বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৬ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন জেলায় এক রহিঙ্গাসহ পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শনিবার সংঘটিত এ বজ্রপাতে কক্সবাজারে ৩ , বাগেরহাটে ২, মাদারীপুর ২, নোয়াখালীতে ২, বরিশালে ১, চট্টগ্রামে ১, ঝালকাঠিতে ১, পটুয়াখালীতে ১, নারায়ণগঞ্জে ১ ও টাঙ্গাইলে ১ জনের মৃত্যু হয়।
কক্সবাজার: কক্সবাজারে পৃথক বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। উখিয়ার থাইংখালী রহমতের বিল এলাকায় বজ্রপাতে স্থানীয় মরহুম কামাল উদ্দিনের ছেলে সিরাজ উদ্দৌলা (৩৫) নিহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্যমতে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৮টার দিকে সিরাজ উদ্দৌলা তার মালিকানাধীন চিংড়ি ঘেরে কাজ করছিল। এ সময় বজ্রপাতে সে মারা যায়। টেকনাফের সাগর উপকূলীয় এলাকায় টেলা জাল দিয়ে মাছ শিকারের সময় বজ্রপাতে এক রোহিঙ্গা জেলের মৃত্যু হয়েছে। ১১জুন সকাল সাড়ে ৯টারদিকে টেকনাফের উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়া শামলাপুর রোহিঙ্গা বস্তির আমির হোসেনের পুত্র কামাল হোসেন (২২) টেলা জাল তথা পিনি জাল নিয়ে মাছ শিকারের সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মারা যায়। এদিকে প্রায় একই সময়ে চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী এলাকায় বজ্রপাতে প্রবাসী বাবুল (৪২) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সে স্থানীয় নুর মোহাম্মদের ছেলে।
নোয়াখালী: হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নে বজ্রপাতে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আজ সকালে ও সন্ধ্যায় এসব ঘটনা ঘটে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জাহাজমারা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভ্যানগাড়ি চালক হাসান উদ্দিন (১৮) বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে নিহত হন। তাঁর বাড়ি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে। এর আগে সকাল দশটার দিকে একই ইউনিয়নের কাটাখালি গ্রামের বাড়ির পুকুরে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মারা যান কামাল উদ্দিন (৩৫) নামের এক ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি কাটাখালি গ্রামে। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মো. মঈন উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোল্লাহাট ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে দিনমজুরসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরো দুইজন। মৃতরা হলেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মানিকনগর গ্রামের আজম শেখ (৪৮) ও মোরেলগঞ্জের চিংড়াখালী ইউনিয়নের পূর্ব চন্ডিপুর গ্রামের আল আমীন খান (৩৫)। শনিবার দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) রফিকুল ইসলাম গাজী জানান, ‘দুপুরে বজ্রপাতে আহত আজম ও খান জাহান আলী (৫০) নামে দুই দিনমজুরকে হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে আজম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। আহত খান জাহান আলীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।’ অন্যদিকে দুপুরে মোরেলগঞ্জের পূর্ব চন্ডিপুর গ্রামে বজ্রপাত হলে আল আমীন খান নামে এক কৃষক ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুল আলম জানান, ‘দুপুরে কৃষি কাজ করার সময় বজ্রপাতে এ ঘটনা ঘটে।’
বরিশাল: বরিশালের হিজলা উপজেলায় বজ্রপাতে আ. ছোবাহান (৫০) নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। শনিবার বিকেল ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আ. ছোবাহান উপজেলা সদরের খুন্না গোবিন্দপুরের বাসিন্দা। তিনি কাপড় ফেরি করে বিক্রি করতেন। স্থানীয় বাসিন্দা নূরুল আলম রাজু জানান, ‘দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে আ. সোবাহান আফতর আলী দরবেশ মক্তবে আশ্রয় নেন। এসময় বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হন ও মক্তবে আগুন ধরে যায়। পরে স্থানীয়রা সোবহানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় বজ্রপাতে মো. নজরুল ইসলাম (৮০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের চেতুয়াজানি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সহবতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তোফায়েল আহম্মেদ জানান, ‘দুপুরে সারাংপুর এলাকায় যাওয়ার উদ্দেশে নিজ বাড়ি থেকে বের হন নজরুল। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।’
