবী দে (পুতুল) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯টি ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন ১নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মোশাহিদ মিয়া (গাজর), মিয়াধন মিয়া ইদন (উটপাখি), আতিকুর রহমান (ডালিম), কয়ছর মিয়া (পানির বোতল) ও ময়না মিয়া (পাঞ্জাবি)। ২নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর নিকেশ রঞ্জন সরকার (পাঞ্জাবি), আব্দুল হক মিয়া (উটপাখি) ও এবিএম মাসুম প্রদীপ (পানির বোতল)। ৩নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর নিবেশ রায় (উটপাখি), হাবিবুর রহমান কাছা (পানির বোতল) ও জাহেদুল ইসলাম (পাঞ্জাবি)। ৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মিজানুর রহমান (ডালিম), মফিজুর রহমান তালুকদার জুয়েল (পানির বোতল), সোহেল মিয়া (উটপাখি) ও নবীর হোসেন তালুকদার (পাঞ্জাবি)। ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এনামুল হক তালুকদার (পানির বোতল), জাহাঙ্গীর মিয়া (ডালিম), নুর মিয়া (উটপাখি), আব্দুল মতিন (গাজর) ও সুব্রত চৌধুরী শিতু (পাঞ্জাবি)। ৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ইয়াহিয়া চৌধুরী (টেবিল ল্যাম্প), হিরেন্দ্র দেবনাথ (পাঞ্জাবি), শরবিন্দু দাস (ব্রিজ), পংকজ পুরকায়স্থ (উটপাখি), শাহজাহান সিরাজ (ডালিম) ও কনিক চৌধুরী (পানির বোতল)। ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ রায় (পানির বোতল) ও বদরুল ইসলাম সেলিম (উটপাখি)। ৮নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর জয়নুল হক চৌধুরী (ডালিম), সোহেল মিয়া (পানির বোতল), আবুল কাশেম (পাঞ্জাবি), এমরান হোসাইন (উটপাখি) ও সফিক মিয়া (ব্রিজ)। ৯নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল মান্নান (পাঞ্জাবি), শাহজাহান মাহমুদ হেলাল (উটপাখি), লিয়াকত আলী (ব্রিজ), বেলাল মিয়া (পানির বোতল), সোহেল মিয়া (ডালিম) ও সবুজ মিয়া (টেবিল ল্যাম্প)।
উল্লেখ, মনোনয়নপত্র প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন কোনো প্রার্থীই তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করায় সকলের মধ্যে প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া হয় বলে জানিয়েছে উপজেলা নির্বাচন অফিস। সূত্র জানায়, দিরাই পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, সাধারণ কাউন্সিল পদে ৩৯ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। ৩ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রার্থীরা উপজেলা রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলতাফ হোসেনে কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন প্রার্থীরা।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ি পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ৩ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার, বাচাই ৫-৬ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ শনি ও রোববার, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ রোববার, প্রতীক বরাদ্ধ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ সোমবার ও ভোট গ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ বুধবার।