সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য নীতিমালা

কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য নীতিমালা

আমার সুরমা ডটকম ডেক্স*আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর তাৎক্ষণিক একটি মেমোরেন্ডাম (স্মারক) তৈরি করবেন। ওই কর্মকর্তা অবশ্যই গ্রেপ্তার ব্যক্তির স্বাক্ষর গ্রহণ করবেন, যেখানে তারিখ ও গ্রেপ্তারের সময় উল্লেখ থাকবে।

*আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করলে ওই ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। নিকটাত্মীয়র অনুপস্থিতিতে গ্রেপ্তার ব্যক্তির পরামর্শ অনুযায়ী তাঁর কোনো বন্ধুকে জানাতে হবে। যথাসম্ভব দ্রুত সময়ে বিষয়টি জানাতে হবে। এ কাজে ১২ ঘণ্টার বেশি দেরি করা যাবে না। গ্রেপ্তারের সময়, স্থান এবং কোথায় আটক রাখা হয়েছে, তা-ও জানাতে হবে।

*কোন যুক্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কার তথ্যে বা অভিযোগে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁর ঠিকানাসহ কেস ডায়েরিতে লিখতে হবে। আটককৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর কাছে অভিযোগকারীর নাম ও অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করতে হবে।

*১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারায় উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কোনো ব্যক্তিকে ৫৪ ধারায় আটক করা যাবেনা।

*আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় নিজের পরিচয় প্রকাশ করবেন। যদি দাবি করা হয়, তবে যাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং যাঁরা উপস্থিত আছেন, তাঁদের পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।

*গ্রেপ্তার ব্যক্তির শরীরে যদি কোনো রকম ইনজুরির চিহ্ন পাওয়া যায়, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ইনজুরির কারণ ও বর্ণনা লিপিবদ্ধ করবেন। ওই ব্যক্তিকে কাছের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবেন এবং উপস্থিত চিকিৎসকের সনদ সংগ্রহ করবেন।

*যদি কোনো ব্যক্তিকে তাঁর বাসা বা ব্যবসায়িক স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে ওই ব্যক্তিকে থানায় আনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর স্বজনকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাতে হবে।

*গ্রেপ্তার ব্যক্তি চাইলে কাছের স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা আইনজীবীর কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ চাইলে তা দিতে হবে।

*ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী যখন কোনো ব্যক্তিকে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয়, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা তাঁর প্রতিবেদনে কেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হয়নি, তা ১৬৭(১) ধারায় বর্ণনা করবেন। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন সুনির্দিষ্ট বলে মনে করছেন, তা-ও উল্লেখ করতে হবে। কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কেস ডায়েরিও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হস্তান্তর করবেন। হাকিম, বিচারক ও ট্রাইব্যুনালের প্রতি গাইডলাইন অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে বিচারিক আদালতের জন্য নয় দফার গাইডলাইন দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরমধ্যে রয়েছে:

*যদি কোনো ব্যক্তিকে কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যবিধির ১৬৭(২) ধারা অনুসারে কেস ডায়েরি ছাড়া উপস্থাপন করেন, তবে ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত বা ট্রাইব্যুনাল ওই ব্যক্তিকে ধারা ১৬৭ অনুযায়ী মুক্তি দেবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর কাছ থেকে একটি বন্ড নিতে হবে।

*আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক কোনো ব্যক্তিকে অন্য কোনো সুনির্দিষ্ট মামলায় যদি গ্রেপ্তার দেখাতে চায়, সে ক্ষেত্রে যদি ডায়েরির অনুলিপিসহ তাঁকে আদালতে হাজির না করা হয়, আদালত তা মঞ্জুর করবেন না। গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের ভিত্তি না থাকলে বিচারক আবেদন খারিজ করে দেবেন।

*ওই শর্ত পূরণ সাপেক্ষে যদি কোনো ব্যক্তিকে আটকের ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা না যায়, যা ১৬৭(২) ধারায় রয়েছে এবং ওই মামলা যদি দায়রা আদালত বা ট্রাইব্যুনালে বিচারযোগ্য হয়, তবে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৩৪৪ ধারা অনুযায়ী রিমান্ডে পাঠাতে পারবেন; যা একবারে ১৫ দিনের বেশি হবেনা।

*পুলিশ প্রতিবেদনে (ফরোয়ার্ডিং) বর্ণিত কারণ যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সন্তোষজনক মনে হয় এবং কেস ডায়েরিতে বর্ণিত অভিযোগ অথবা তথ্য যদি দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কেস ডায়েরিতে যদি ওই ব্যক্তিকে আটক রাখার জন্য তথ্য থাকে, ম্যাজিস্ট্রেট ওই ব্যক্তিকে আরও আটক রাখার জন্য আদেশ দিতে পারবেন।
*১৬৭ ধারায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কোনো আদালতে হাজির করা হলে শর্তগুলো পূরণ করা হয়েছে কি না, সেটা দেখা ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারকের দায়িত্ব।
*যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এটা বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেকোনো সদস্য বা কর্মকর্তা (যাঁর কোনো ব্যক্তিকে আইনত কারারুদ্ধ করার ক্ষমতা আছে) আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কার্যক্রম করেছেন, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২২০ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
*যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে রিমান্ডে বা তাঁর হেফাজতে নেবেন, তখন তাঁর দায়িত্ব হচ্ছে নির্ধারিত সময় শেষে তাঁকে আদালতে হাজির করা। যদি পুলিশি প্রতিবেদন বা অন্য কোনোভাবে জানা যায় যে গ্রেপ্তার ব্যক্তি মারা গেছেন, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির (ভিকটিম) শারীরিক পরীক্ষার নির্দেশ দেবেন। যদি দেখা যায়, মৃত ব্যক্তির দাফন হয়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে মরদেহ উঠিয়ে মেডিকেল পরীক্ষার নির্দেশ দেবেন। যদি মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনে দেখা যায়, নির্যাতনের কারণে মৃত্যু হয়েছে, তবে ম্যাজিস্ট্রেট ২০১৩ সালের হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী ওই কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওই কর্মকর্তা, যাঁর কাস্টডিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেবেন।
*যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে উপাদান বা তথ্য থাকে যে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩-এর ধারা ২-এ বর্ণিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি হেফাজতে নির্যাতন বা মৃত্যুর শিকার হয়েছেন, সে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে পাঠাবেন। আর মৃত্যুর ক্ষেত্রে আঘাত বা মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ডে পাঠাবেন। যদি মেডিকেল পরীক্ষায় দেখা যায় যে আটক ব্যক্তিকে নির্যাতন করা হয়েছে অথবা নির্যাতনের কারণে মৃত্যু হয়েছে, এক্ষেত্রে বিচারক সংশ্লিষ্ট আইনের ৪ ও ৫ ধারায় মামলা দায়েরের জন্য অপেক্ষা না করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ১৯০(১)(সি) ধারা অনুযায়ী অপরাধ আমলে নেবেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য:
*উঁচু মানের পেশাগত দায়িত্বশীলতা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মানুষকে বেআইনি কাজ থেকে রক্ষা করবেন এবং কমিউনিটিকে সেবা দেবেন এবং সব সময় আইন মেনে চলবেন।
*দায়িত্ব পালনকালে মানুষের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করবেন এবং ব্যক্তির মানবাধিকার সমুন্নত রাখবেন।
*অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কেবল দায়িত্ব পালনে আবশ্যক হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করতে পারে।
*সংবিধান স্বীকৃত নাগরিক অধিকারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেবল সম্মানই করবে না, সুরক্ষাও করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com