মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) সাবেক মেয়র ও সাবেক রাষ্ট্রদূত আধুনিক খুলনার রূপকার মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট শেখ তৈয়েবুর রহমান (৭৯) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। শুক্রবার রাত ১১টায় নগরীর নার্গিস মেমোরিয়াল ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মরহুমের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার বাড়িতে ছুটে যান খুলনার সকল দলের রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক একাধারে দীর্ঘ ১৭ বছর খুলনার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও খুলনার দায়িত্বপ্রাপ্তমন্ত্রী। তার মৃত্যুতে খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে অ্যাডভোকেট শেখ তৈয়েবুর রহমানের প্রথম জানাজা শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এরপর তার কফিনে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. আনিছুর রহমান বিশ্বাস, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. ফায়েক উজ্জামান, মহানগর ও জেলা বিএনপি, মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, যুবদল, যুবলীগ, ছাত্রদল, কেসিসি’র কর্মচারী ইউনিয়ন, ডায়াবেটিস সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়া হয়।
মরহুমের নামাজে জানাজায় অংশ নেন খুলনা-২ আসনের এমপি মিজানুর রহমান মিজান, এসএম মোস্তফা রশীদি সুজা এমপি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. ফায়েক উজ্জামান, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. আনিছুর রহমান বিশ্বাস, খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশিদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম নুরুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম, সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান, সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা প্রমুখ। যোহরবাদ গগণ বাবু রোডস্থ মসজিদে নূরে দ্বিতীয় জানাজা শেষে লাশ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। আজ রোববার মরহুমের মেয়েরা কানাডা ও লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর সোমবার লাশ বাগেরহাটের কররী গ্রামের নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে জানাজা শেষে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে শায়িত করা হবে বলে পরিবার সূত্র জানিয়েছে। মেয়রের স্ত্রী লায়লা রহমান জানান, গত ১৭ই অক্টোবর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তার ডান পাশ দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপর থেকে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে নার্গিস মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছু সময় পরেই তিনি মারা যান। তার একমাত্র ছেলে প্রকৌশলী শেখ আশিকুর রহমান ও তিন মেয়ে তৈয়েবা নাসরিন শম্পা আমেরিকায় চাকরিজীবী, মনিরা পারভিন রূপা আমেরিকায় ব্যবসায় জড়িত এবং ছোট মেয়ে নওরিন লায়লা বুবলী কানাডায় চাকরিজীবী। এ ছাড়াও তিনি অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ১৯৩৬ সালের ২১শে অক্টোবর বাগেরহাট সদরের কররী গ্রামে শেখ তৈয়েবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। শেখ তৈয়েবুর রহমানের পিতার নাম মরহুম শেখ মতিউর রহমান আর মাতার নাম মরহুমা সাহিদা খাতুন। তিনি বাগেরহাট জেলা সদরের মধুদিয়া ইছাময়ী হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। বাগেরহাট পি.সি. কলেজ থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে এল.এল.বি. ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি নিজ গ্রামের মধুদিয়া ইছাময়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেন এবং স্কুলটিকে উন্নতির পথে নিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি আইন ব্যবসায় যোগ দেন। ১৯৬৪ সাল থেকে ওই স্কুলের কখনও সম্পাদক কখনও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে সভাপতি হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।