বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
তোপের মুখে পাউবোর কর্মকার্তারা: তুলোধুনো করলেন জেলা প্রশাসক

তোপের মুখে পাউবোর কর্মকার্তারা: তুলোধুনো করলেন জেলা প্রশাসক

সাইফ উল্লাহ, বিশেষ সংবাদদাতা (সুনামগঞ্জ): একের পর এক হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে বোরো ফসলী ধান তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও পিআইসির লোকজন হাওরের কৃষক প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের তোপের মুখে রয়েছেন। হাওরের বাঁধ নিয়ে লুপাট ও দুর্নীতির বিষয়ে এরই মধ্যে সরাসরি পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে তুলোধুনো করলেন জেলা প্রশাসক। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় শুধু জেলা প্রশাসকই নন, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনরাও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন গংদের নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরে হাওরের বাঁধের নামে কোটি কোটি টাকা লুপাটের ব্যাপারেও কড়া সমালোচনা করেন।
চলতি বছর সুনামগঞ্জে বোরো ফসলের আবাদ করা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। ৪২টি হাওরের ফসল রক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ মেরামতে জন্য ৫৮ কোটি টাকা ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের বৃহৎ ৩৭টি হাওরসহ মোট ৪২টি হাওরে ১০ কোটি ৭৭ লাখ ব্যয়ে ২২৫টি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) ও ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৬টি প্যাকেজে ঠিকাদার দিয়ে বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের নামে চলতি বোরো মৌসুমে হরিলুট চালিয়েছে। পিআইসির প্রকল্প বাস্তবায়ন ২৮ ফেব্র“য়ারি ও ঠিকাদারের প্রকল্প বাস্তবায়ন ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পিআইসির ও ঠিকাদারের কাজ সময়মত শেষ হয়নি। পরে গত কয়েকদিনে শতাধিক হাওরের বোরো ফসল বৃষ্টির পানিতে ও ওপারের ঢলে তলিয়ে গিয়ে কয়েক’শ কোটির টাকার অধিক ফসলহানি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শেখ মোঃ রফিকুল ইসলাম রবিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভায় উপস্থিত থাকা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকেরা খুবই ধৈর্যশীল! তারা তাদের কাজ করবে করবে বলে যখন বৃষ্টি বাড়ে এবং লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি পরিমাণ পানি হয়, তখন আপনারা (পাউবো) বলেন, এটা আর আমাদের সাধ্যের ভিতরে নেই। তখন বলবেন, কৃষকরা যেভাবে পারে তারা তাদের ফসল রক্ষায় কাজ করুক। আর অপরদিকে বিল পাস হলে সকল ঠিকাদারসহ আপনারা বিল ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে চলে যাবেন। আপনাদের ভিতরে যদি ১০০ ভাগের মধ্যে একভাগ মনুষ্যত্ববোধ থাকত, তাহলে এই (ফসল ডুবির) ঘটনা আমাদের দেখা লাগত না।
জেলা প্রশাসক আফসারকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, আপনাকে আমি কয়েকবার ফোন দিয়েছি আপনি আমার ফোন ধরেন না, আমি আপনাকে বললাম, জরুরী অবস্থায় বস্তা পাঠান হাওরে, আপনি পাঠালেন দু’দিন পর। আমরা লক্ষ্য করেছি, বিগত বছর হাওরের যে পয়েন্টেগুলো ভেঙে পানি ডুকেছিলো, ছিল ঠিক এবারও সেই পয়েন্ট দিয়েই বাঁধ ভেঙ্গে পানি ডুকছে হাওরে। স্থায়ী সমাধানে না গিয়ে ঘুরে ফিরে প্রতিবছর আপনারা ইচ্ছে করেই লুপাটের সুবিধার্তে একই জায়গায় পুনরায় প্রকল্প দেন। আর আশেপাশে থেকে যতসামান্য মাটি ভরাট করে বিল হজম করেন, এ খেল আর কতদিন খেলবেন?
জেলা প্রশাসক সভায় থাকা জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনদের জানান, আমি সচিব-মন্ত্রী পরিষদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, টাকার কোনো সমস্যা নেই। টাকা লাগলে সাথে সাথে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তাছাড়া আমি নিজে গিয়ে হাওরের অনেক বাঁধ পরিদর্শন করেছি। আমি লোকজনকে সাহস জোগাতে নিজে মাটি কেটেছি। কিন্তু আপনাদের (পাউবোর) দেখা পাওয়া যায় না বাঁধের আশপাশে।
ঠিকাদারদের প্রসঙ্গে শেখ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা কোনো কাজ করবে না, তারা ফাইল ওয়ার্ক আর লোক দেখানোর জন্য কিছু কাজ করাবে, আর করাতে লম্বা সময় নিবে এবং বন্যা হওয়ার পর বলবে আমরা আমাদের যথাসাধ্য কাজ করেছি। এসব হাওরের ফসল ডুবির কারণে এখন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারদেরই সব দায়ভার নিতে হবে।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ কামরুজ্জামান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ জাহিদুল হক, পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল, সহকারি পুলিশ সুপার তাপস সরকার, জেলা রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট পীর মতিউর রহমান, নারীনেত্রী শীলা রায়, বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, সুধীজন ও জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনারগণ উপস্থিত ছিলেন।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আফসার উদ্দিন প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, আসলে একেরপর এক হাওরের ফসল ডুবির পর হাওরে যাবার মত পরিবেশ নেই পাউবোর ও পিআইসি এবং ঠিকাদারদের, যে কোন মুহুর্তে সবাই আমরা নাজেহাল হবার আতংকে রয়েছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com