বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সারাদেশে ব্যাপকহারে কেন্দ্র দখল, প্রকাশ্যে সিল পেটানো, ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল দিয়ে বাক্স ভর্তি করে রাখা, প্রতিপক্ষের উপর ক্ষমতাসীনদের হামলা ও নারী-শিশু, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ শতাধিক লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন কমিশন এসব ঠেকাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে শতশত অভিযোগ জমা পড়লেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ইতিহাসের নজিরবিহীন দখলের এই নির্বাচনে জনপ্রিয় সব প্রার্থীরা অসহায়। অনেকের মতো কুমিল্লার মুরাদনগরের ১৭ নং জাহাপুর ইউনিয়ন পরিষদের টানা দীর্ঘ ৩৪ বছরের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান সৈয়দ তৌফিক আহমদও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব দফতরগুলোতে আকুতি জানিয়েছেন। কিন্তু এতে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাননি তিনি।
জানা গেছে, সৈয়দ তৌফিক আহমদ (তৌফিক মীর) জাহাপুর ইউনিয়নে দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকার কারণে এলাকায় তার জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। তার জনপ্রিয়তার কারণে প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগের প্রার্থী ভোটে পরাজিত হওয়ার আশঙ্কায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভোট চুরির প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে। গত ইউপি নির্বাচনে মুরাদনগরের ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত এ চেয়ারম্যানকে যেকোনো মূল্যে হারানোর সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সিইসি, স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব দফতরগুলোতে সৈয়দ তৌফিক আহমদ আকুতি জানিয়েছেন সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য। কিন্তু কারো সাড়া পাননি তিনি। বরং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কেউ কেউ তাদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ সৈয়দ তৌফিক আহমদকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন। এরপরও হাল ছাড়েন নি তিনি। সব বাধা অতিক্রম করে জীবনের শেষ নির্বাচনে লড়ে যেতে চান।
অভিযোগে জানা গেছে, আওয়ামীলীগের প্রার্থী ভোট ডাকাতি করতে এলাকায় গড়ে তুলেছেন মোটরসাইকেল বাহিনী। এই বাহিনী চেয়ারম্যান সৈয়দ তৌফিক আহমদ ও তার ভোটারদের নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছে। গত ৩১ মে রাতে অস্ত্রসহ ওই মোটরসাইকেল বাহিনী সৈয়দ তৌফিক আহমদ বাড়ি ঘেরাও করে এবং তাকে ভোটের মাঠ থেকে তাকে সরে যেতে হুমকি দেয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে না আসলে পরিণতি ভালো হবে না বলেও হুঁশিয়ার করে তারা।
জানা গেছে, ২ জুন দুপুরে স্থানীয় রানীমুহরী নামক গ্রামে প্রচারণা চালাতে যান সৈয়দ তৌফিক আহমদ। এসময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মোটারসাইকেল বাহিনী সৈয়দ তৌফিক আহমদ ও তার কর্মীদের উপর হামলা চালায়। এতে শফিক ও জয় নামে তার দু’জন কর্মী মারাত্মকভাবে আহত হন। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার পর ওই এলাকার মহিলারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ঝাড়–মিছিল বের করে। মহিলাদের প্রতিবাদের মুখে ওই সময় এলাকা ছাড়ে সন্ত্রাসী বাহিনী। ঘটনার পর উল্টো আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সৈয়দ তৌফিক আহমদ, তার ভাই ও তিন ছেলেসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করে। এমনকি পরে আবার এসে তারা ঝাড়–মিছিলকারী ওই মহিলাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলাও চালায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সৈয়দ তৌফিক আহমদ এর সম্ভাব্য এজেন্টদের ভোটের দিন কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিচ্ছে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর লোকেরা। সম্ভাব্য এজেন্ট ও তাদের পরিবারের সদস্যদের গুম করার হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবসরপ্রাপ্ত স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, মনে হচ্ছে যেন এক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তৌফিক মীর নির্বাচন করছেন। স্থানীয় ভোটাররা এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে চরম শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চান। যাতে জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেন।