শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২১ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: উগ্রপন্থা ও জঙ্গিবাদের বিস্তার বিচ্ছিন্ন বা স্বতঃস্ফূর্ত কোন ঘটনা নয়। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সুপরিকল্পিত, দীর্ঘ প্রস্তুতি এবং রাজনৈতিক হঠকারিতা ও অবিমৃষ্যকারিতা। এর শেকড় আজ অনেক গভীরে। এ থেকে উত্তরণে যে সংগ্রাম তাও হতে হবে সর্বাত্মক ও দীর্ঘমেয়াদি। জঙ্গিবাদের এই ভয়াবহ বিস্তারকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে এ থেকে মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্য ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যুক্ত বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
বিবৃতিতে তারা বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সাম্প্রতিক জঙ্গি আক্রমণে দেশের শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত, ক্ষুব্ধ। ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে মুক্তচিন্তার লেখক, প্রকাশক, সংস্কৃতিকর্মী, সংখ্যালঘু ও ভিন্ন জীবনধারার অনুসারীদের টার্গেট করে ধারাবাহিক এসব হত্যাকা- যেন অন্তহীন মৃত্যুর এক মিছিলের সূচনা করেছে। যা বাংলাদেশকে এক প্রতিকারহীন আতংকের জনপদে পরিণত করেছে। দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার আবহের মধ্যে হামলার ধরন ও মাত্রা বিবেচনায় গুলশান ও শোলাকিয়ার সমন্বিত ও নৃশংস এই দু’টি হামলার ঘটনা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের এক নতুন স্তরে এনে ফেলেছে। এ নিয়ে কোনও প্রকার দ্বিধা-সংশয়, দায় এড়ানো বা দোষারোপের সময় আজ অতিক্রান্ত। অমোঘ বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ আজ জঙ্গি উপদ্রুত এবং জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ উগ্রপন্থা প্রভাবিত। এ থেকে মুক্তি পেতে হবে এখুনি।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের জরুরি দু’টি কর্তব্য রয়েছে। প্রথমত, সম্ভাব্য হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে চিহ্নিত এবং নিবৃত্ত করা। দ্বিতীয়ত, উগ্রপন্থার বিস্তারের সামাজিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট চিহ্নিত করে তা উপশমের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। প্রথম করণীয়’র ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কেবল শক্তি প্রয়োগ করে এই সন্ত্রাসবাদ দমন করা যায়নি। বরং উল্টো তা সন্ত্রাসবাদীদের শক্তি ও সমর্থন বৃদ্ধিতে এবং দেশে দেশে তার বিস্তারেই অবদান রেখেছে। তাই এই উগ্রপন্থা ও জঙ্গিবাদ রোধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে সমাজের ভেতর থেকেই। উগ্রপন্থাকে উৎসাহিত করে এমন যে কোন তৎপরতাকে চিহ্নিত ও প্রতিহত করার জন্যে সমাজকে প্রস্তুত করতে হবে। তার জন্যে দল-মত নির্বিশেষে সকল অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক শক্তির ইস্পাত কঠিন ঐক্য আজ অবিকল্প। সুজন সভাপতি ও সম্পাদক বলেন, জঙ্গিবাদী ন্যারেটিভের মোকাবিলায় একটি বিকল্প ন্যারেটিভের প্রস্তাবনা আজ জরুরি। যা সমাজের অভ্যন্তরে উগ্রপন্থার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে। এবং একটি উদার, সহিষ্ণু ও বহুত্ববাদী সমাজ গড়ে তোলার ভিত্তি রচনা করবে।
বিবৃতিতে জানানো হয়, জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আগামী ১৬ই জুলাই সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেশব্যাপী এক মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকায় এই মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হবে শাহবাগে, জাতীয় জাদুঘরের সামনে। এই কর্মসূচীতে যুক্ত হওয়ার জন্যে সমমনা সকল সংগঠন ও নাগরিকদের আহ্বান জানায় সংগঠনটি।