শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৭ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের পতনের পর পাচার হওয়া লাখ লাখ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনার কথা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়ে আসছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমলের পাচারের অর্থ ফেরাতে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে এবার আলোচনায় এসেছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে বিগত স্বৈরাচারী শাসনামলে পাচার হওয়া মেধা শক্তিকে ফিরে আনার বিষয়টি। দেশীয় মেধা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উন্নত দেশ বিনির্মাণের এই পদক্ষেপকে একটি যুগান্তকারী কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সচেতন মহল বলছেন, যারা প্রকৃত অর্থেই মেধাবী তাদের সবাইকে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবহার করলে দেশ সিঙ্গাপুর হতে সময় লাগবে না। বাংলাদেশের অনেক মেধাবী দেশপ্রেমিক সন্তান দেশের বাহিরে রয়েছেন। খুনি হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরের দুর্বৃত্তায়নের শাসনামলে অবমূল্যায়ন, সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশের অভাব এবং রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু দেশপ্রেম তাদের হৃদয়ের গহিনে লুকিয়ে আছে। তাদেরকে দেশে এনে দেশের সেবা করার পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেধাকে দেশে ফেরানো অসাধারণ কাজ। আর তাদের জন্য স্থায়ী জায়গা তৈরি করে দেয়া হবে ততটাই কঠিন কাজ। কেননা বাংলাদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যাতে এরকম মেধাবীদের প্রতিপালন করে তার জন্য নীতিমালা গড়তে হবে। আর এ নীতিমালা যাতে কার্যকরভাবে প্রতিপালিত হয় তা নিশ্চিত করতে দেশের প্রধান নির্বাহীর (প্রধান মন্ত্রী, এখন প্রধান উপদেষ্টা) দপ্তরে একটা পর্যবেক্ষণ কোষ থাকতে হবে। এ কোষ থেকে তাদের স্বাচ্ছন্দের দিকটা দেখতে হবে। সাথে কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করবে। এনাদের লালনপালন ও তাদের থেকে প্রাপ্তি সম্পর্কিত বিষয়াদি প্রধান নির্বাহী সরাসরি সংসদকে (এখন উপদেষ্টা পরিষদে) অবহিত করবেন।শুধু আবেগে কাজ হবেনা। থাকতে হবে টেকসই নীতিমালা থাকতে হবে। তা না হলে ভাবাবেগ কর্পূরের মতো উবে যাবে।
যেসব মেধাবীকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে তাদের একজন ব্যক্তি আশিক চৌধুরী। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকেই একের পর এক বাজিমাত করছেন তিনি। ইতোমধ্যে কর্মদক্ষতা, উপস্থাপনা শৈলী, যোগ্যতা, বাচনভঙ্গি দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন। নেট দুনিয়া থেকে চায়ের আড্ডা, সাধারণ মানুষ থেকে উচ্চবিত্ত প্রায় সব শ্রেণির মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন। এককথায় সর্বত্রই তার প্রশংসার জোয়ার তৈরি হয়েছে। সর্বশেষে বিনিয়োগ সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে তার অসাধারণ উপস্থাপনা মুগ্ধ করেছে সবাইকে।
জানা গেছে, আশিক চৌধুরী পেশায় ব্যাংকার। সিঙ্গাপুরে বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার একটি ফোনকলে তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিয়েছেন।তিনি একজন স্কাইডাইভার। যিনি ৪১ হাজার ফুট উঁচু থেকে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে লাফ দেন। যার কারণে তিনি ইতোমধ্যে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুকে নাম লিখিয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত আরো একজন গুণী ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন ড. ইমাদুর রহমান। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে শীর্ষ মার্কিন ব্যবাসায়ী ইলন মাস্কের স্টারলিংক। যার হাত ধরে স্টারলিংক বাংলাদেশে এসেছে ড. ইউনূসের পর তিনিই হচ্ছেন ড. ইমাদুর রহমান। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। এরিকসনের মতো বড় কোম্পানি ছেড়ে দেসে এসেছেন তিনি। ড. ইমাদুর রহমান ড. ইউনুসের নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্নে সহযাত্রী হিসেবেই দেশে ফিরেছেন। তার পেশাগত জীবন এক চমৎকার দৃষ্টান্তে ভরা।
আশিক চৌধুরীর প্রেজেন্টেশন দেওয়া একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে ব্যবহারকারী আমিনুজ্জামান মোহাম্মদ লিখেছেন, আশিক ভাইয়ের প্রেজেন্টেশন সত্যিই অবিস্মরণীয় এবং অনুপ্রেরণামূলক। এটা শুধু একটি প্রেজেন্টেশন ছিল না, বরং বাংলাদেশের সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যত নিয়ে এক বিশাল প্রত্যাশা এবং বিশ্বাসের বার্তা। আমাদের দেশের প্রতিটি মেধাবী সন্তান, যাদের আশিক ভাইয়ের মতো প্রতিভা রয়েছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে, এটা দেশের জন্য যেমন একটি বিশাল মাইলফলক হবে, তেমনি দেশের উন্নতির পেছনে একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে।প্রেজেন্টেশন দেখার পর মনে হচ্ছে, আমাদের দেশের মেধাবী সন্তানরা যেন সঠিক পথে পরিচালিত হতে না পারলে কতটা বড় ক্ষতি হয়।
আহমদ শফী লিখেছেন, অবশ্যই দেশের যে মেধা পাচারের মাধ্যমে দেশ মেধা শূন্য হয়েছে তাদের ফিরিয়ে আনতে পারলে বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় চলে যাবে কোন সন্দেহ নেই। দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির কারণে বাংলাদেশে বিগত তেপান্ন বছর ধরে মেধা শূন্য হয়েছে। এই মেধাবীদের দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনতে পারলে দেশের টাকা ফিরিয়ে আনার চাইতে বেশি বেনিফিট পাবে আশা করি কারণ মানব সম্পদের চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছু নেই।
তাইবুর রহমান পাভেল লিখেছেন, বাংলাদেশে ওনার মতো আরও হাজারো হাই কোয়ালিটি সম্পূর্ণ সত্যবাদী, দেশপ্রেমিক, ন্যায়নীতি, স্মার্ট, স্বপ্ন বিলাসী, মানুষকে বিগত সরকারের আমলে অবমূল্যায়ন করার জন্য তাঁরা নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করেছে! একমাত্র তাঁদের নিজস্ব মেধার মূল্যায়ন না পাওয়ার কারনে!না হলে দেশের চোরদের ভাগে কম পড়ে যাবে!দেশটাকে একটা দূর্নীতির মহাসাগরে রূপান্তরিত করছে ওরা!
আনিসুর রহমান লিখেছেন, ড. ইউনূস আমাদের নতুন আশার আলো। তিনি সময় পেলে দেশের অর্থ যেমন ফিরিয়ে আনবেন তেমনি দেশের মেধাবী সন্তানদেরও ফিরিয়ে আনবেন ইনশাআল্লাহ। সর্বপরি দেশটাকে সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার মতো উন্নত একটা দেশে পরিণত করবেন ইনশাআল্লাহ।