বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের জাফলং। পাহাড় টিলা আর চা বাগান সংলগ্ন সীমান্ত ঘেষা জাফলং প্রকৃতিকন্যা নামেও পরিচিত। সিলেট নগরী থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে জাফলংয়ের অবস্থান। গোয়াইনঘাট উপজেলার অধীন জাফলংয়ের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই সেখানে আসেন নানা বয়সের দেশি-বিদেশি পর্যটক। ঈদ ও অন্যান্য ছুটির সময়ে জাফলংয়ে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। এখানে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে স্বচ্ছ জলরাশির পিয়াইন নদী। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে এই নদী থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট গর্তে বালু জমে চোরাবালির সৃষ্টি হওয়ায় এবং স্বচ্ছ জলধারায় গভীরতা কম দেখা যাওয়ায় কেউ কেউ পানিতে গোসল করতে নেমে তলিয়ে যান। পরে তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ছোট নৌকায় ভ্রমন করতে যেয়েও পিয়াইন নদীতে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২ বছরে জাফলংয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছেন ৩৭ জন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পিয়াইন নদীতে গোসল করতে নেমে প্রাণ হারান ঢাকার দুই কলেজ ছাত্র। আব্দুল্লাহ অন্তর (১৮) ও সোহাগ ঘোষ (১৭) নামের এই দুই তরুণ ঢাকার কবি নজরুল কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। গত ২২ জুলাই সোহাগ ও অন্তরসহ ওই কলেজের ৬ ছাত্র জাফলং বেড়াতে আসেন। তারা ওইদিন বিকেলে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টে পিয়াইন নদীতে গোসল করতে নামেন। এসময় আবদুল্লাহ অন্তর ও সোহাগ ঘোষ স্রোতের টানে তলিয়ে যান। পরে দু’দিন পর একজন ও তিনদিন পর আরেক জনের লাশ পাওয়া যায়। গত বছরও পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে জাফলংয়ে পর্যটকদের ঢল নেমেছিলো। সে সময় তিন দিনের ব্যবধানে নদীতে গোসল করতে নেমে ও নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান শিশুসহ ৭ জন। এর মধ্যে গতবছর ২ আগস্ট প্রাণ হারান নারায়ণগঞ্জের জসিম উদ্দিন। এর আগের দিন এ পিয়াইন নদীর শাখা বিছনাকান্দি নদীতে নৌকা ডুবে প্রাণ হারান সাজেদুল হক। ৩১ জুলাই পিয়াইন নদীতে নৌকাডুবে মারা যান মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাকিল (১০), মামুন (২২) ও সাদেক হোসেন (২০)। একই দিনে চোরাবালিতে হারিয়ে যান সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ হোসনাবাদ এলাকার কামরুল (২০) এবং সাঁতার কাটতে গিয়ে মারা যান অজ্ঞাত এক যুবক। এছাড়া, গত এক দশকে পিয়াইন নদীতে ডুবে মারা গেছেন আরো ২৮ জন। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১৭ আগষ্ট ঢাকার শনির আখড়া এলাকার শুভ আহমদ, ২৫ অক্টোবর ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কলেজ ছাত্র ইমরান হোসেন এবং ৩০ মে মাদারীপুর সদর উপজেলার চলকিপুর গ্রামের মোঃ ইব্রাহীমসহ ৪ জন মারা যান। ২০১২ সালের ২২ আগষ্ট ঢাকা জেলার ফাহাদ উদ্দিন, ৩০ আগষ্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়া এলাকার হিমেল রাজ সঞ্জয়সহ মোট দুইজন মারা যান। ২০১০ সালের ২৩ মার্চ ঢাকার খিলগাঁও এলাকার তারেক আহমেদ, ২০ মে রফিকুল ইসলাম ও গৌরাঙ্গ কর্মকার, ২২ মে ঢাকার শাহরিয়ার আহমেদ রাব্বি, ২ জুলাই ঢাকার তেজগাঁও এলাকার শাহরিয়ার শফিক, ৩০ জুলাই জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ এলাকার মুস্তাকিন তালুকদার, ১২ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠি জেলার রুহুল আমিন খান রুমিসহ মোট সাতজন মারা যান। ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি হবিগঞ্জ বানিপুর এলাকার ইউনুছ মিয়া, ৮ মে ঢাকার মিরপুরের ফারুক আহমদ, ২১ জুন নরসিংদী সদর এলাকার সজিব মিয়াসহ মোট তিনজন মারা যান। ২০০৮ সালের ৯ নভেম্বর ঢাকা পল্লবী এলাকার দিলশাদ আহমেদ ও ২০০৬ সালের ১৬ ফেব্রুুয়ারি গোয়াইনঘাট উপজেলার মুসা মিয়া, ১৬ আগষ্ট একই উপজেলার ফখরুল ইসলামসহ দুইজন মারা যান। ২০০৪ সালে ২ জন, ২০০৫ সালে ১জন এবং ২০০৭ সালে ২ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়। ২০০৩ সালের ১৫ আগস্ট জাফলংয়ে পিয়াইন নদীতে সলিল সমাধি ঘটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রেজাউর রহমান ফয়সাল ও রাজন আহমদের।