মাদারীপুর: শনিবার দুপুরে মাদারীপুর শিবচরে কাওড়াকান্দি ঘাটে বজ্রপাতে লঞ্চে ফয়সাল সরদার নামে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। এছাড়াও জেলার রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি এলাকায় অজ্ঞাত এক শিশু নিহত হয়েছে। এ সময় আরও ২ জন যাত্রী আহত হন। বি আইডব্লিউটি সূত্রে জানা যায়, ‘এমভি মকবুল’ নামের লঞ্চটি মাওয়া থেকে ছেড়ে কাওড়াকান্দি ঘাটে এসে পৌঁছলে হালকা বৃষ্টি বর্ষণের সময় বজ্রপাতের সময় এর দু’জন যাত্রী গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় লোকজন আহত ২ জনকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার ফয়সাল সরদার (১৮) নামের একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ফয়সাল সরদার শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল গ্রামের নয়ন সরদারের ছেলে।
নারায়ণগঞ্জ: জেলার সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীর বৈদ্যেরবাজার ট্রলার ঘাট এলাকায় বজ্রপাতে এক ট্রলার চালক নিহত হয়েছেন। নিহত ট্রলার চালকের নাম মো. আনোয়ার হোসেন। শনিবার মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। আনোয়ার হোসেন মেঘনা উপজেলার নলচর গ্রামের সাব মিয়ার ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মেঘনা উপজেলার নলচর এলাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বৈদ্যোরবাজার ঘাটে শনিবার দুপুরে এসে পৌছায়। পরে যাত্রী নামানো শেষে তিনি ট্রলারে বসে ছিলেন। এসময় হঠাৎ বজ্রপাত তার ট্রলারে পড়লে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। পরে পরিবারের লোকজন লাশটি তার বাড়ি উপজেলার নলচরে নিয়ে যায়। নলচর গ্রামের ট্রলার চালক সাইদুল ইসলাম জানান, আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। পরে দেশে এসে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ক্রয় করে মেঘনা নদীতে নিজেই যাত্রী পারাপারের কাজ করে।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে রনি চানপাতি (২০) নামে চা বাগানের এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এতে চন্দন চানপাতি (২২) নামে আরেক শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার ভূজপুর ইউনিয়নের পূর্ব খৈয়া পুখিয়া গ্রামের খৈয়াছড়া চা বাগানে এ ঘটনা ঘটেছে। ভুজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ বলেন, চা বাগানে কাজ করার সময় বজ্রপাতে রনি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। চন্দনকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চন্দনের অবস্থা আশংকামুক্ত বলে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত নায়েক আবু হামিদ।
পটুয়াখালী: বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের চরমমিনপুর এলাকায় আজ বিকেলে বজ্রপাতে মোস্তফা দর্জি ওরফে লালু (৫৫) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তাঁর বাড়ি ওই ইউনিয়নের মমিনপুর-জাফরাবাদ গ্রামে। স্থানীয়রা জানান, আজ বিকেলে লালু উপজেলা সংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদীর চর মমিনপুর এলাকায় মাছ ধরতে যান। বিকেল চারটার দিকে বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শহিউদ্দিন লাভলু এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ঝালকাঠি: ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায় বজ্রপাতে লাকি বেগম (২৭) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বিকেলে উপজেলার ছোট কৈখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। লাকি ওই গ্রামের ফারুক হোসেনের স্ত্রী। ফারুক হোসেন জানান, বিকেলে বাড়ির পাশে মাছ ধরতে গেলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।