শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১১ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)’র আদলে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগের সুপারিশ করেছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। একই সঙ্গে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার নম্বর ৪০ এর পরিবর্তে ৬০ নম্বর করা ও দেশে শূন্যপদের তালিকা প্রতিমাসে বুলেটিন আকারে প্রকাশের প্রস্তাব করেন তারা। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় শিক্ষাবিদ, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ এমন মত দেন। সভায় শিক্ষাসংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবং সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিন বলেন, শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বার বার ওঠে আসে দুর্নীতি। ম্যানিজিং কমিটির পরিচালায় পরিবর্তন করা উচিত। আমাদের মূল বক্তব্য মেধাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া। ছাত্র ৩৩ পেলে পাস করবে আর শিক্ষক হওয়ার জন্য ৪০ নম্বর পাবেন তা না করে শিক্ষকের পাস নম্বর দ্বিগুণ করুন। এছাড়া ইউনিয়ন ভিত্তিক মেধা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব করেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত, শিক্ষানীতি অনুযায়ী পিএসসির অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করার জন্য শিক্ষাবিদরা মতামত দিয়েছেন। একটি নীতিমালার জন্য সকলের মতামত চেয়েছি। ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, আগে যারা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের জন্য কী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা জানতে চান। শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে পরিচালনা কমিটি সংস্কার দরকার। রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধিরা হস্তক্ষেপ করেন। ম্যানেজিং কমিটিতে যারা থাকেন তাদের যোগ্যতা নির্ধারণ করাও দরকার। জনপ্রতিনিধিদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিতে পারলে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সম্ভব। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. হারুন অর রশিদ বলেন, শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য হচ্ছে নির্দিষ্ট সত্য। এমপিরা ৪টি প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বে থাকেন। নিয়োগ বাণিজ্যের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে তারা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ভালো শিক্ষার জন্য ভালো শিক্ষক দরকার। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ভালো শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খন্দকার সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি ভালো পরীক্ষা নেয়ার জন্য পাস নম্বর বাড়ানো দরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, সারা দেশে ৭৪৫টি সরকারি ও ২৮ হাজার ৩৮৩টি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিবছর ৮ হাজার ২৫০ কোটি টাকার খরচ করতে হয় এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পেছনে। প্রতি বছর মেধা ভিত্তিক শূন্যপদের ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। প্রতিবছর ৩১শে অক্টোবরের মধ্যে জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে শূন্যপদের বিবরণ এনটিআরসিতে পাঠাবে। এখন থেকে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে। সনদের মেয়াদ থাকবে তিন বছর। সে আলোকে এনটিআরসি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা তালিকা অনুযায়ী তালিকা প্রকাশ করে উপজেলা মেধা তালিকা নিয়োগের অগ্রাধিকার পাবে। এরপর জেলা বিভাগ ও জাতীয় মেধা তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ পাবেন বলেও জানান তিনি।
সভায় অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এনামুল হক, শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মঞ্জুর আহমেদ, অধ্যাপক একরামুল কবির, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, দক্ষিণখান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন, প্রধান শিক্ষক মো. ইদ্রিস আলী প্রমুখ।