শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
যন্ত্রণা সইতে পারছেনা শিকড় মানবটি

যন্ত্রণা সইতে পারছেনা শিকড় মানবটি

filejjjjআমার সুরমা ডটকম : গাছের শিকড় নয়। হ্যাঁ প্রথম দর্শনেই হয়ত মনে হবে তাই। দেখেই মনে হতে পারে দুই হাতে সে কিছু গাছের শিকড় ধরে আছে। কিন্তু না, অজ্ঞাত এক রোগে তার হাতের আঙুলগুলো এখন গাছের শিকড়ে পরিণত হয়েছে। এই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত যুবকের নাম আবুল বাজনদার। তার এই অবস্থা একদিনে হয়নি। ২০০৫ সালে তার এই রোগ প্রথম দেখা যায়। তখন তার বয়স ১৫ বছর। ওই বছর খুলনায় বৃষ্টিতে চারদিকে ডুবে যায়। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় চারদিকে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সেই থৈ থৈ পানির মধ্যে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতো আবুল বাজনদার।
এক সময় তার হাতে-পায়ে আঁচিলের মতো দেখা দেয়। সেই আচিল ১০ বছরে ধীরে ধীরে আজ শিকড়ের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খুলনার পাইকগাছার আবুল বাজনদারের ছবি ছড়িয়ে পড়লে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট প্রধান অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। বর্তমানে আবুল তার অধীনে চিকিৎসাধীন। খুলনা জেলার পাইকগাছা পৌর সদরের ৫নং ওয়ার্ড সরল গ্রামের বাসস্ট্যান্ডের পাশে ছোট্ট কুঁড়েঘরে মানিক বাজনদার তার স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন। তারা তিনজনই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত।
আবুলের বাবা মানিক বাজনদার ও তার মা আমেনা বেগম গণমাধ্যমকে জানান, ২০০৫ সাল, আবুলের বয়স তখন ১৫ বছর। ওই বছর বৃষ্টির সময় চারদিকে পানিতে সয়লাব। বাড়ির উঠানেও জলাবদ্ধতা। এভাবে পানির মধ্যে কয়েক দিন ভ্যান চালানোর এক পর্যায়ে আবুলের হাতে পায়ে আঁচিলের মত রোগ দেখা দেয়। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে এখন সেটি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। এই রোগের কারণে দুই হাত দিয়ে কোনো কাজ করতে পারে না সে। ভাত খাওয়া, পোশাক পরিধানসহ প্রাকৃতিক ডাকের সকল কাজই তাকে অন্যের সাহায্য নিতে হয়।
অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে ঢাকা যাওয়ার মুহূর্তে তার মা আমেনা বেগম জানান, ওঝা-বৈদ্য, ডাক্তার-কবিরাজ দেখিয়েও কোনো কাজ হয়নি। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটানোর সামথ্য নাই তাদের। তারপরও বিভিন্ন মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে ছেলের চিকিৎসা করালেও কোনো উন্নতি হয়নি বরং ধীরে ধরে গাছের শিকড়ের মত হাত-পায়ের শিকড় হয়ে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। হঠাৎ কেউ দেখলে ভয় পেয়ে যায়। তার ছেলেকে দেখলে অন্য ছেলে মেয়েরা দূরে সরে যায়। চোখের পানি মুছতে মুছতে আমেনা বেগম জানান, আমার ছেলে বলে, ‘মা আমাকে একটু এন্ডিন খাইয়ে শান্তি দাও, আমি আর পারছি না।’
download (34)দুই হাতের মত শিকড় গেড়েছে দুই পায়ে এবং পায়ের তলাতেও। এই রোগের কারণে গত ৫-৬ বছর কোনো কাজ তো দূরের কথা, বাসা থেকে বের হওয়া বা ঘুমাতে পর্যন্ত পারে না সে। অন্যরা যাতে আতঙ্কগ্রস্ত না হয় সে জন্য কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে চলাচল করে সে। আবুল বাজনদার জানান, তার তিন বছরের একটি মেয়ে আছে । কিন্তু এই রোগের কারণে তাকে কোলে নিতে পারেন না। তিনি জানান, মাঝে মধ্যে হাতে প্রচ-জ্বালা যন্ত্রণা করে। হাত-পা ওজন হয়ে গেছে, তাই চলতে পারেন না।
আবুল বাজনদারের এই করুণ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দিলে বিভিন্ন মহল থেকে সাহায্য-সহানুভূতির বার্তা আসতে থাকে। ইতিপূর্বে এই রোগে আক্রান্ত ইন্দোনেশিয়ার এক রোগীর সন্ধান পেয়েছিল ডিসকভারি চ্যানেল। তাদের উদ্যোগে দুই বছর চিকিৎসার পর তার রোগ ভাল হয়ে যায়। তবে বেশি দিন তিনি জীবিত ছিলেন না। এর আগে খুলনার শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বিধান কুমার গোস্বামী জানান, অজ্ঞাত ভয়ঙ্কর এ ধরনের রোগ ইতিপূর্বে দেশের কোথাও দেখা যায়নি। এ ধরনের রোগী বাংলাদেশে এই প্রথম।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com