বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫৪ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : কিরগিজস্তানের একটি নিষ্ঠুর ঐতিহ্য হলো বিয়ের আগে কনেকে অপহরণ করা। সেখানে একজন অবিবাহিত নারীকে যদি কারো বিয়ে করার ইচ্ছা করা হয়, তাহলে ওই নারীকে সেই ব্যক্তি কিডন্যাপ বা অপহরণ করে। তারপর ওই নারীর উপর চলে নিষ্ঠুর নির্যাতন। বিয়েতে রাজি হওয়ার পর সে নির্যাতন বন্ধ হয়।
সাম্প্রতিক একটি স্থানীয় এনজিও এর গবেষণার পর জানা যায়, কিরগিজস্তানের পঞ্চাশ শতাংশ বিবাহ এভাবেই সম্পন্ন করা হয়। মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে তাকে তারা প্রচুর মানসিক চাপে রাখে। মেয়েরা বিয়ে করতে রাজি না হলে ছেলের বাড়ির নারীরা ওই মেয়ের মগজ ধোলাই করেন। এরপরও বিয়ের জন্য রাজি না হলে, মেয়ের সাথে ধর্ষণের মত জঘন্য কাজ করা হয়। এই ঐতিহ্যের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের কাহিনী শোনা যায়। কিন্তু, কিরগিজস্তানের দরিদ্র অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন করা যাচ্ছে না। এভাবে বিয়ের শিকার হয়েছিলেন ‘রোজা’ নামে এক নারী। তিনি নিজের জীবনের করুণ কাহিনী তুলে ধরেছিলেন এনজিও কর্মীদের কাছে।
রোজাকে ১৯ ও ২৩ বছর বয়সে দুইবার করে অপহরণ করা হয়। প্রথমবার তাকে অপহরণ করে ছেলে তার বাসায় নিয়ে যায়। তখন তাকে চা-নাস্তা করানো হয়। ছেলের মা তাকে ছেলের সকল প্রশংসার কথা বলতে থাকেন এবং বিয়ের জন্য রাজি হতে বলেন। তিনি মানা করে দেন, বিধায় পরিবারের বাকি সদস্যরা তাকে এসে বোঝাতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাকে হুমকি দেওয়া শুরু করেন তারা। সারারাত তাকে বোঝানোর কার্যক্রম চলে, তার উত্তর ‘না’ই থাকে। পরের দিন সকালে তাকে তার মা-বাবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি বিবাহের জন্য রাজি হননি বিধায় তার বাবা তাকে অনেক কথা শোনান। তারা মনে করেন, মেয়ের বিয়েতে মতামত না থাকার কারণে তারা অপমানিত হয়েছেন। পরবর্তীতে ২৩ বছর বয়সে তাকে আবার অপহরণ করা হয়। সেবার তাকে ধর্ষণ করা হয়। দুবারই তার উত্তর না ছিল। বর্তমানে রোজা তার নিজ পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে দুই সন্তানের জননী হয়েছেন।
কিরগিস্তানে নারীদের অপহরণ করাকে কোনো খারাপ কাজ মনে করা হয় না। কিন্তু মেয়েরা বিয়ের জন্য রাজি না হলে, উল্টো তাদেরকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এ ধরণের নৃশংস কাজ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, এখনও তা যথেষ্ট নয়। প্রতিদিন প্রায় ৩২জন নারীকে বিবাহের জন্য অপহরণ করা হয়। এরকম ৭০০ মামলা থেকে মাত্র একজন দোষীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়। বেশীরভাগ নারী ভয়ে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যান, আবার অনেকে নিজের জীবন নিজ হাতেই শেষ করে ফেলেন। তবু এ জঘণ্য প্রথা মেনে নিতে পারেন না।