শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : গৌতম লুইস এখন একজন সফল কর্মাশিয়াল পাইলট। বর্তমানে বিট্রিশ নাগরিক এই গৌতমকেই এক সময় তার নিজের বাবা-মা রাস্তায় ফেলে দিয়ে গিয়েছিলেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র দুই বছর। পোলিও আক্রান্ত বাবা-মা পরিত্যক্ত রাস্তার শিশু। সেখান থেকে গৌতমের এই অবস্থায় পৌঁছতে যার সবচেয়ে বড় অবদান, তিনি হলেন মাদার তেরেসা।
নিজের বাবা-মা-র রূপটা যে এমন ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা তখন বোঝার মতো বোঝার বয়স ছিল না গৌতমের। কীভাবে যে পরিবারহারা হয়ে গিয়েছিলেন, তা আজও ভাবতে বসলে অবাক হয়ে যান তিনি। সালটা ছিল ১৯৭৯। গৌতমের বয়স তখন ২ বছর। নামের পাশে লুইস পদবীটাও লাগেনি। পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে ২ বছরের গৌতমের তখন ঠাঁই ছিল হাওড়া শহরের রাস্তাঘাট।
আচমকাই একদিন এসেছিলেন মানুষটি। নীল পাড় সাদা শাড়ি। মাথাটা কাপড় দিয়ে ঢাকা। স্নেহভরা হাত দিয়ে রাস্তা থেকে তুলে নিয়েছিলেন পোলিও রোগাক্রান্ত শিশুটিকে। নিয়ে গিয়েছিলেন নিজের ঠিকানা ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটি’-তে। পরে গৌতম জেনেছিলেন, ওই মহিয়সী নারীর নাম মাদার তেরেসা। এক মা তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল রাস্তায়। আর এক মা তাকে তুলে নিয়েছিলেন রাস্তা থেকে। বড় হয়ে এই ঘটনার কথা ভাবতে বসলে অবাক হয়ে যেতেন গৌতম।
গৌতম এখন ব্রিটিশ নাগরিক। তার নামের পাশে ‘লুইস’ পদবী। বর্তমানে একজন সফল কর্মাশিয়াল পাইলট গৌতম। লন্ডনে রয়েছে তার ফ্লাইং স্কুল। যেখানে ‘ডিসেব্লড পাইলট’-দের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। কিন্তু, এতকিছুর পরও হাওড়া শহর, কলকাতা, মিশনারিজ অফ চ্যারিটি বা মাদার তেরেসা কাউকেই ভুলতে পারেননি গৌতম লুইস। বিশেষ করে মাদারের স্নেহভরা মুখটার কথা যখনই তিনি ভাবেন, তখনই আবেগে রুদ্ধ হয়ে যায় তার হৃদয়। মনে পড়ে যায় মাদারের স্নেহ-সান্নিধ্যে কাটানো সেই দিনগুলি। মাদারের সঙ্গে গির্জায় প্রার্থনায় যোগ দেওয়ার ক্ষণ।
তাই ভ্যাটিকান যখন মাদারকে ‘সন্ত’ উপাধিতে ভূষিত করতে চলেছে, তখন গৌতম লুইস ফিরে গেছেন তার ছোটবেলার শহর কলকাতায়। মাদার তেরেসাকে নিয়ে একটি ছবি বানিয়েছেন গৌতম। যাতে কলকাতার বহু গণ্যমান্য মানুষকে অংশীদার করেছেন তিনি। ছবিতে ঊষা উত্থুপকে দিয়ে গানও গাইয়েছেন। মাদার তেরেসাকে নিয়ে গৌতমের এই ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে নন্দনে মাদার-কে নিয়ে চলা এক চলচ্চিত্র উৎসবে।
ছোট্ট গৌতমকে মাদার তেরেসার ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটি’ থেকে দত্তক নিয়েছিলেন এক বিশ্বখ্যাত পর্দাথবিদ। তাদের হাত ধরেই লন্ডনে বাস শুরু হয়েছিল গৌতমের। তার মতে, আজ তিনি যে নতুন জীবন পেয়েছেন, একজন কৃতী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা করতে পেরেছেন তার পিছনে শুধুই রয়েছেন মাদার টেরেসা। এমন ‘মা’-এর কথা এখনকার জেনারেশনের আরও বেশি করে জানা উচিত বলেই মনে করেন গৌতম। আর তাই তিনি তৈরি করেছেন ছবিটি। যার নামও দিয়েছেন ‘মাদার তেরেসা অ্যান্ড মি’।